|
|
|
|
|
পুরভোটে ঝাড়গ্রাম |
রাজনীতিতে মহরত অভিনেত্রী বিরবাহার
কিংশুক গুপ্ত • ঝাড়গ্রাম |
|
ভোটের ময়দানে ‘রি-টেকে’র সুযোগ নেই। তাই সকাল থেকেই ভোটারদের বাড়ি-বাড়ি ঘুরছেন বিরবাহা হাঁসদা। পরনে বেগুনি রঙের আদিবাসী শৈলির ‘পাঞ্চি পাঁড়হাট’ শাড়ি। সাত-সকালে বাড়ির উঠোনে রুপোলি পর্দার নায়িকাকে দেখে আপ্লুত ঝাড়গ্রাম শহরের ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দারা।
বাংলা, ঝাড়খণ্ড, ও ওড়িশার আদিবাসী বলয়ে সাঁওতালি সিনেমার ‘হার্টথ্রব’ অভিনেত্রী বিরবাহা এই প্রথম বার ভোটের ময়দানে। অরণ্যশহরের ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে ‘ধামসা’ প্রতীকে ঝাড়খণ্ড পার্টির (নরেন) সমর্থনে নির্দল প্রার্থী হয়েছেন বিরবাহা। ঝাড়গ্রাম শহরের বিদ্যাসাগর পল্লির বাসিন্দা বিরবাহার অন্য পরিচয়ও রয়েছে। ঝাড়খণ্ড পার্টির দলনেত্রী চুনিবালা হাঁসদার বড় মেয়ে তিনি। চুনিবালা বরাবরই চেয়েছিলেন মেয়ে রাজনীতিতে আসুক। কিন্তু কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের স্নাতক বিরবাহা বেছে নেন অভিনয়-পেশা। এ পর্যন্ত দশটি সাঁওতালি সিনেমায় অভিনয় করেছেন বিরবাহা। দেড়শোরও বেশি সাঁওতালি ও বাংলা গানের ভিডিও অ্যালবামে অভিনয় করেছেন তিনি। বছর দু’য়েক আগে বুদ্ধদেব দাশগুপ্তর রবীন্দ্র-কবিতা বিষয়ক তথ্যচিত্রে ‘ক্যামেলিয়া’র ভূমিকায় দেখা গিয়েছে বিরবাহাকে। মাত্র পাঁচ বছরের মধ্যে ‘আদো আলম আঁসো আ’, ‘আচ্ছা ঠিক গেয়া’, ‘আমগে সারি দুলৌড়িয়া’ ও ‘আলম রেজিঞ্জ সাকোম সিঁন্দুর’এই চারটি ছবির জন্য পেয়েছেন সাঁওতালি চলচ্চিত্রে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার। সম্প্রতি মুম্বইয়ের একটি প্রযোজক সংস্থার সাঁওতালি ছবিতে অভিনয়ের ডাক পেয়েছেন বিরবাহা। |
|
আটপৌরে সাজে ভোট-প্রচারে বিরবাহা। —নিজস্ব চিত্র। |
এ পর্যন্ত তো ঠিকই ছিল। হঠাৎ মন বদলে ভোটের ময়দানে কেন?
বিরবাহার জবাব, “আমি ঝাড়গ্রাম শহরের বাসিন্দা। আমার ওয়ার্ডে আজ পর্যন্ত ছিটে-ফোঁটা উন্নয়ন হয়নি। অথচ এই ১৮ নম্বর ওয়ার্ডটি দীর্ঘ দিন সিপিএমের দখলে রয়েছে। রাস্তা, পানীয় জল ও নিকাশি ব্যবস্থা বেহাল। গত আড়াই বছরে রাজ্যে তৃণমূল-সরকারের যে ট্র্যাক রেকর্ড হয়েছে, তাতে ওরা পুরবোর্ডের ক্ষমতায় এলে পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার আশা নেই। সেই জন্যই ভোটারদের বলছি, আমার দল নয়, আমাকে দেখে ভোট দিন। এলাকার জন্য কাজ করতে চাই।”
ঝাড়গ্রাম পুর এলাকার ১৮টি ওয়ার্ডের বাকি ১৭টিতে কোনও প্রার্থী দেননি চুনিবালা। রাজনৈতিক মহলের মতে, পুরভোটের মাধ্যমেই রাজনীতিতে মেয়ের ‘মহরত’ চাইছেন ঝাড়খণ্ড পার্টির দলনেত্রী। মুচকি হেসে চুনিবালা বলছেন, “জঙ্গলের একটা ফুল ফুটলেই, তারপর শতফুল বিকশিত হয়!”
বস্তুত আদিবাসী মহিলা সংরক্ষিত এই ওয়ার্ডে সিপিএম, তৃণমূল ও কংগ্রেসের প্রার্থীরা বড়ই ম্লান বিরবাহার কাছে। কিন্তু অরণ্যশহরে সামগ্রিক ভাবে হাওয়া বড্ড বেশি তৃণমূলের দিকে। ফলে শেষ পর্যন্ত ভোটের ঝুলি কার দিকে ঝুঁকবে বলা কঠিন। তবে বিরবাহা নিজে রাজনৈতিক অঙ্কের কথা ভাবছেন না। ওয়ার্ডে তিন হাজারেরও বেশি মানুষের বাস। ভোটার সংখ্যা ২০২০। দোরে-দোরে গিয়ে বিরবাহা বলছেন, “আমি পাশের বাড়ির মেয়ে। আমাকে জেতান। ছোট্ট এই ওয়ার্ড দিয়ে পথচলা শুরু করতে চাই। আগামী পাঁচ বছরে ওয়ার্ডটাকে সাজিয়ে-গুছিয়ে দেব।”
জিতলে অভিনয়ের পাশাপাশি ওয়ার্ডের জন্য সময় দিতে পারবেন? মিষ্টি হেসে বিরবাহা বলছেন, “আমার নামের অর্থ জঙ্গলের ফুল। এই অরণ্যশহরে আমি বড় হয়েছি। শু্যটিংয়ের সময়টুকু বাদ দিলে বাকি সময় ঝাড়গ্রামের বাড়িতে থাকি। সেটা এলাকার মানুষ জানেন।”
রুপোলি জগতের বাইরে বাস্তবের কঠিন, রুক্ষ মাটিতে অচেনা লাগে ‘জঙ্গলের ফুল’কে। |
|
|
|
|
|