শাদি ডট বেশি
রও একটা বিয়ের মরসুম। বিয়ের গোটা ব্যাপারটাই আজকাল যেন লক্ষকোটি টাকার ব্যবসা।
এক সূত্রের থেকে জানতে পারলাম, গত বছর বিয়ে নামক এই ব্যবসার অর্থমূল্য দাঁড়িয়েছিল সওয়া কোটি টাকা! মধ্যবিত্ত পরিবারের বিয়েতে মোটামুটি ১৫-২০ লক্ষ টাকা খরচ হলেও উচ্চবিত্ত বিয়ের ক্ষেত্রে সেই খরচের বহর দাঁড়ায় বেশ কয়েক কোটি। কারণটা পরিষ্কার। উচ্চবিত্ত বিয়েতে দুর্দান্ত সব ফার্মহাউস, সাততারা সব হোটেল, উপরন্তু ডেস্টিনেশন ওয়েডিং মিলিয়ে বিশাল কেতা! গয়নার ব্যাপারটা না হয় হিসেবের বাইরেই থাক। উচ্চবিত্ত বিয়েতে কনেরা যে চোখ ধাঁধানো হিরের সব গয়না পরেন, তা নিয়ে আর কী-ই বা বলব! গত বছর একটা বিদেশি ম্যাগাজিনে লেখার সুবাদে একটা বড় স্টোরে গিয়ে বহুমূল্যের এক গলার হার দেখে সত্যিই চমক লেগেছিল।

উৎসবের নাম বিয়ে
আজকাল বিয়ে উৎসবটা এক-দু’দিনে সেরে ফেলে আশ মিটছে না অনেকের। তাই বড়জোর দু’তিন দিনের সনাতনী বিয়ে-বৌভাতের ছক ভেঙে এখন বিয়ে টানা পাঁচ দিনের জাঁকজমকপূর্ণ উৎসব। স্বাভাবিক ভাবেই প্রত্যেকটা আলাদা আলাদা অনুষ্ঠানের জন্য আলাদা আলাদা পোশাক তো পরতেই হয়!
বর-বৌয়ের পোশাকে জৌলুস থাকবে না, তা কি হয়! কাজেই যাঁরা বিয়ের পিঁড়িতে বসছেন, তাঁরা তাঁদের বিশেষ দিনটাকে আরও ‘বিশেষ’ করে তোলার জন্য যেতেই পারেন ডিজাইনার সব্যসাচী মুখোপাধ্যায়, মণীশ মলহোত্র, জে জে বাল্য, পল্লবী জয়কিষেণ বা রোহিত বল-এর কাছে। আর বাকিরা হয়তো এতটা খরুচে হতে পারবেন না। তবে তাঁদেরও তো চাই ডিজাইনার পোশাক। মেহেন্দি, সঙ্গীত, বিয়ে পর্ব মেটার পর আপনি যদি ককটেল রিসেপশনের পোশাক বাছতে চান, তা হলে বাজেটের কথা মাথায় রেখেও আপনাকে কিনে ফেলতে হবে বেশ কতগুলো কেতাদুরস্ত পোশাক। আর কেনার আগে অবশ্যই ভাববেন ভবিষ্যতে ওই পোশাকগুলো যেন আবার ব্যবহার করতে পারেন।

স্টাইলে পাশ্চাত্য মননে প্রাচ্য
কলকাতার দুই নামী ডিজাইনার দেব-নীল তো বিয়েতে পরিবারের অন্য সদস্যদের জন্য বাহারি সব পোশাক বানাতে সিদ্ধহস্ত! ওঁদের তৈরি পোশাকে প্রায়ই বিয়ের মণ্ডপে দেখা যায় বর-কনের প্রিয় বন্ধু-বান্ধবীদের, তাঁদের বাবা-মায়েদের বা পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের। ওঁরা প্রত্যেকটা আলাদা অনুষ্ঠানের কথা মাথায় রেখে মেহেন্দি লেহঙ্গা, সঙ্গীত লেহঙ্গা সমেত আরও অনেক হাল্কা পোশাক বানান যা আপনি পরেও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ব্যবহার করতে পারবেন। তাই ওঁদের বানানো পোশাক কিনলে খরচটা গায়ে লাগবে না আপনার।
