পিচ প্রণাম করে সচিন তেন্ডুলকর ড্রেসিংরুমে ফিরে যাওয়ামাত্র কয়েক জন ছুটে এসে ঘিরে ফেলল ওয়াংখেড়ের বাইশ গজ। তার কয়েক সেকেন্ড পরেই টেলিভিশনের পর্দায় ব্রেকিং নিউজ রাজ ঠাকরে ঘোষণা করেছেন, ওয়াংখেড়ের যে পিচে সচিন শেষ বার ব্যাট করলেন, সেখানে সচিনস্থল প্রতিষ্ঠা করা হবে। মাতোশ্রী টাওয়ার্সের কাছে কি তবে হার মানতে চলেছে শিবসেনা ভবন? এই প্রশ্নটা ভাল ভাবে ওঠার আগেই উদ্ধব ঠাকরের মুখপাত্র জানালেন, প্রতি বছর ১৬ নভেম্বরকে তাঁরা সচিন তেন্ডুলকর দিবস হিসেবে ঘোষণা করার দাবি জানাচ্ছেন। তাঁদের প্রয়াত প্রতিষ্ঠাতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে প্রতি বছর ১৬ নভেম্বর বিদেশি গাড়ির ওপর শুল্ক মকুব করে দেওয়া হবে।
প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে তখনও সচিনকে ফোনে ধরার চেষ্টা চলছে। তারই মধ্যে যৌথ সাংবাদিক সম্মেলন করে কংগ্রেসের দিগ্বিজয় সিংহ আর বিজেপি-র রবিশঙ্কর প্রসাদ জানালেন, অমর্ত্য সেন এবং লতা মঙ্গেশকর, দু’জনেরই ভারতরত্ন কেড়ে নিয়ে দুটোই সচিনকে দেওয়া হোক, তাঁরা সরকারের কাছে যৌথ ভাবে এই দাবি জানাচ্ছেন। দিল্লিতে নির্বাচনী প্রচারে বেরিয়েছিলেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল। যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনের খবর পেয়েই তিনি টেলিফোনে মেসেজ রেকর্ড করে ফেললেন ‘দিল্লির নির্বাচনে জিতে আমি মুখ্যমন্ত্রী হলে পুরস্কারের নাম বদলে সচিনরত্ন করে দেব, আর প্রথম পুরস্কার পাবেন ভারতমাতা। সচিনের মতো তিনিও তো এত বছর ধরে একাই সব সইছেন।’ কেন সচিন তেন্ডুলকর তাঁর সহখেলোয়াড়দের তুলনায় অনেক বেশি রান করেছেন, এবং কেন তাঁকে লোকপাল বিলের আওতায় আনা হবে না, এই প্রশ্নের উত্তর না পেয়ে অণ্ণা হজারে অনশনে বসলেন। কপিল সিব্বল জানালেন, সচিন বিষয়ে ফেসবুক বা টুইটারে কোনও তির্যক মন্তব্য করলেই তথ্যপ্রযুক্তি আইনে জেলে পুরে দেওয়া হবে। পি চিদম্বরম তিরুভাল্লুভারের কবিতার উদ্ধৃতি দিয়ে বললেন, এনডিএ-র আমলে সচিনের গড় রান ইউপিএ-র আমলের তুলনায় অনেক খারাপ। পরিসংখ্যান নিয়ে সন্ত্রাসবাদ চালানোর বিজেপি-র অপচেষ্টা ধরা পড়ে গেছে।
তত ক্ষণে আমদাবাদে পরবর্তী জনসভায় পৌঁছে গিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। আজ তাঁর ভাষণে স্বভাবতই শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় নেই, আলেকজান্ডারও নেই। তিনি বললেন, ‘গুজরাতের গর্বিত সন্তান সচিনভাই তেন্ডুলকর দিয়াগো মারাদোনার লেগস্পিন সামলেছেন, গ্যারি কাসপরভের বাউন্সারও তাঁকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। এক বার মাইক টাইসনের বলে আম্পায়ার বিল গেটস তাঁকে বোল্ড দেওয়ায় তিনি আম্পায়ারকে বলেছিলেন, ওহে লোকে তোমার আম্পায়ারিং নয়, আমার ব্যাটিং দেখতে এসেছে। আমিও দিল্লির শাহজাদাকে বলছি, লোকে তোমার প্রধানমন্ত্রিত্ব নয়, আমার শাসন দেখতে এসেছে।’ পটনা থেকে নীতীশ কুমার বললেন, মোদী যে শুধু খুনি, তা-ই নয়, মিথ্যাবাদীও। নয়তো গ্রেসের মতো এক জন ইংরেজের কথা তিনি সচিনের মতো ভারতীয়র মুখে বসাতেন না।
রাহুল গাঁধীর দিকে সাংবাদিকদের এগোতে দেখেই তাঁকে প্রায় জোর করে ঘরে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। দরজা বন্ধ হওয়ার আগে তাঁর মুখ থেকে যেটুকু শোনা গিয়েছে, তা এই রকম ‘ক্রিকেট ইজ আ স্টেট অব মাইন্ড। ভারতরত্ন ননসেন্স, এক্ষুনি ছিঁড়ে ফেলে দেওয়া দরকার। সচিনের যদি জুপিটারের এসকেপ ভেলোসিটি থাকত, তবে...’ সনিয়া গাঁধী বললেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আমাদের পূর্ণ আস্থা আছে। তিনিই এই সরকারের প্রধান।’ প্রধানমন্ত্রী উত্তরে মৌনী ছিলেন।
