বেআইনি দখল মুক্ত করে তৈরি করা হয়েছিল দোকানঘর। ব্যবসায়ীদের ওই দোকানঘর ভাড়া দিয়ে জেলা পরিষদের লক্ষ্য ছিল সরকারি কোষাগারের আয় বাড়ানো। কিন্তু তৈরি হওয়ার পরে ৫ বছর কেটে গেলেও ঘরগুলির একটা বড় অংশই এখনও বিলি করা হয়নি। যার ফল দাঁড়িয়েছে, এতদিন এমনিই পড়ে থেকে জায়গাটি কার্যত জঞ্জাল ফেলার জায়গায় পরিণত হয়েছে।
দেশের তীর্থস্থানের মানচিত্রে ক্রমে উপরের দিকে থাকার দৌলতে জনশূন্য তারাপীঠ দেখতে দেখতেই এখন কংক্রিটের জঙ্গলে বদলে গিয়েছে। পর্যটনকে কেন্দ্র করে বীরভূমের বৃহত্তম বাণিজ্য কেন্দ্রেও পরিণত হয়েছে। কিন্তু তারাপীঠের ব্যবসায়ীদের একাংশের বিরুদ্ধে জায়গা বেদখল করে নির্মাণ গড়ে তোলার অভিযোগ ছিল প্রথম থেকেই। ধীরে ধীরে এক সময়ে বেদখল হয়ে গিয়েছিল সেচ দফতরের জমি। জবরদখল হয়ে যায় তারাপীঠের মধ্য দিয়ে যাওয়া পূর্ত দফতরের রামপুরহাট-সাঁইথিয়া সড়কের দু’ধারও। এমনকী, অবৈধ ভাবে দখল হয়ে গিয়েছিল জেলা পরিষদের জমি। ২০০১ সালে জেলা পরিষদের উদ্যোগে জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় সেখান থেকে অবৈধ দোকান উচ্ছেদ করে ১৭৯টি দোকানঘর নির্মাণের কাজ শুরু হয়। নির্মাণ শেষ হওয়ার পরে ২০০৬-০৭ সালে ঘরগুলি ব্যবসায়ীদের বণ্টনও করে দেওয়া হয়। কিন্তু ঘটনা হল তারই মধ্যে থেকে ৫৫টি ঘর আজও বিলি করা হয়নি। এতদিন পড়ে থেকে থেকে ওই ঘরগুলি কার্যত ব্যবহারের অযোগ্যও হয়ে পড়েছে। |
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই ৫৫টি ঘরের ক্ষেত্রে দর নিয়ে আবেদনকারীদের সঙ্গে জেলাপরিষদের বনিবনা হয়নি। যার জন্য দীর্ঘ দিন ধরে অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকা ঘরগুলির সামনে এখন পড়ে আছে উনুনের ছাইয়ের গাদা। ব্যবহার না হওয়া ঘরগুলির মধ্যে কোনও ঘরের লোহার শাটারে মরচে ধরে শাটার ভেঙে গিয়েছে। বর্তমানে ওই ঘরগুলি জঞ্জাল ফেলার জায়গা হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। তারাপীঠের বাসিন্দা সুকুমার মুখোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “যত দূর জানি ওই জায়গায় বাগান, শৌচাগার হওয়ার কথা ছিল। তা না করে জেলাপরিষদ অপরিকল্পিত ভাবে ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে ওখানে ঘর তৈরি করে। আবার যখন ঘর বিলি করা হল, তখন প্রকৃত দোকানদের বঞ্চিত করে বিশেষ রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ার থাকা লোকেদেরই তা দিয়ে দেওয়া হল।” আরও অভিযোগ, বিলি হওয়ার সময় ১২৪টি ঘরের অধিকাংশেরই ছাদ ভাঙা, দেওয়ালে ফাটল, কোনওটি শাটারহীন, কোনওটির আবার শাটার ভাঙা ছিল।
যদিও ঘরগুলি বিলির ক্ষেত্রে কোনও রকম বেনিয়ম হয়নি বলেই দাবি করেছেন জেলা পরিষদের সদ্য প্রাক্তন সভাধিপতি অন্নপূর্ণা মুখোপাধ্যায়। তিনি জানান, খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়ে ঘর নিতে ইচ্ছুকদের আবেদন করতে বলা হয়েছিল। এ ক্ষেত্রে যাবতীয় সরকারি নিয়ম মেনেই ঘরগুলি বিলি করা হয়েছিল বলে তাঁর দাবি। তিনি বলেন, “জেলা পরিষদের তৈরি ঘর বিনে পয়সায় ব্যবহার করার জন্য নয়। সরকারি কোষাগারে আয় বাড়াতেই ওই ঘরগুলি নির্মাণ করা হয়েছিল।” জানা গিয়েছে, বিলি বাবদ জেলা পরিষদের তখন প্রায় ৯৮ লক্ষ টাকা আয় হয়েছিল। পরে দোকানদারদের ভাড়া বাবদ জেলা পরিষদের একটি মোটা অঙ্কের বাৎসরিক আয়ও হয়। এ দিকে, অন্য ঘরগুলি বিলি না হওয়া ঘরের প্রসঙ্গে অন্নপূর্ণার দাবি, “প্রথম যখন বণ্টন হয়েছিল, তখন ওই ৫৫টি ঘরের জন্য কেউ আগ্রহ দেখাননি। পরে ঘরগুলি বিলি করার জন্য ফের খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। বহু আবেদনও এসেছিল। কিন্তু পঞ্চায়েত নির্বাচন এসে যাওয়ায় বিষয়টি আর এগোয়নি। বর্তমানে যাঁরা জেলাপরিষদে ক্ষমতায় এসেছেন, তাঁদেরই এ বার উদ্যোগ নিতে হবে।”
এ দিকে, ঘরগুলি বিলির ক্ষেত্রে এলাকার বেকার যুবকদের প্রাধান্য দেওয়ার দাবি জানিয়েছে জেলাপরিষদ নির্মিত বাজারের দোকানদারদের সংগঠন ‘তারাপীঠ ব্যবসায়ী উন্নয়ন সমিতি’। সংগঠনের সম্পাদক তুষার ধরের অভিযোগ, “তারাপীঠকে কেন্দ্র করে জেলাপরিষদ সৌন্দর্যায়নের যে উদ্যোগ নিয়েছিল, তা উপযুক্ত তদারকি এবং সঠিক পরিকল্পনার অভাবে বাস্তব রূপ পায়নি।” এ ব্যাপারে নব গঠিত জেলা পরিষদের কাছে তিনি বিশেষ উদ্যোগ প্রত্যাশা করছেন। ইতিমধ্যেই জেলায় জেলায় কোথায় কোথায় জেলা পরিষদের জায়গা কী অবস্থায় পড়ে আছে, তা আধিকারিকদের চিহ্নিত করার নির্দেশ দিয়েছেন জেলাপরিষদের বর্তমান সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরী। তিনি জানিয়েছেন, আধিকারিকদের রিপোর্ট পেলেই এ নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ করবেন।
অন্য দিকে, অতিরিক্ত জেলাশাষক (জেলা পরিষদ) বিধান রায় বলেন, “জেলা পরিষদের অর্থ এবং পরিকল্পনা রূপায়ণ সংক্রান্ত মিটিংয়ে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব। খুব শীঘ্রই বাকি ঘরগুলিও বিলি করা হবে।” ঘরগুলিকে পুরনো চেহারায় ফিরিয়ে আনার দিকটিও খতিয়ে দেখার আশ্বাস তিনি দিয়েছেন। |