তিনি পেশায় চিকিৎসক। ফলে হাওড়া শহরের অবস্থাটাকে তিনি চিকিৎসকের চোখেই জরিপ করতে চান। ডাক্তারবাবু মনে করেন, শহরটার হাল এখন ‘মাল্টি অর্গান ফেলিওর’ হওয়া কোনও রোগীর মতোই। তবে এমন মরণাপন্ন রোগীরাও তো বেঁচে ফেরেন। সেই আশাতেই এমন দশা থেকে হাওড়া শহরকে বাঁচিয়ে তোলাটাই এখন তাঁর নিজের ও দলের কাছে সব চেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
হাওড়া পুরসভার ভোটে এ বার তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী-তালিকায় বড় চমক তিনি হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক রথীন চক্রবর্তী, প্রয়াত বিশিষ্ট হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক ভোলানাথ চক্রবর্তীর ছেলে। অনেকেই মনে করছেন, হাওড়া পুরসভায় তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে গুরুত্বপূর্ণ কোনও পদে দায়িত্ব পাবেন রথীনবাবু।
সোমবার নির্বাচনী প্রচারের ফাঁকে নিজের বাড়িতে বসে হাওড়া পুরসভার ২৮ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূল-প্রার্থী রথীনবাবু বলেন, “দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চান, দীর্ঘদিন ধরে উপেক্ষিত হাওড়া শহরটাকে একেবারে পাল্টে দিতে। যাতে মানুষ ঠিক মতো শ্বাস নিতে পারেন, বিশুদ্ধ পানীয় জল পান, ভাল রাস্তা দিয়ে হাঁটতে পারেন এবং সর্বোপরি শান্তিতে থাকতে পারেন সেই ব্যবস্থা কায়েম করতে। দিদির শিষ্য হিসেবে আমিও তা-ই করতে চাই।”
প্রশ্ন: ধরা যাক, আপনি নির্বাচনে জিতে হাওড়া শহরের দায়িত্ব পেলেন। তা হলে পুর-পরিষেবার ক্ষেত্রে কোন কোন বিষয়কে অগ্রাধিকার দেবেন?
উত্তর: পুর-পরিষেবার ক্ষেত্রে প্রথম যেটা প্রয়োজন, তা হল পানীয় জল এবং নিকাশি ব্যবস্থা। এই দুই ক্ষেত্রে উন্নতি আমাদের প্রধান লক্ষ। এ ছাড়া, শহরটাকে সুন্দর করে সাজিয়ে তোলা, মানুষকে একটু শান্তিতে খোলামেলা জায়গায় অক্সিজেন নেওয়ার ব্যবস্থা করে দেওয়া। আর সত্যি বলতে, আমাদের দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে। একটু বৃষ্টি হলেই আমার গলিতে এত জল জমে যে, রোগী দেখতে গাড়ি নিয়ে বেরোতে পারি না। বেআইনি বহুতলের দাপটে শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। এ সব দেখে আর চোখ বন্ধ করে বসে থাকা যায় না।
প্রশ্ন: পানীয় জল বা নিকাশি ছাড়াও, শহরের ভাঙাচোরা রাস্তা, যত্রতত্র আবর্জনা, জমা জল, অবৈধ বাড়ি তৈরিতে প্রোমোটার-রাজ এ সব পাল্টাবেন কী করে?
উত্তর: হাওড়া শহরের অবস্থা হয়েছে ‘মাল্টি অর্গান ফেলিওর’ হওয়া রোগীর মতো। শহরটা কোমায় চলে গিয়েছে। একে বাঁচিয়ে ফেরানোটাই আমাদের চ্যালেঞ্জ। সেই চ্যালেঞ্জে জিতবই। কারণ আমাদের দলনেত্রী সব সময়ে সদর্থক চিন্তাভাবনা নিয়ে কাজ করেন। আমিও করি। আসলে সদিচ্ছা থাকলে অসম্ভব বলে কিছু থাকে না। মমতাদি গত দু’বছরে সেটা প্রমাণ করে দিয়েছেন।
প্রশ্ন: ক্ষমতায় এলে শহরের উন্নতি কী ভাবে ঘটাবেন?
উত্তর: এটা ঠিকই যে, আমরা অত্যন্ত উন্নতি প্রযুক্তির যুগে বাস করছি। সেই প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে একটা নির্দিষ্ট ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে এগোতে চাই। এ জন্য একটা অঞ্চলের ‘মডেল ডেভেলপমেন্ট’ করে দৃষ্টান্ত হিসেবে রাখা হবে। সেই এলাকার ধাঁচে ঢেলে সাজানো হবে অন্য এলাকাগুলোকে। এমনই পরিকল্পনা রয়েছে আমার।
প্রশ্ন: ৩০ বছর পুরবোর্ডে থাকার পরেও বামফ্রন্ট পরিচালিত বোর্ডের দাবি, অর্থাভাবের জন্য উন্নয়ন হয়নি। আপনারা ক্ষমতায় এলে অর্থাভাব দূর করবেন কী ভাবে?
উত্তর: মানুষের উপরে করের বোঝা বাড়িয়ে নয়। দলনেত্রীও সম্পূর্ণ ভাবে এর বিরোধী। ন্যায়সঙ্গত ভাবে যেটা আয় হওয়ার কথা, যে কর নির্ধারিত হয়ে আছে, তা আয় হলেই যথেষ্ট। না হলে কড়াকড়ি করা হবে। কিন্তু যা করা হবে, সবটাই মানুষের স্বার্থের কথা ভেবে। |