দেনা মেটাতে ফের সেই দেনার ফাঁসে বিদ্যুৎ বণ্টন
কোষাগারে টানাটানি। নুন আনতে পান্তা ফুরানোর দশা। রোজকার সংসার চালানোর মতো নগদ টাকার সংস্থান করাই কঠিন। পরিষেবা অব্যাহত রাখতে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানি অগত্যা ফের ১১০০ কোটি টাকা ঋণ নিতে চলেছে।
চলতি অর্থবর্ষে কোম্পানি ইতিমধ্যে বাজার থেকে ২২৫০ কোটি টাকা ঋণ করেছে। এ বার তাদের সিদ্ধান্ত, নতুন ১১০০ কোটির ঋণ নেওয়া হবে কেন্দ্রীয় সংস্থা পাওয়ার ফিনান্স কর্পোরেশন (পিএফসি)-এর কাছ থেকে। বণ্টন-সূত্রের খবর: বিদ্যুৎ খরিদ বাবদ বিভিন্ন সংস্থার বকেয়া পাওনা মেটাতেই এই টাকার বেশির ভাগ বেরিয়ে যাবে। বাকিটা লাগবে দৈনন্দিন কাজ চালাতে। কার্যকরী মূলধন হিসেবে তা ব্যবহার করা হবে।
অর্থাৎ ধার শুধতে ফের ধার। এক অর্থবর্ষের মধ্যেই কেন ফের বিপুল দেনা করতে হচ্ছে?
বণ্টন-কর্তাদের ব্যাখ্যা: বিভিন্ন খাতে লোকসান তো আছেই। তার উপরে বিদ্যুতের বকেয়া বিল সে ভাবে আদায় না-হওয়ায় পরিস্থিতি সঙ্গিন। এতটাই যে, চলতি অর্থবর্ষে (২০১৩-১৪) আড়াই হাজার কোটি টাকার বেশি রাজস্ব ঘাটতি হতে পারে বলে কর্তৃপক্ষের আশঙ্কা। সংস্থার পরিচালন পর্ষদের বৈঠকে জানানো হয়েছে, এই বছরে বাজার থেকে বণ্টন সংস্থাকে অনেক বেশি বিদ্যুৎ কিনতে হচ্ছে। পাশাপাশি বিদ্যুৎ সংবহনের খরচও বেড়ে গিয়েছে। তার উপরে রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দফতরকে বছরভর বিদ্যুৎ জুগিয়েও কোটি কোটি টাকার বিল অনাদায়ী রয়ে গিয়েছে বলে সংস্থা-সূত্রের অভিযোগ। সূত্রের হিসেবে, গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রাজ্যের দফতরগুলির কাছে বিদ্যুৎ-বিল বাবদ পাওনা দাঁড়িয়েছে ৫০৮ কোটি টাকা।
বস্তুত সংস্থার কর্তারা আক্ষেপ করেছেন, আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের বিস্তর ফারাক সামাল দিতেই বারবার এ ভাবে ঋণ নিতে হচ্ছে। এমনকী, ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে বণ্টন কোম্পানির ঋণ গ্রহণের ঊর্ধ্বসীমা পাঁচ হাজার কোটি থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে সাড়ে ছ’হাজার কোটি টাকা।
ঋণের ‘জাল’ সম্পর্কে রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী মণীশ গুপ্তকে প্রশ্ন করা হলে তিনি কিছুই জানেন না বলে দাবি করেন। যদিও কোম্পানির এক কর্তা বলেন, “বিদ্যুৎ-বিল বাবদ পাওনা ও অন্যান্য সম্পদকে মূলধন (রেগুলটরি অ্যাসেট) হিসেবে দেখিয়ে এ বার পিএফসি-র থেকে চার বছর মেয়াদের ঋণ নেওয়া হচ্ছে। কেন্দ্রীয় নিগমটি ১২% সুদে টাকা দিতে রাজি।”
বণ্টন সংস্থার কর্তাদের দাবি: বণ্টন কোম্পানির আর্থিক স্বাস্থ্য যাচাই করতে ইউবিআই-সহ কয়েকটি ব্যাঙ্ককে নিয়ে যে ‘কনসর্টিয়াম’ গড়া হয়েছিল, তারা চলতি অর্থবর্ষে সংস্থাকে বাজার থেকে ৩১০০ কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ তোলার অনুমতি দিয়েছিল। কনসর্টিয়ামের অনুমোদনসাপেক্ষে গত অগস্ট পর্যন্ত ২২৫০ কোটি ঋণ নেওয়া হয়। আরও ৮৫০ কোটির বাজারি ঋণ নেওয়ার সুযোগ থাকলেও কনসর্টিয়াম এখনই অনুমতি দেয়নি। তাই খরচ চালানোর অর্থ জোগাড়ের জন্য তাঁরা পিএফসি-র দ্বারস্থ হয়েছেন, জানান বণ্টন-কর্তারা।
বণ্টন কোম্পানি রাজ্যের চাহিদা মেটাতে বিদ্যুৎ কেনে মূলত পশ্চিমবঙ্গ বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগমের কাছ থেকে। এনটিপিসি, এনএইচপিসি-র থেকেও কেনা হয়। মাঝে মাঝে জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ আসে। বিশেষত মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা বা পুজোর সময় বাড়তি চাহিদা পূরণ করতে স্বল্পমেয়াদি বা দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতে সস্তায় বিদ্যুৎ খরিদের ব্যবস্থা হয়। এক বণ্টন-কর্তার হিসেবে, বিদ্যুতের দাম বাবদ তাঁদের কাছে নিগমের পাওনা প্রায় সাড়ে পাঁচশো কোটি টাকা। পিএফসি-র ঋণের অর্থ হাতে এলে অন্তত ২০%-২৫% মেটানোর পরিকল্পনা আছে।
কিন্তু শুধু দেনা করে কত দিন চালানো যাবে?
সংস্থা-সূত্রের দাবি: বকেয়া বিল আদায়ের ব্যাপারে সম্প্রতি কর্তৃপক্ষ কর্মীদের উপরে চাপ দেওয়ায় কিছুটা কাজ হয়েছে। গত ক’মাসে বিল আদায় কিছুটা বেড়েছে। ছোট-মাঝারি যে সব শহরে বিদ্যুৎ চুরির বহর বেশি, সেখানে ‘এনার্জি অডিট’ করে ক্ষতি কমানোর চেষ্টা হচ্ছে। চুরি ঠেকানোর হরেক পন্থাও কার্যকর হচ্ছে। উপরন্তু আয় বাড়ানোর লক্ষ্যে সাব-স্টেশনের ছাদ বা বিদ্যুতের খুঁটি বিভিন্ন কর্পোরেট সংস্থাকে বিজ্ঞাপন লাগানোর জন্য ভাড়া দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে।
এ সবই দীর্ঘমেয়াদি চিন্তা-ভাবনা। বণ্টন কর্তারা জানেন না, ঋণের ফাঁস থেকে কবে রাহুমুক্তি ঘটবে।
কিংবা আদৌ ঘটবে কি না।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.