উত্তেজনা থেকে দূরে থাকেনি পশ্চিমবঙ্গও। মুখ্যমন্ত্রী সোমবার ১৮ নভেম্বর ছুটি ঘোষণা করলেন। একই সঙ্গে জানালেন, ডিসেম্বরে কলকাতায় ক্রিকেট উৎসব হবে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন অমিতাভ বচ্চন, শাহরুখ খান, প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় এবং দেব। কোন কোন দল খেলবে, তা স্থির করবে সিলেকশন কমিটি তাতে রয়েছেন ফুটবলার প্রশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়, শিল্পী শুভাপ্রসন্ন এবং গায়ক নচিকেতা। উৎসবে যেতে অস্বীকার করলেন সব্যসাচী চক্রবর্তী। ডিসেম্বর অবধি কলকাতার সব ট্রাফিক সিগনালে সচিনের বিদায়ী বক্তৃতা বাজানো হবে।
শিক্ষামন্ত্রী জানালেন, রাজ্যের স্কুল-কলেজ স্তরের সব অঙ্ক বই থেকে ১০ সংখ্যাটি উঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। উচ্চশিক্ষা বিষয়ক কমিটি থেকে পদত্যাগ করলেন এক শিক্ষাবিদ। তবে তিনি জানিয়েছেন, তাঁর পদত্যাগের সঙ্গে এই সিদ্ধান্তের কোনও সম্পর্ক নেই, তিনি নিজস্ব ব্যস্ততার কারণেই এই দায়িত্ব বহন করতে অপারগ। আরাবুল ইসলাম বললেন, একটা ষোলো বছরের ছেলে নাকে ওয়াকার ইউনুসের বাউন্সার খেয়েও খেলে যেতে পারে, আর আমি জগ ছুড়ে মারলেই অশান্তি? সুব্রত মুখোপাধ্যায় বললেন, সচিন তাজা ছেলে।
বহু ক্ষণ পর্যন্ত আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে কোনও সাংবাদিক না পৌঁছনোয় বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য নিজেই সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে বললেন, আমাদের মানুষের কাছে যেতে হবে, গিয়ে বোঝাতে হবে। কী বোঝাবেন, সেই প্রশ্নের উত্তর দেননি তিনি। রেজ্জাক মোল্লা বললেন, কাম্বলি ধরতে পারে না, সচিন ধরতে গেছে।
দেশ জুড়ে যখন সচিন উন্মাদনা চলছে, দালাল স্ট্রিটে ধস নামল। এক দিনে সেনসেক্সের রেকর্ড পতন হল। ট্রেড অ্যানালিস্টরা জানালেন, সচিনের বিদায়ী ভাষণে দেশের আর সবাই যেমন আবেগতাড়িত হয়ে পড়েছেন, ‘ইনভেস্টর্স সেন্টিমেন্ট ইজ অলসো হার্ট’। রামগোপাল বর্মা টুইট করলেন, তিনি সচিনের বায়োপিক বানাতে চান, এবং নামভূমিকায় অভিনয় করবেন আমির খান। আমির জানালেন, ডিসেম্বরেই টেলিভিশনে আসছে নতুন সিরিজ ‘জয়তে সচিন’ সচিন তেন্ডুলকরের খেলা দেখতে গিয়ে কত মানুষকে কত যন্ত্রণা সইতে হয়েছে, তা তুলে ধরবেন তিনি। প্ল্যানচেটে এলেন ঋ
তুপর্ণ ঘোষ। বললেন, সচিনের গলাটা অমিতাভ বচ্চনকে দিয়ে ডাব করিয়ে নিতে হবে। রজনীকান্ত জানালেন, তাঁর পরের ছবিতে তিনি একশো জন সচিনের ভূমিকায় অভিনয় করছেন। খেলা মঙ্গলগ্রহের বিরুদ্ধে। মহাকাশ থেকে মঙ্গলযান জানাল, পিচে একটা ঘাসও নেই, ফলে টেস্টের প্রথম দিন থেকেই বল ঘোরা নিশ্চিত। শোভা দে কলাম লিখলেন, দি আনবিয়ারেবল শর্টনেস অব বিইং সচিন তেন্ডুলকর।
পুনশ্চ: এই লেখা প্রেসে যাওয়ার সময় খবর এল, কংগ্রেস ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে তাদের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে। সচিন তেন্ডুলকর।
|
বিধিবদ্ধ বিজ্ঞপ্তি: এই লেখার সব নাম, চরিত্র, ঘটনা এবং স্থান কাল্পনিক। বাস্তবের সঙ্গে কোনও মিল অনভিপ্রেত এবং নিছকই কাকতালীয়। |