এর পর চাই একটা জমাটি প্ল্যানিং। বহু বিয়ের অনুষ্ঠানে বর-কনের বন্ধুবান্ধবীরা রঙে, স্টাইলে, গ্ল্যামারে বর-কনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সাজসজ্জা করে উৎসবে দুর্দান্ত সামঞ্জস্য নিয়ে আসেন।
দিল্লির ডিজাইনার রাকেশ অগ্রবাল সম্প্রতি কলকাতায় এসেছিলেন। বললেন, “প্রচুর মানুষ আজকাল রিসর্ট ওয়েডিং বা ডেস্টিনেশন ওয়েডিংয়ে যান। আর তাঁরা জমকালো কাজের ভারী ডিজাইনওয়্যারের বদলে হাল্কা পোশাক পছন্দ করেন। এঁদের চাহিদা মাথায় রেখেই পাশ্চাত্য কায়দায় এমন পোশাক বানাই, যেগুলো দেখতে যথেষ্ট অভিজাত, হাল্কা, অথচ বেশ বিয়ে বিয়ে একটা লুকও আছে।” রাকেশের মতে আজকাল মানুষ অনেক বেশি ফিটনেস সচেতন। বিশেষ করে মহিলারা চান তাঁদের টোনড শরীরের জন্য মানানসই পোশাক, যেগুলো পরে তাঁদের সেক্সি লাগবে। তাঁর বানানো ভারতীয় এমব্রয়ডারির কাজে ব্লিং দিয়ে সাজানো পাশ্চাত্যের পোশাক যেগুলো আসলে বিয়ের পার্টির জন্য বানানো, সেগুলোর চাহিদাও ক্রেতাদের মধ্যে প্রচুর। তাঁর মতে কেউই আর আজকাল আগের জমানার মতো ভারী, জমকালো সাজপোশাক পছন্দ করেন না।
এ বছর দিল্লির ব্রাইডাল এশিয়া প্রদর্শনী ডিজাইনার মণীশ অরোরা, সব্যসাচী মুখোপাধ্যায়, অঞ্জু মোদী, সিদ্ধার্থ টাইটলার, গৌরব গুপ্ত, বিক্রম ফাদনিস, হানি ওয়াকার এবং আরও অনেকের ব্রাইডাল কালেকশন শো-কেস করা হয়েছে।

কেনা-কাটা
শুধু পোশাক নয়, গয়না, নানা ধরনের অ্যাকসেসরিজ (হ্যান্ডব্যাগ, জুতো) ঠিকঠাক পছন্দ করা এবং কেনাটাও এখন ট্রেন্ড। পুরো ব্যাপারটাকেই সাজানো হয় পুরাতনী আর সমসাময়িক রুচি-পছন্দের মিশেলে। গয়না কেনার ক্ষেত্রে যেমন অনেকেই বেছে নিচ্ছেন সারা দেশের বিভিন্ন ডিজাইন বা আঙ্গিকের গয়না। তার মধ্যে কী নেই! জয়পুর, হায়দরাবাদ থেকে চেন্নাইয়ের টেম্পল জুয়েলারি, কুন্দন হাজির সব কিছুই। তবে হ্যাঁ, কেনার ক্ষমতাটিও থাকতে হবে।
ব্রাইডাল এশিয়ার সিইও দিব্যা গুরওয়াড়ার সঙ্গে আমার প্রথম দেখা কলকাতায়। স্থানীয় মানুষজনের চাহিদায় তাঁর এখানে শো করতে আসা। ১৫ বছর পেরিয়ে সেই ব্রাইডাল এশিয়া এখন এশিয়া মহাদেশের বৃহত্তম ব্রাইডাল ফাইনারির প্রদর্শনী বলা চলে। বিয়ের জন্য যা যা কেনাকাটা আপনি করতে চান, সবই করে ফেলতে পারবেন এখানে, এক ছাদের নীচে। সে ঘর সাজানোর উপকরণ হোক কী ডিনার করার ডিজাইনার বাসনকোসন। তত্ত্ব সাজানো, রুপোর বাসন, বিশেষ সব চকোলেটের সীমিত সংস্করণ, বেড লিনেন, জামেবর, লঁজারি, রাতের পোশাক-আশাক এই সব মিলিয়েই তো জমিয়ে বিয়ের কেনাকাটা!

