প্যান্টোগ্রাফ ভেঙে তার ছিঁড়ে ট্রেন বিপর্যস্ত হাওড়ায়
লোকাল ট্রেনের প্যান্টোগ্রাফ ভেঙে ওভারহেড তার ছিঁড়ে যাওয়ায় সোমবার দুপুরে হাওড়া স্টেশনের পাঁচটি প্ল্যাটফর্মে ট্রেন ঢোকা ও বেরোনো বন্ধ হয়ে যায়। ওই সময়ে অন্যান্য প্ল্যাটফর্ম থেকে লোকাল ও দূরপাল্লার ট্রেন চালানোর চেষ্টা চলে ঠিকই। কিন্তু তার জেরে সব ট্রেনই দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত দেরিতে চলাচল করেছে। ফলে যাত্রীরা চূড়ান্ত দুর্ভোগে পড়েন।
রেলের সংসদীয় কমিটির প্রতিনিধিরা গত সপ্তাহেই কলকাতা ঘুরে গিয়েছেন। মেট্রোর সঙ্গে সঙ্গে রেলের অন্যান্য জোনেও যাত্রী পরিষেবার বিষয়টিকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়ার নির্দেশ দেন তাঁরা। বিশেষ করে ঠিক সময়ে ট্রেন চালানো এবং যাত্রীদের ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধা ঠিকঠাক দেওয়া হচ্ছে কি না, তা ভাল ভাবে খতিয়ে দেখার কথা বারবার বলে গিয়েছেন ওই প্রতিনিধিরা। বলেছেন, পরিষেবায় কোনও রকম ঘাটতি থাকলে চলবে না। বর্তমান পরিকাঠামোর সদ্ব্যবহার করেই যাত্রী-স্বাচ্ছন্দ্যের ব্যবস্থা করতে হবে।
কিন্তু পরিদর্শন ও পরামর্শই সার! কার্যক্ষেত্রে ওই প্রতিনিধিদের নির্দেশ বা পরামর্শের প্রতিফলন তেমন নজরে পড়ছে না! শহরতলির ট্রেন চলছে সেই জোড়াতাপ্পি দিয়েই। সময় মানার বালাই নেই। শহরতলির যাত্রীদের অভিযোগ, ঠিক সময়ে ট্রেন না-চলায় বাদুড়ঝোলা ভিড় হয়। প্রাণ হাতে নিয়ে চলাচল করতে হয় নিত্যদিন। তার উপরে কখনও ওভারহেড তার ছিঁড়ছে। কখনও বা লাইনচ্যুত হচ্ছে ট্রেনের কামরা। কোথাও প্যান্টোগ্রাফ ভাঙছে তো অন্য কোথাও গোলমাল ধরা পড়ছে লাইনের পয়েন্টে। ফলে বিপর্যয় লেগেই রয়েছে। দূরপাল্লারই হোক বা লোকাল, রোজই দেরিতে চলছে ট্রেন। ভুগতে হচ্ছে যাত্রীদের।
ঠিক কী হয়েছিল সোমবার?
রেল সূত্রের খবর, এ দিন হাওড়া স্টেশন থেকে একটি আপ ব্যান্ডেল লোকাল ছাড়ার পরে কেবিনের কাছে ট্রেনটির প্যান্টোগ্রাফ ভেঙে ওভারহেড তার ছিঁড়ে যায়। ট্রেনটি দাঁড়িয়ে পড়ে। ট্রেনটির মাঝামাঝি একটি প্যান্টোগ্রাফ এমন ভাবে ভেঙে আটকে গিয়েছিল যে, স্টেশনের পাঁচটি লাইনে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। হাওড়া স্টেশনের এক থেকে পাঁচ নম্বর প্ল্যাটফর্মেই শহরতলির লোকাল ট্রেন ছাড়া হয়। দুর্ঘটনার জেরে সেই পাঁচটি লাইন আটকে যাওয়ায় লোকাল ট্রেন চলাচল বিপর্যস্ত হয়ে যায়। শুধু ছাড়ার পথেই সমস্যা নয়। স্টেশনে ঢুকতে গিয়েও ঝামেলায় পড়ে বিভিন্ন ট্রেন। পাঁচটি প্ল্যাটফর্ম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় হাওড়ার অন্যান্য প্ল্যাটফর্ম থেকে লোকাল ট্রেন ছাড়ার ব্যবস্থা হয়। কিন্তু সেখানকার নির্ধারিত ট্রেনের সঙ্গে বাড়তি ট্রেনের বোঝা চাপায় সব ট্রেনেরই চলাচলে দেরি হতে শুরু করে। ওই সময় প্রতিটি ট্রেন চালাতে ১৫ থেকে ৩০ মিনিট দেরি হয়।
মায়ের চিকিৎসার জন্য ওষুধ কিনে বাড়ি ফিরছিলেন হিন্দমোটরের বাসিন্দা সমীর বসু। ট্রেন-বিভ্রাটে দীর্ঘ ক্ষণ ওষুধ হাতে নিয়েই দাঁড়িয়ে থাকতে হয় তাঁকে। ক্ষোভে ফেটে পড়েন তিনি। একই অবস্থা বালির বাসিন্দা পায়েল নাগের। ছেলেকে স্কুল থেকে নিয়ে বাড়ি যাবেন বলে স্টেশনে এসেছিলেন। কিন্তু ট্রেন কই? দীর্ঘ ক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পরে ছোট্ট পড়ুয়ার হাত ধরে দিশাহারার মতো এ-দিক ও-দিক ছোটাছুটি করতে দেখা যায় তাঁকে। শুধু হাওড়া নয়, দীর্ঘ ক্ষণ ট্রেন না-পেয়ে মেন লাইনের অনেক স্টেশনেই প্রচণ্ড ভিড় জমে যায়। অনেকেই সড়কপথে ধরতে বাধ্য হন। বিক্ষুব্ধ যাত্রীদের অভিযোগ, রেল-কর্তৃপক্ষ যা-ই বলুন, রেলের রক্ষণাবেক্ষণ শিকেয় উঠেছে। তা না-হলে নিত্যদিন এই ধরনের বিপত্তি হতেই থাকবে কেন?
রেলকর্তারা অবশ্য এই অভিযোগ মানতে চাননি। তাঁরা এ দিনের বিষয়টিকে যান্ত্রিক ত্রুটি বলে দায় সারতে চেয়েছেন। তাঁদের বক্তব্য, যন্ত্র চললেই তাতে ত্রুটি হতে পারে। পূর্ব রেল জানায়, ওই দুর্ঘটনার সঙ্গে সঙ্গেই তিনটি টাওয়ার ভ্যান গিয়ে কাজ শুরু করে। আড়াইটে নাগাদ এক, দুই, চার ও পাঁচ নম্বর প্ল্যাটফর্ম ফের চালু করে দেওয়া হয়। তিন নম্বর প্ল্যাটফর্ম চালু হয় সন্ধ্যার পরে। এ দিনের দুর্ঘটনায় কোনও ট্রেন বাতিল করা হয়নি।





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.