নিজস্ব সংবাদদাতা • তারকেশ্বর |
কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি কে হবেন, তা নিয়ে শাসক দলের দুই বিধায়কের অনুগামী ছাত্রদের মধ্যে মন কষাকষি ছিলই। সোমবার ধুন্ধুমার বাধল তারকেশ্বরের চাঁপাডাঙা কলেজে। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, বোমা পড়েছে, গুলিও চলেছে। আতঙ্কে কলেজের ঘর বন্ধ করে কাটান সাধারণ পড়ুয়া, শিক্ষিক-শিক্ষিকা এবং শিক্ষাকর্মীরা। জখম হন দু’পক্ষের জনা দ’শেক। হুগলির পুলিশ সুপার সুনীল চৌধুরী রাতে জানান, কলেজ কর্তৃপক্ষের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়েছে।
রায়গঞ্জ-রামপুরহাট কলেজে অধ্যক্ষ নিগ্রহ থেকে শুরু করে ভাঙড় কলেজে শিক্ষিকাকে জলের জগ ছুড়ে মারাপরিবর্তনের জমানায় শিক্ষাঙ্গনে রাজনীতির অনুপ্রবেশের অভিযোগ কম ওঠেনি। কিন্তু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাজনীতির অনভিপ্রেত হস্তক্ষেপ যে তিনি চান না, সে কথা বহু বার বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে তাঁর দলের সবাইকে সে নীতি পালন করতে দেখেনি চাঁপাডাঙা কলেজ।
কলেজ সূত্রের খবর, ঝামেলার সূত্রপাত তৃণমূল পরিচালিত কলেজ পরিচালন সমিতির সভাপতি পদে রদবদলকে কেন্দ্র করে। আগে পুড়শুড়ার তৃণমূল বিধায়ক পারভেজ রহমান ছিলেন ওই পদে। গত মাসের ২৮ তারিখে সরকারি নির্দেশে পরিচালন সমিতির সভাপতি পদে সরকারি প্রতিনিধি হিসাবে তারকেশ্বরের বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী রচপাল সিংহের নাম পাঠানো হয়। যা মানতে নারাজ ছিলেন কলেজে পারভেজ-অনুগামী বলে পরিচিত ছাত্র নেতারা।
খবর জানার পরে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, “পারভেজ এবং রচপালকে নিজেদের মধ্যে কথা বলে নিতে বলেছিলাম। এ ব্যাপারে ওঁদের বক্তব্যই চূড়ান্ত।” তবে পারভেজের বক্তব্য, “আমাদের মজবুত ছাত্র সংগঠন ভাঙাতে সিপিএম-ই হামলা করেছে।” পক্ষান্তরে রচপাল বলেন, “বিষয়টি রাজ্য নেতৃত্ব দেখছেন।” কিন্তু গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরেই যে এই কাণ্ড, কার্যত তা মেনে নিয়েছেন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (টিএমসিপি) রাজ্য নেতৃত্ব। সংগঠন সূত্রের খবর, চাঁপাডাঙ্গার ঘটনা নিয়ে দলের শীর্ষ নেতা মুকুল রায় পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট চেয়েছেন। টিএমসিপি-র রাজ্য সভাপতি শঙ্কুদেব পণ্ডা বলেন, “দলের মধ্যে এ নিয়ে আলোচনা চলছে।”
চাঁপাডাঙা কলেজের ছাত্র সংসদ টিএমসিপিরই দখলে। দিন কয়েক আগে ‘পারভেজকে সরানো চলবে না’ দাবিতে বিক্ষোভ দেখান ছাত্র সংসদের কিছু নেতা। এ দিন বেলা ১১টা নাগাদ রচপালের অনুগামী বলে পরিচিত কিছু টিএমসিপি সমর্থককে পারভেজ-অনুগামীরা ক্লাসে ঢুকতে বাধা দেন বলে অভিযোগ। দু’পক্ষই লাঠি-রড নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। প্রত্যক্ষদশর্ীর্ পড়ুয়াদের কথায়, “মুড়িমুড়কির মতো বোমা পড়ছিল। গুলির শব্দও শুনেছি। আগ্নেয়াস্ত্র হাতে দাপাদাপি করছিল কিছু ছেলে। অনেকেই বহিরাগত।” পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়।
সংঘর্ষে কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র গণেশ মালিক, মুন্সি ইমরান হোসেন এবং প্রথম বর্ষের ছাত্র মহম্মদ ইমতিয়াজ আলি গুরুতর জখম হন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁরা কলকাতার এসএসকেএমে চিকিৎসাধীন। পুলিশ জানায়, কলেজ চত্বর থেকে একটি বোমা এবং বেশ কিছু লাঠি উদ্ধার হয়েছে। কলেজের টিচার-ইন-চার্জ সুজাতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “সরকারি প্রতিনিধি পরিবর্তনের বিষয়টি নিয়ে নোংরামি চলছে।” তাঁর অভিযোগ, “সুষ্ঠু ভাবে কলেজ চালাতে দিচ্ছে না ছাত্র সংসদ।” বিধায়ক পারভেজ রহমান অবশ্য দাবি করেছেন, “টিচার-ইন-চার্জের অভিযোগ ভিত্তিহীন। এ দিন কলেজে যা হয়েছে, সব সিপিএমের কাজ। টিচার-ইন-চার্জ নিজেও সিপিএম-ঘনিষ্ঠ।” অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে সিপিএমের হুগলি জেলা সম্পাদক সুদর্শন রায়চৌধুরী বলেন, “কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি পদ পাওয়া নিয়েই লড়ছেন শাসক দলের দুই বিধায়ক। চাঁপাডাঙায় সবাই জানে, কারা, কী করেছে।” |