কাট থেকে কনসেপ্ট
চলুন বিয়ের পোশাক-আশাকেই ফিরে যাই। আমার তো মনে হয় দারুণ সব ডিজাইনার বিয়ের পোশাকে ছেলেদের আজকাল দুর্দান্ত মেক ওভার হয়েছে। বিয়েতে তাঁরা অনায়াসে পরে ফেলছেন শর্ট জ্যাকেটস, যোধপুরি, ধোতি, আচকান। পুরুষদের জন্য নজরকাড়া সব ডিজাইনার পোশাক বহু দিন ধরেই বানিয়ে চলেছেন শর্বরী দত্ত। ফিল্মতারকা থেকে শুরু করে বিখ্যাত সব ব্যক্তিত্ব, লেখক, খেলোয়াড় কে নেই সেই তালিকায়! সম্প্রতি কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে হাজির সব তারকাদেরও আমাদের মুখ্যমন্ত্রী উপহার দিলেন শর্বরীরই ডিজাইন করা পোশাক। শর্বরীর বানানো পোশাক কাটিং আর স্টাইলে একই সঙ্গে সনাতনী এবং আধুনিক। শর্বরী আমাকে বললেন: ‘‘আমার কাজ যেমন নতুন, তেমনই পুরনো।’’ তিনি কিন্তু কখনওই একই ডিজাইনের পুনরাবৃত্তি করেন না। ক্লাসিকাল কাট বজায় রেখে অভিনব, সৃষ্টিশীল পোশাক বানানোই তাঁর বিশেষত্ব। অভিষেক বচ্চনের বিয়ের সময় শর্বরী অভিষেকের জন্য ১৭টা সিল্কের কুর্তা বানিয়েছিলেন যার একেকটার দাম পড়েছিল ১২ হাজার টাকা করে। এই মুহূর্তে তাঁর বানানো শেরওয়ানি, আচকান বা আংরাখার দাম ২৫ হাজার টাকারও বেশি।
শর্বরীর মতে এখনকার প্রজন্মও বিয়ের সময় ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরতেই পছন্দ করে। সে বর হোক বা ‘নিতবর’। এমনকী তাঁদের ভারতীয় পোশাক নিয়ে তাঁরা নাকি যথেষ্টই গর্বিত।
অভিষেক দত্তর মতো তরুণ ডিজাইনাররাও আচকান, শেরওয়ানি, নেহরু জ্যাকেট থেকে শুরু করে কনসেপ্ট শাড়ি বা রেডি টু ওয়্যার প্লিটেড শাড়ির মতো অসংখ্য বিয়ের পোশাক তৈরি করছেন তাঁর পছন্দের ফেব্রিকে, স্টাইলে। এই মরসুমে জমিয়ে ব্যবসা করছে নতুন সব বুটিকগুলোও। বিশেষ করে এনআরআই-রা এই সব জায়গা থেকে প্রচুর কেনাকাটা করেন। তাঁদের হাতে সময় যথেষ্ট কম থাকাতে হয়তো। ডিজাইনার লেবেল নিয়েও তাঁদের বাতিকটা বেশ কম।
তাই বলাই যায় আমাদের দেশের বিভিন্ন জাতির লোকেরাই পোশাকে, কেতায়, গ্ল্যামারে ‘বিগ ফ্যাট ইন্ডিয়ান ওয়েডিং’কে আরও রংদার, জাঁকজমকে ভরিয়ে তুলছেন। বলিউডের নানা সিনেমায় তার নিদর্শন তো আমরা হামেশাই দেখি। বাস্তবের এই সব বিয়ের অনুষ্ঠান কিন্তু তাদের বলিউড বা টলিউড কাউন্টারপার্টকেও লজ্জা দিতে পারে।
সাজ@২০১৩
ডিজাইনার পোশাক কেনার সময় ভবিষ্যতেও যাতে সেগুলো ব্যবহার করতে পারেন, সেটা মাথায় রাখবেন।
পরুন কনসেপ্ট শাড়ি বা রেডি টু ওয়্যার প্লিটেড শাড়ি। যে কোনও ভাল ডিজাইনারের কাছেই পেয়ে যাবেন।
শুধু ডিজাইনারেরাই নন, কেনাকাটার জন্য বেছে নিতে পারেন ভাল কোনও বুটিকও।
বিয়ের পোশাক হিসেবে ছেলেরা বেছে নিতে পারেন যোধপুরি ধোতি, শর্ট জ্যাকেটস, আচকান।
বিয়ের সাজপোশাক হোক আধুনিক এবং সনাতনীর মিশেল।
তত্ত্ব, লঁজারি, বেড লিনেন, রাতপোশাক যেন ঠিকঠাক হয়, খেয়াল রাখুন সে দিকটাও।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.