ওসি, পুলিশ সুপারের পরে এ বার পুলিশ কমিশনার। দায়সারা রিপোর্ট পেশ করায় সোমবার ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনারকে তীব্র ভাষায় তিরস্কার করলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়। বিদ্রুপ করে বললেন, তদন্ত না-করে ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার সারা দিন কি চেয়ারের গদি পালিশ করেন?
যথাযথ রিপোর্ট না-দেওয়ায় গত সপ্তাহে পরপর দু’দিন মেমারি থানার ওসি এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার পুলিশ সুপারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায়ই। কিশোরী অপহরণের একটি মামলার জেরে ওসি-র বিরুদ্ধে নিজের থেকে মামলা ঠুকে তিনি নির্দেশ দেন, ওই ওসি-কে হাইকোর্টে হাজির হয়ে জানাতে হবে, কেন তাঁকে জেলে পাঠানো হবে না। আর পরের দিন তিনি প্রশ্ন তোলেন, খুনের মামলায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বারবার জামিনযোগ্য ধারায় মামলা করা হচ্ছে কী ভাবে? পুলিশ সুপারই বা কেন দায়সারা রিপোর্ট দিচ্ছেন?
সোমবার গৃহবধূ নির্যাতনের একটি মামলায় ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনারের জমা দেওয়া রিপোর্ট দেখে তাঁকে তুলোধোনা করেন বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সঙ্গেই ওই মামলার তদন্তভার ব্যারাকপুর কমিশনারেটের কাছ থেকে সরিয়ে সিআইডি-কে দেন তিনি। সিআইডি-কে ১০ সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট পেশ করতে হবে হাইকোর্টে।
২০১১ সালে বীজপুরের অন্তরা চৌধুরীর সঙ্গে সঞ্জয় শীলের বিয়ে হয়। বিয়েতে দিতে হয় সাত লক্ষ টাকার গয়না, একটি মোটরসাইকেল, ৫০ হাজার টাকার বাসনপত্র, বৌভাতের খরচ হিসেবে ৫০ হাজার টাকা এবং দামি দামি আসবাব। এত দেওয়াথোয়া সত্ত্বেও বিয়ের তিন দিন পর থেকেই অন্তরার উপরে অত্যাচার শুরু হয় বলে ওই তরুণী হাইকোর্টে পেশ করা আবেদনে অভিযোগ করেছেন। তাঁর স্বামী কাজ করেন মার্চেন্ট নেভিতে।
ওই তরুণী বধূর অভিযোগ, বিয়ের পর থেকেই স্বামী-সহ শ্বশুরবাড়ির লোকেরা আরও ১০ লক্ষ টাকার দাবি করতে থাকেন। মেয়ের বাবা অশেষ চৌধুরী বাড়ি বিক্রি করে চার লক্ষ টাকা দেন। কিন্তু তাতেও অত্যাচার কমেনি। শেষ পর্যন্ত অন্তরা বীজপুর থানায় বধূ-নির্যাতনের অভিযোগ জানাতে যান। কিন্তু থানা এফআইআর নিতে রাজি হয়নি বলে অভিযোগ। অন্তরা নিম্ন আদালতে সব জানান। নিম্ন আদালত পুলিশকে এফআইআর নিয়ে তদন্ত করতে বলে। তার পরেও পুলিশ নীরব থাকে।
অনেক ক্ষেত্রেই উদাসীনতায় বা বিশেষ উদ্দেশ্যে অপরাধমূলক কাজকর্মকে যথোচিত গুরুত্ব না-দিয়ে থানাতেই মামলা লঘু করে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। এটা যে আর চলবে না, সুপ্রিম কোর্ট সম্প্রতি তা পরিষ্কার ভাবে জানিয়ে দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে নির্যাতিতা বধূ অভিযোগ জানাতে গেলেও থানা এফআইআর নিতে চায়নি। নিম্ন আদালতের নির্দেশের পরেও নিষ্ক্রিয় ছিল তারা।
তার পরেই অন্তরা হাইকোর্টে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার মামলা করেন। হাইকোর্ট ব্যারাকপুরের কমিশনারকে বিষয়টির তদন্ত করে রিপোর্ট জমা দিতে বলে। এ দিন সেই রিপোর্ট দেখে অসন্তুষ্ট হন বিচারপতি। তিনি বলেন, তদন্ত বা ওই বধূর সঙ্গে ব্যবহার কিছুই ঠিকঠাক করেনি কমিশনারেট। এই অবস্থায় কমিশনারেটের উপরে আস্থা রাখা যাচ্ছে না। তার পরেই এ ব্যাপারে সিআইডি-কে তদন্ত করার নির্দেশ দেন বিচারপতি।
|