প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা প্রয়াত সিপিএম নেতা জ্যোতি বসুর জন্ম-শতবর্ষ উদ্যাপনের অনুষ্ঠানকে সামনে রেখে ফের দার্জিলিং পাহাড়ে সংগঠন গোছাতে চাইছে সিপিএম। দলীয় সূত্রের খবর, ওই উদ্দেশ্যেই জেলা স্তরের ওই অনুষ্ঠান দার্জিলিং পাহাড়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিপিএম। অনুষ্ঠানটি আগামী ৩ ডিসেম্বর দার্জিলিং শহরের ‘গোর্খা দুখ নিবারণী সংস্থা’র হলঘরে হবে। সেখানে তৃণমূল এবং বিজেপি-কে বাদ দিয়ে জেলার অন্য সব রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানানোর প্রক্রিয়াও শুরু করেছে সিপিএম। ওই সভায় পাহাড়কে আরও বেশি স্বায়ত্তশাসন দেওয়া এবং দার্জিলিংকে উত্তর পূর্ব কাউন্সিলের আওতায় নিয়ে করমুক্ত এলাকা বলে ঘোষণার দাবি তোলার কথাও সিপিএম জানিয়েছে। অতীতে সংসদে যিনি ওই দাবি তুলেছিলেন, সেই পলিটব্যুরো সদস্য সীতারাম ইয়েচুরিই পাহাড়ের অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা।
সিপিএমের তরফে কংগ্রেস, গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা, সিপিআরএম, জিএনএলএফ, গোর্খা লিগের প্রতিনিধিদের জ্যোতিবাবু বিষয়ক আলোচনায় সভায় অংশগ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হবে। সিপিএমের দার্জিলিং জেলার কার্যকরী সম্পাদক জীবেশ সরকার বলেন, “তৃণমূল, বিজেপি-র সঙ্গে আমাদের নীতি এবং আদর্শের মিল নেই। সে কারণেই ওই দুই দলের কোনও প্রতিনিধিকে সভায় ডাকা হবে না। তা ছাড়া পাহাড় ও সমতলের অন্যান্য সব দলকে প্রতিনিধি পাঠানোর জন্য অনুরোধ করা হবে। পাঠানো হবে আমন্ত্রণ পত্র।”
মোর্চা পাহাড়ে কর্তৃত্ব কায়েমের পরে দীর্ঘদিন দার্জিলিঙে সভা-সমাবেশ করতে পারেনি সিপিএম। একটা সময়ে মোর্চার বিরোধিতার জেরে দলের জেলা সম্মেলন রাতারাতি দার্জিলিং থেকে সরিয়ে শিলিগুড়িতে করতে হয়েছিল সিপিএমকে। সেই সময়ে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের দার্জিলিঙের প্রকাশ্য সমাবেশও শিলিগুড়িতে সরিয়ে নিতে হয়েছিল। মোর্চা-তৃণমূল কাছাকাছি হওয়ার পরে পাহাড়ে সিপিএম আরও কোণঠাসা হয়ে পড়ে। জিটিএ গঠনের এক বছরের মাথায় মোর্চার সঙ্গে তৃণমূলের দূরত্ব তৈরি হয়। সেই সময়ে আসরে নেমে পড়ে সিপিএম। গত জুলাই মাস থেকে পাহাড়ে মোর্চা আন্দোলনে নামলে তাদের বহু নেতা-সমর্থক গ্রেফতার হন। সিপিএম ওই গ্রেফতারের বিরোধিতায় সরব হয়। তখন কিছুটা হলেও মোর্চার সঙ্গে দূরত্ব কমে সিপিএমের। এমনকী, খোদ মোর্চা সভাপতি বিমল গুরুঙ্গকে একাধিক অনুষ্ঠানে বলতে শোনা যায়, “সিপিএম একটা নির্দিষ্ট নীতি নিয়ে চলে। কিন্তু, তৃণমূলের কাজকর্ম থেকে অনেক সময়ে কিছুই বোঝা যায় না।”
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাম্প্রতিক সফরের পরে মোর্চা-তৃণমূলের দূরত্ব আগের চেয়ে অনেক কমেছে। পাহাড় স্বাভাবিক হওয়ায় জিএনএলএফ-ও রাজনৈতিক কর্মসূচি নিচ্ছে। এই অবস্থায়, পাহাড়ে আরও বেশি স্বায়ত্তশাসন দেওয়ার দাবি তুলে ময়দানে নামার সিদ্ধান্ত নেয় সিপিএম। সোমবার দার্জিলিং জজবাজারে সিপিএমের দলীয় কার্যালয়ে বৈঠকের পরে জ্যোতিবাবুর জন্ম-শতবর্ষ পালনের কথা জানানো হয়। এ দিনের বৈঠকে দার্জিলিং জোনাল কমিটি এবং কালিম্পং ইউনিটের নেতারা ছিলেন।
এই প্রসঙ্গে মোর্চার সহকারী সাধারণ সম্পাদক জ্যোতিকুমার রাই বলেন, “পাহাড়ে যে কোনও রাজনৈতিক দল যে কোনও কর্মসূচি নিতে পারে। আমাদের আমন্ত্রণ জানানো হলে দলে আলোচনা করে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।” |