শহরের দু’টি ওয়ার্ডে প্রচারের প্রসঙ্গ বাজারদর |
অনুপ চট্টোপাধ্যায় • কলকাতা |
আলু-সব্জির দামের আগুনের আঁচ পৌঁছে গেল পুরভোটের বাজারেও।
আগামী ২২ নভেম্বর রাজ্যের বেশ কয়েকটি পুরসভার সঙ্গে ভোট হচ্ছে কলকাতা পুরসভার ১ এবং ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে। ওই দুই ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর ইলা দাম ও মিহির সাহার মৃত্যু হওয়ায় সেখানে উপ-নির্বাচন হচ্ছে। পুরভোটের প্রচারে মূলত পুর পরিষেবার ঘাটতির কথাই বেশি করে তোলা হয়। এ বার তার ব্যতিক্রম দেখা গেল উত্তর কলকাতার ওই দুই ওয়ার্ডে। দু’জায়গাতেই পুরভোটের প্রচারে বিরোধীদের হাতিয়ার আলু ও সব্জির অগ্নিমূল্য।
দুই ওয়ার্ডেই কংগ্রেস, বাম ও বিজেপি প্রার্থীদের পক্ষে গলা ফাটিয়ে বলা হচ্ছে গত কয়েক দশকে সব্জির দর এতটা বাড়েনি। তার দায়ও তৃণমূল সরকারের উপরে চাপানোর চেষ্টা চলেছে। যদিও ওই অভিযোগে এতটুকু বিচলিত নন তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। তাঁরাও বলছেন, আলু ও সব্জির দর নিয়ন্ত্রণে এই প্রথম কোনও মুখ্যমন্ত্রী বাজারে বাজারে ঘুরেছেন। ১৩ টাকায় বেঁধে দিয়েছেন আলুর দর। ক্রেতার হাতে সস্তায় সব্জি পৌঁছে দিতে চাষিকে বাজারে এনে সব্জি বিক্রির ব্যবস্থা করেছেন।
সোমবার রাতে ওই দুই ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা গেল জোরকদমে প্রচার চলছে। ২০১০-এর নির্বাচনে দু’টি ওয়ার্ডই তৃণমূলের দখলে ছিল। এ বার লড়াইয়ে তৃণমূল, কংগ্রেস, বাম ও বিজেপি প্রার্থীরা। ক্ষমতায় থাকলেও লড়াইয়ের ময়দানে এতটুকু জমি ছাড়তে নারাজ রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল। দলীয় প্রার্থীদের জেতাতে জোরকদমে প্রচার চালাচ্ছেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়, স্থানীয় সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় ও রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীরা। সেই নিরিখে বামফ্রন্ট বা কংগ্রেসের তেমন কাউকে এখনও প্রচারে দেখেননি বাসিন্দারা। ১ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী সীতা জয়সোয়ারা বলেই ফেললেন, “ফের আমরাই ফিরছি।”
ইলাদেবীর মৃত্যু হয় ২০১১ সালের ডিসেম্বরে। সেই থেকে ওই ওয়ার্ডে নির্বাচন না হওয়া নিয়ে অনেক জল্পনা শোনা যাচ্ছে। চলছে তরজাও। কাশীনাথ দত্ত রোডের এক ব্যবসায়ীর বক্তব্য, “দলীয় কোন্দলের জন্য এত দিন ওখানে সর্বসম্মত প্রার্থী দিতে না পারায় ভোট পিছিয়েছে।” তৃণমূল প্রার্থীর এজেন্ট দ্বিজেন মজুমদার পাল্টা বলছেন, “ডাহা মিথ্যে। সময়ে ভোট হয়নি রাজ্য নির্বাচন কমিশনের জন্যই।” সিপিএমের প্রার্থী অঞ্জলি চৌধুরীর আবার অভিযোগ, “শাসক দল ভোটারদের এখন থেকেই ভয় দেখাচ্ছে। প্রশাসনকে জানিয়েও ফল হচ্ছে না।” ওই অভিযোগে কান দিতে নারাজ উত্তর কলকাতার তৃণমূল নেতা অতীন ঘোষ। বললেন, “নিশ্চিত হার জেনেই ও সব বলছে বামেরা।” গত বার ওই ওয়ার্ডে ৩৮০০ ভোটে জিতেছিল তৃণমূল। জমানত জব্দ হয়েছিল কংগ্রেসের। এ বার ব্যবধান আরও বাড়বে বলে মনে করছেন তৃণমূল নেতৃত্ব।
তবে ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূলকে ‘ফাইট’ দিতে চায় কংগ্রেস। এলাকাটা মূলত বড়বাজারে। গত বার প্রায় ১১০০ ভোটে জিতেছিলেন মিহির সাহা। এ বার তাঁর ছেলে মৃণাল সাহা তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছেন। কংগ্রেসের হয়ে লড়ছেন গৌতম বাজপেয়ী। জেলা কংগ্রেস সভাপতি সন্তোষ পাঠকের ব্যাখ্যা, “মিহিরদার মতো জনপ্রিয় নন তাঁর ছেলে। রয়েছে বিজেপিও। অবাঙালিদের ভোট ভাগাভাগিতে কংগ্রেস সুবিধাজনক জায়গায় রয়েছে।” এখানে বামেদের হয়ে লড়ছেন ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থী দিলীপ পাণ্ডে। সোমবার ভোটের প্রচারে ঘুরছিলেন সিপিএমের রূপা বাগচী। তাঁর অভিযোগ, “পুর পরিষেবার বদলে শহর সাজানোকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। মার খাচ্ছে পুর-পরিষেবা।”
রাত সাড়ে ৯টায় নিমতলা ঘাট স্ট্রিটে এক সভায় হাজির ছিলেন উত্তর কলকাতার তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দোপাধ্যায়। বললেন, “ওঁদের (সিপিএম) জন্যই হায়দারাবাদ, বেঙ্গালুরু, মুম্বইয়ের থেকে কলকাতা আজ পিছিয়ে রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে কলকাতাকে প্রথম সারিতে আনার কর্মযজ্ঞ চলছে। মানুষ তা বুঝেছেন বলেই আমাদের সমর্থন করছেন।” |