জমি জটে পিছিয়ে যাচ্ছে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষিত প্রকল্পও
কোথাও কলেজ তৈরির কথা। কোথাও স্টেডিয়াম, কোথাও আবার কিষান মাণ্ডি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষণা অনুযায়ী, দ্রুত গতিতে এই সব প্রকল্প রূপায়ণ করার কথা। প্রশাসনেরও চেষ্টার ত্রুটি নেই। তবু কাজ এগোচ্ছেই না। কারণ, জমি-জট। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সরকারি জমি মেলেনি। ভরসা তাই এলাকার মানুষ। যাঁরা জমি দান করবেন। কিন্তু জমিদাতার খোঁজ সহজে পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে প্রকল্পের কাজ পিছিয়েই চলেছে। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক অরিন্দম দত্ত বলেন, “কিছু ক্ষেত্রে জমির সমস্যা রয়েছে। আশা করছি, সে ক্ষেত্রেও নিশ্চয়ই কোনও না কোনও জমিদাতা পাওয়া যাবে।”
অবশেষে জমি মিলেছে। কেশপুর ফার্ম রোডে হচ্ছে কিষান মাণ্ডি। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।
প্রথমেই ধরা যাক, কিষান মাণ্ডির কথা। ক্ষমতায় আসার পরেই প্রতিটি ব্লকে একটি করে কিষাণ মাণ্ডি তৈরির কথা ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সরকারের বয়স আড়াই বছর হতে চলল। অথচ জেলার ২৯টি ব্লকের মধ্যে এখনও পর্যন্ত মাত্র ১০টি ব্লকে জমি পাওয়া গিয়েছে। তার মধ্যে বিনপুর-২, সবং, পিংলা, কেশিয়াড়ি, চন্দ্রকোনা-২, ঝাড়গ্রাম, গড়বেতা-১, গড়বেতা-২ ও নারায়ণগড়ে কিষাণ মাণ্ডি তৈরির জন্য ওয়ার্ক-অর্ডারও দেওয়া হয়ে গিয়েছে। অনেক চেষ্টার পর জমি মিলেছে কেশপুর ব্লকে। শুরু হয়েছে কাজ।
এ তো গেল ১০টি ব্লকের হিসেব। বাকি ১৯টি ব্লকের ক্ষেত্রে কী হবে? প্রশাসন সূত্রে খবর, শালবনি, গোপীবল্লভপুর-১, দাসপুর-১, খড়্গপুর-২, নয়াগ্রাম, মেদিনীপুর সদর, সাঁকরাইল-সহ কয়েকটি ব্লকে জমি পেতে সমস্যা হবে না। কারণ, সেখানে সরকারি খাসজমি রয়েছে। দ্রুত জমির খোঁজ করে প্রস্তাব তৈরি করতে বলা হয়েছে। তবে দাসপুর-২, ডেবরা, খড়্গপুর-১-সহ কয়েকটি ব্লকে সরকারি জমি পাওয়ার খুবই কঠিন। প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, “এই সব ব্লকে সরকারি যে জমি রয়েছে তার পরিমাণ খুবই অল্প। আবার এক জায়গায় সব জমিও নেই। কোথাও ৫ ডেসিমেল, কোথাও ১০ ডেসিমেল। এত কম জমিতে কোনও কাজ করা যাবে না। বড় জোর ‘নিজ গৃহ নিজ ভূমি’ প্রকল্পে পাট্টা দেওয়া যেতে পারে। ফলে, ওই সব ব্লকে জমিদাতাদের উপরেই নির্ভর করতে হবে। জমিদাতা না পাওয়া গেলে প্রকল্প বাস্তবায়িত করা কঠিন হবে।”
নয়াগ্রাম স্টেডিয়াম তৈরির ক্ষেত্রেও দীর্ঘদিন ধরে জমি সমস্যায় ভুগতে হয়েছে প্রশাসনকে। প্রথমে খড়িকামাথানিতে পরপর দু’টি জমি দেখা হয়। কিন্তু দু’টি জমিই স্টেডিয়াম তৈরির অনুপযুক্ত বলে জানিয়ে দেয় পূর্ত দফতর। ফলে, প্রায় দু’বছর কাজ আটকে ছিল। এতদিনে খড়িকামাথানি ও শালপাতরা মৌজায় ৬.৬৬ একর জমি পাওয়া গিয়েছে। এই জমির মালিকানা ছিল একটি বিমা সংস্থার। কিন্তু বহু বছর ধরে ফেলে রেখেও জমিটি ব্যবহার না করায় জমিটি ফের নিয়ে নিয়েছে সরকার। সেই জমিতেই এ বার স্টেডিয়াম তৈরি হবে বলে প্রশাসন জানিয়েছে। আইটিআই ও কলেজ তৈরির ক্ষেত্রেও ধীরে ধীরে সমস্যা মিটতে চলেছে বলে খবর। পিংলায় আইটিআই তৈরির জন্য ৩ একর ও নারায়ণগড়ে কলেজ তৈরির জন্য সাড়ে ৩ একর জমির খোঁজ মিলেছে। দাঁতন-২ ব্লক ও কেশিয়াড়িতেও ৩ একর করে এবং মোহনপুর ও বেলিয়াবেড়ায় ৫ একর করে জমি পাওয়া গিয়েছে। তবে খড়্গপুর-২ ব্লকে এখনও জমি নিয়ে সমস্যা থেকে গিয়েছে।
প্রশাসন সূত্রে খবর, প্রথমে খড়্গপুর-২ ব্লকের ঝিলিঙ্গায় একটি জমি দেখা হয়েছিল। কিন্তু তাতে জটিলতা থাকায় বলরামপুর মৌজায় কয়েকজন কলেজের জন্য জমি দান করেন। যদিও পরবর্তীকালে তাঁরা হঠাৎই জমিদাতারা জমি দেবেন না বলে বেঁকে বসেন। ফলে দুশ্চিন্তা বেড়েছে প্রশাসনের। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, যদি জমিদাতারা নিতান্তই জমি দিতে না রাজি হন তখন অন্য ব্যবস্থা নিতে হবে। নাহলে ওখানেই কলেজ তৈরি হবে। অন্য কোনও এলাকায় জমি পাওয়া যায় তারও খোঁজ চলছে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। কলেজ, কিষান মাণ্ডি ও স্টেডিয়ামের জন্য জমি খুঁজতেই যদি হিমসিম খেতে হয়, তাহলে ভবিষ্যতে অন্য বড় প্রকল্প রূপায়িত হবে কী করে? প্রশাসনিক কর্তারা আশ্বস্ত করলেও দুর্ভাবনা কিন্তু থেকেই যাচ্ছে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.