পাথর খাদানে কাজের ‘অভিশাপ’
আর কত কবর খুঁড়তে হবে জানে না গোয়ালদহ গ্রাম
মিনাখাঁর ধুতুরদহ গ্রাম পঞ্চায়েতের গোয়ালদহ গ্রামে ঢোকার মুখেই কবর খোঁড়ার কাজ চলছিল। পাশের কবরটা তখনও শোকায়নি। ওখানেই মাটি দেওয়া হয়েছিল আজগরের দাদা হোসেনকে। পাথর খাদানের আরও এক বলি। কয়েক দিন আগে মারা গিয়েছেন।
চার বছর আগে ওই গ্রাম থেকে বর্ধমানের ধসলমোড়ে একটি পাথর খাদানে কাজ করতে গিয়েছিলেন রজ্জাক মোল্লা। বেশ কিছু দিন আগে ফিরে এসেছেন শ্বাসকষ্ট আর বমি নিয়ে। এখনও বেঁচে আছেন রজ্জাক। কাশতে কাশতে বলছেন, “তখনও বুঝিনি, কী ভয়ঙ্কর রোগ নিয়ে বাড়ি ফিরছি।’’ পাশ থেকে আক্ষেপ করেন স্ত্রী আমেলা বিবি, “জমি জায়গা তো কিছুই নেই। ছ’জনের সংসার তো চলত না। তাই পাথর খাদানে কাজ করতে গিয়েছিল ও। রোজ আড়াইশো, তিনশো টাকায় ভালই চলছিল। কিন্তু যা রোগ নিয়ে বাড়ি ফিরল, তাতে তো পুরো টাকাটাই চিকিৎসায় চলে গিয়েছে। আর কাজের মানুষ ঘর ছাড়তে পারছে না। সংসারে দানাপানি জোগায় কে!”
রোগাক্রান্ত রজ্জাককে ঘিরে পরিবার ও গ্রামবাসী।—নিজস্ব চিত্র।
শুধু রজ্জাক নন, ভুগছেন গ্রামের শ’খানেকেরও বেশি মানুষ। অনেকেই আশঙ্কা করছেন, সিলিকোসিসের শিকার তাঁরা। কিন্তু সরকারি প্রমাণ দেবে কে? তাই যক্ষ্মার ওষুধই ভরসা।
চার বছর আগে বারাসতের এক পাথর খাদান মালিকের সঙ্গে পরিচয় হয় রজ্জাকের। তিনিই দিয়েছিলেন কাজের ‘সুযোগ’। তার পরে একে একে সুযোগ পেয়ে গ্রাম ছাড়তে থাকেন ছেলেরা। সাত আট মাস আগে রজ্জাক ফেরেন, সঙ্গে ফেরেন অন্যরাও। সঙ্গে নিয়ে আসে মারণ রোগ।
ঘরের বিছানায় শুয়ে রজ্জাক বলেন, “শ্বাসকষ্ট শুরু হল। খাদান মালিক কোনও দায়িত্বই নিল না। চলে এলাম এখানে। তারপরে ধুতুরদহ গ্রামীণ হাসপাতাল, সেখান থেকে কলকাতার হাসপাতাল। সেখান থেকে ফের গ্রামীণ হাসপাতাল। বাইরে চিকিৎসা করাব, পয়সা কোথায়?”
বছর সাঁইত্রিশের রজ্জাক শুধু নয়, গ্রামের যুবকরাও অসুখের ঠেলায় হাঁটছেন লাঠি নিয়ে। বছর পঁচিশের আবুল পাইক বলেন, “হাঁটা চলার শক্তিও হারিয়ে ফেলেছি। দু’দিন বাদে এসে দেখবেন হয়তো, আমিও নেই।”
গ্রামের মানুষরা বলছেন, “এমন যে রোগ হবে তা অপ্রত্যাশিত। আমাদের লেখাপড়া কম। পরিষ্কার তো বুঝতেও পারছি না কী হয়েছে। কেউ কিছু বলছেও না। বাইরে গিয়ে চিকিৎসা করার সামর্থ্য নেই। এত লোক অসুস্থ। সবাই কি তবে এ ভাবেই একে একে....! প্রশাসনের কাছে আমাদের অনুরোধ, আপনারা আসুন। এই মানুষগুলোর উপযুক্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা করুন। না হলে আমাদের আরও কত কবর যে খুঁড়তে হবে, জানি না।”





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.