সম্পাদকীয় ২...
‘ভারত ছাড়ো’
ত্তরপ্রদেশের শাসক দল সমাজবাদী পার্টির নেতা মুলায়ম সিংহ যাদব ইংরাজি ভাষার বিরুদ্ধে তাঁহার পুরানো জেহাদ পুনরুচ্চারণ করিয়াছেন। এ বার তাঁহার লক্ষ্য: সংসদ। তাঁহার আর্জি, সাংসদরা যেন ইংরাজি ব্যবহার না করেন। রাজনীতিক মুলায়ম এই প্রশ্নে এখনও কট্টর লোহিয়াপন্থী। তাঁহার পুত্র, মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশপ্রসাদ অবশ্য ইংরাজিতে স্বচ্ছন্দ, কয় দিন আগেই সচিন তেন্ডুলকরকে ইংরাজিতেই অভিনন্দন জানাইয়াছেন। আর সমাজবাদী পার্টি শাসিত উত্তরপ্রদেশের অলিতে-গলিতে তো নিত্যনূতন ইংরাজি-মাধ্যম স্কুলের ছড়াছড়ি। তবু হিন্দি বলয়ের আত্মপরিচয়ের রাজনীতির তাগিদ মুলায়মকে হিন্দি-বিরোধিতায় মগ্ন করে। মাতৃভাষার পক্ষে মুলায়মের যুক্তি বড় অদ্ভুত। ‘বিদেশি’ বলিয়া যদি ইংরাজি ভাষাকে বর্জন করিতে হয়, তবে তো বিদ্যুৎ, মোটরগাড়ি, ইন্টারনেট সব বিদেশি সামগ্রীই বর্জনীয়। আর ‘মাতৃভাষা ব্যবহার করিয়া অন্য দেশ যত উন্নতিই করিয়া থাকুক’, জনগণনা অনুযায়ী ভারতে মাতৃভাষার সংখ্যা কিন্তু ২৩৪ এবং মুলায়মের নিজের মাতৃভাষা হিন্দিরই অন্তত ৫০টি প্রকারভেদ রহিয়াছে, যাহার প্রতিটিই নিজেকে ‘হিন্দি’ বলিয়া দাবি করে। সর্বোপরি, ইংরাজিও তো এ-দেশের অনেকেরই মাতৃভাষা।
লক্ষণীয়, এ সব সত্ত্বেও কোনও জাতীয় দলই (কংগ্রেস কিংবা বিজেপি) মুলায়মের এই উগ্র ইংরাজি-বিরোধিতার প্রতিবাদ করে নাই, নীরব থাকিয়াছে। তাহা কি এই জন্য যে, আসন্ন নির্বাচনের প্রাক্কালে হিন্দি বলয়ের জনসাধারণের মন জয় করার রাজনৈতিক তাগিদ তাঁহাদের মুখে কুলুপ দিয়াছে? ‘হিন্দি-হিন্দু-হিন্দুস্তান’ জাতীয় স্লোগান মারফত মেকি জাতীয়তাবাদের জিগির তোলার যে প্রয়াস মাঝেমধ্যেই লক্ষ করা যায়, সব দলই তাহাতে ফিরিবার বিকল্প রাস্তা খোলা রাখিতে চায়? এ ক্ষেত্রে উজ্জ্বল ব্যতিক্রম অবশ্য পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল। মুলায়ম সিংহ যাদবের বক্তব্য প্রচারিত হইতে না হইতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানাইয়া দিয়াছেন, তাঁহারা মাতৃভাষাকে ভালবাসেন, কিন্তু তাহার অর্থ এই নয় যে অন্য ভাষাকে ঘৃণা করিতে হইবে। ইংরাজি-বিরোধী এই জেহাদের বিপরীত মেরুতে দাঁড়াইয়া মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যে আরও অনেক ইংরাজি মাধ্যম স্কুল চালু করার উপর জোর দিয়াছেন।
প্রসঙ্গত তাঁহার দলেরই এক নেতা বামফ্রন্ট সরকারের আমলে ইংরাজির বিরুদ্ধে সরকারি জেহাদ স্মরণ করাইয়া বলিয়াছেন, কেমন করিয়া ইহার ফলে রাজ্য শিক্ষায় অনগ্রসর হইয়া পড়ে। দ্বিভাষিকতাকে বর্জন করিবার মূল্য পশ্চিমবঙ্গ ভাল মতোই চুকাইয়াছে, এখনও চুকাইতেছে, আরও কত কাল চুকাইবে কেহ জানে না। স্কুলে স্কুলে আজ যে আর ইংরাজি পড়ানোর যোগ্য শিক্ষক পাওয়া যায় না, তাহার কারণ বামফ্রন্ট অনুশীলিত ওই ভ্রান্ত শিক্ষানীতি। ইহাতে মাতৃভাষারও উন্নতি হয় নাই। দ্বিভাষিকতা একদা এই বঙ্গদেশে সাংস্কৃতিক নবজাগরণের উৎসার ঘটাইয়াছিল। পরে ইংরাজি বর্জনের খেসারত দিতে গিয়া রাজ্য শিক্ষা-সংস্কৃতির ক্ষেত্রে সহস্রশৈবালদামে বদ্ধ এক জলায় পরিণত হয়। রাজ্যের রাজনৈতিক পালাবদল সেই জলাশয়ে অন্তত কিছুটা তরঙ্গ আনিয়াছে। ইংরাজি ভাষার চর্চার সহিত যে আধুনিক জ্ঞানবিজ্ঞান, প্রযুক্তি, তথ্যবিপ্লবের নিবিড় সংস্রব বর্তমান, ইহা স্বীকৃত হইতেছে। মুলায়মের ইংরাজি-বিরোধিতা নিছকই এক অচল ধ্যানধারণার উপজাত ফসল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বতঃপ্রণোদিত হইয়া তাহাকে প্রত্যাখ্যান করিয়া সঠিক পদক্ষেপই করিয়াছেন।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.