হাওড়া শহরের একটিও অবৈধ নির্মাণ ভাঙা হয়নি। এখনও সম্পূর্ণ হয়নি পানীয় জল ও নিকাশির সুষ্ঠু ব্যবস্থা। সুন্দর করে সাজানো যায়নি শহরটাকে। রাস্তার মোড়ে মোড়ে করা যায়নি সুলভ শৌচাগারও। ভোটের মুখে দাঁড়িয়ে এই স্বীকারোক্তি খোদ মেয়র মমতা জায়সবালের। তবে পাশাপাশিই তাঁর দাবি, এ বারও তাঁদের অর্থাৎ বামফ্রন্টের পক্ষেই ভোট দেবেন মানুষ। কারণ তাঁর মতে, চরম আর্থিক সীমাবদ্ধতার মধ্যেও তাঁর আমলে গত পাঁচ বছরে যথাসম্ভব সারিয়ে তোলা গিয়েছে ভাঙাচোরা রাস্তাঘাট। উন্নতি করা গিয়েছে নিকাশি এবং পানীয় জলের ব্যবস্থার। খুলে দেওয়া গিয়েছে টাউন হলও। এ বারের পুরভোটেও ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে সিপিএম প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়েছেন বর্তমান মেয়র।
সোমবার সকাল থেকে নিজের ওয়ার্ডে নির্বাচনী প্রচার সেরেছেন। দুপুরে পুরসভায়। সেখানেই বসে মেয়র মমতা জায়সবাল বলেন, “যদি শান্তিপূর্ণ ও অবাধ নির্বাচন হয়, আমরাই ফের বোর্ড গঠন করব।”
প্রশ্ন: কিন্তু কী ভাবে? পানীয় জল, নিকাশি বা রাস্তাঘাটের উন্নতি সব ক্ষেত্রেই তো আপনার পুরবোর্ড চরম ব্যর্থ বলে অভিযোগ। এর পরেও হাওড়ার মানুষ আপনাদের ভোট দেবেন কেন?
উত্তর: পানীয় জল সরবরাহের ক্ষেত্রে আমরা ব্যর্থ বলে মনে করি না। ১৯৮৪ সালে হাওড়া পুর-এলাকায় ৪ কোটি গ্যালন জল সরবরাহের জন্য পদ্মপুকুর জলপ্রকল্প গড়ে ওঠার সময়ে জনসংখ্যা কম ছিল। পরে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় আরও ৩ কোটি গ্যালনের একটি জলপ্রকল্প তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু বতর্মানে হাওড়া শহরে যে হারে জনসংখ্যা বেড়েছে, তাতে আরও কয়েকটি জলপ্রকল্প দরকার। পাশাপাশি দীর্ঘদিন আগে তৈরি হওয়া জলপ্রকল্পের ভূগর্ভস্থ পাইপ আর্থিক সমস্যায় ঠিক মতো রক্ষণাবেক্ষণ করা যায়নি। ফলে মাঝে মাঝে জল সরবরাহে বিঘ্ন ঘটেছে।
প্রশ্ন: গত বার বামফ্রন্টের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল পুরসভার সংযুক্ত এলাকায় বাড়ি বাড়ি জল পৌঁছে দেওয়া। তা এত বছর পরেও দিতে পারেননি কেন?
উত্তর: এটা ঠিকই যে, সংযুক্ত এলাকায় ৪৫ থেকে ৫০ নম্বর ওয়ার্ডে ঘরে ঘরে পানীয় জল আমরা আজও পৌঁছে দিতে পারিনি। জেএনএনইউআরএম প্রকল্পে ওই সব এলাকায় কাজ হয়েছে। কিন্তু অর্থাভাবে ভাবে বাড়ি বাড়ি পাইপলাইন করে সংযোগ দেওয়া যায়নি। এর জন্য রাজ্য সরকারের কাছে ৫০ কোটি টাকা চেয়েছিলাম। কিন্তু সরকার অনুমোদন দেয়নি। তাই ঠিক করেছি, এ বার ক্ষমতায় এলে আমাদের প্রথম কাজ হবে বাড়ি বাড়ি জল পৌঁছে দেওয়া।
প্রশ্ন: নিকাশির ক্ষেত্রে ব্যর্থতার কারণ কী?
উত্তর: নিকাশির উন্নতির জন্য ৯৩ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছিল আড়াই বছর আগে। পুরসভার কাজ হলেও কাজ করছিল হাওড়া ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্ট, কেএমডিএ, কেএমডব্লিউএসএ এবং রাজ্য সেচ দফতর। আড়াই বছর পরে দেখা গেল মধ্য হাওড়ার নিকাশির প্রধান পাইপলাইনের কাজ কদমতলা বাজারের কাছ থেকে আর এগোয়নি। অন্য দিকে, সরকার উত্তর হাওড়ায় আরও দু’টি পাম্পিং স্টেশন করার কথা বললেও আজ পর্যন্ত তার অনুমোদন দেয়নি। ফলে এ বছরও জমা জলে ভোগান্তি হয়েছে।
প্রশ্ন: শহর জুড়ে অবৈধ নির্মাণ রোখা যায়নি কেন?
উত্তর: পুরসভার অন্দরেই একদল লোক রয়েছেন, যাঁদের যোগসাজশে আদালত থেকে নির্মাণ ভাঙার উপরে স্থগিতাদেশ পেয়ে যাচ্ছেন প্রোমোটারেরা। এর পরে রাতের অন্ধকারে অবৈধ নির্মাণ চলছে। আশা করব যে দলই বোর্ডে আসুক, পুরসভার অন্দরের এই চক্রকে ভেঙে দিয়ে হাওড়া শহরে অবৈধ নির্মাণ বন্ধ করতে উদ্যোগী হবে। |