শেষ কবে মহমেডান এ ভাবে বিপক্ষকে গোলের বন্যায় ভাসিয়েছে, সাদা-কালো কর্তারা নিজেরাও তা মনে করতে পারছেন না। অনেক কষ্টে এক কর্তা বললেন, “১৯৪০ সালে মনে হয় একটা ম্যাচে ৭-০ গোলে জিতেছিলাম আমরা।” যদি এই দাবি সত্যি হয়, তা হলে দীর্ঘ ৭৩ বছর পর আবার সোমবার পুলিশ এ সিকে ৭-০-এ হারালেন টোলগে- পেনরা।
চোখ ধাঁধানো জয়ের পরও কোচের কড়া নিষেধাজ্ঞায় কোনও ফুটবলারই ড্রেসিংরুমে ফিরে উচ্ছ্বাসের জোয়ারে গা ভাসাননি। টোলগে-পেনদের মুখেও কুলুপ। আব্দুল আজিজ ম্যাচের পর কোনও রাখঢাক না করে পরিষ্কার বলে দিলেন, “শুনেছি পুলিশ এসি ম্যাচ খেলতে নামার আগে কোনও অনুশীলনই করেনি। এই পুলিশকে সাত গোল দেওয়ার মধ্যে বড় কোনও কৃতিত্ব নেই। চার্চিল ম্যাচের আগে নিঃসন্দেহে একটা ভাল প্র্যাকটিস ম্যাচ খেলার সুযোগ পেল আমার ছেলেরা। এই জয়ের পর আত্মতুষ্টি আসলে কিন্তু খুব সমস্যা।” |
আই লিগে ভাল কিছু করাই লক্ষ্য মহমেডানের। সে জন্যই সম্ভবত কলকাতা লিগের এই জয়কে পাত্তা না দেওয়ার স্ট্র্যাটেজি নিয়েছেন মহমেডান কোচ। কিন্তু যেটা চমকে দেওয়ার মতো ঘটনা তা হল, পুলিশের এই টিমই কিছু দিন আগে কলকাতা লিগের প্রথম রাউন্ডে বিএনআর-কে সাত গোল দিয়েছিল।
প্রথম পর্বে এত ভাল ফল করার পর মূল পর্বে এসে কেন এই অধঃপতন? পুলিশ এসি-র কোচ স্বরূপ দাসের দাবি, ম্যাচের আগে মাত্র তিন দিন অনুশীলন করাতে পেরেছেন ছাত্রদের। বলছিলেন, “অনুশীলন না করে মাঠে নামলে যা রেজাল্ট হওয়ার তাই হয়েছে। আমি আর কী বলব!”
ম্যাচের শুরু থেকেই টোলগে-পেন জুটির দাপট ছিল চোখে পড়ার মতো। দু’বছর আগের পুরনো ঝলক যেন দেখল যুবভারতী। দুই বিদেশির দাপটে বিরতির আগে কার্যত খড়-কুটোর মতোই উড়ে গেল পুলিশের সব লড়াই। চোট সারিয়ে পেন তো এ দিন ছিলেন দুরন্ত ছন্দে। পেনের সাহায্য পেয়ে টোলগেও ছিলেন ঝলমলে। প্রথমার্ধেই মহমেডান ৫-০-এ এগিয়ে যায়। ম্যাচের শুরুতে পেনের পাস থেকে মহমেডানের হয়ে ইজরায়েল গুরুং গোল দেওয়া শুরু করেন। দীপেন্দু বিশ্বাস যখন শেষ গোল করেন তখন স্কোরবোর্ড পুলিশকে লজ্জা দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট। মাঝে একের পর এক রংমশাল ছড়িয়ে গোল করে যান টোলগে আর পেন।
আই লিগের চার্চিল ম্যাচের কথা মাথায় রেখেই বিরতির কিছুক্ষণ পর আজিজ দুই বিদেশিকে তুলে নেন। তা না হলে স্কোর ১০-০ ও হতে পারত। এ দিন শেষ পঁয়ত্রিশ মিনিট মহমেডান বিদেশি ছাড়াই খেলল। তবু দ্বিতীয়ার্ধে প্রচুর গোলের সুযোগ তৈরি করেছিল তারা। কিন্তু ইজরায়েল ও দীপেন্দুর দু’টি গোল ছাড়া বিশেষ সুবিধা করতে পারেনি আজিজের টিম। ম্যাচের পর দীপেন্দু দাবি করলেন, “২৪৫টি গোল করে ফেললাম আমি। বাড়ি গিয়ে হিসেব করে দেখব রেকর্ড হল কি না।”
যদি তা হয়, তা হলে মহমেডানের চমকপ্রদ ফলের পাশে এটাও হবে বড় চমক।
মহামেডান: লুই, ধনরাজন, মেহরাজ, রাকেশ, গগনদীপ (সুখদেব), ইসফাক, ইজরায়েল, মণীশ, পেন (অজয়), টোলগে (দীপেন্দু), অসীম। |
মঙ্গলবার কলকাতা লিগ
ইস্টবেঙ্গল-জর্জ টেলিগ্রাফ (ইস্টবেঙ্গল মাঠ, ২-০০)
|