প্রবন্ধ ২...
তত্ত্বের বাজার নেই, তাই
ন্দ্রজিৎ রায় ঠিকই বলেছেন, ‘তাত্ত্বিক গবেষণার একটা পরিবেশ চাই’ (১৪-১১)। এই প্রসঙ্গে আরও কয়েকটি কথা বলতে চাই। এক, তাত্ত্বিক গবেষণা সম্পর্কে সারা পৃথিবীরই কিন্তু দৃষ্টিভঙ্গি বদলেছে মোটামুটি গত শতকের শেষ চতুর্থাংশ থেকে। এটা শুধু একটা কলকাতার ব্যাপার নয়।
আমার মতে, যখন থেকে বাজার-অর্থনীতির নিয়ম মেনে উন্নত বিশ্বে গবেষণা বা গবেষণাপত্রের একটা বাজার দর চালু হল, ও-সব নিয়ে এক ধরনের খুচরো আর পাইকারি ব্যবসা শুরু হল জ্ঞানবিজ্ঞানের জগতে, তখন থেকেই এই মানসিকতার পরিবর্তন, দেশভেদে মাত্রাটা হয়তো একটু কম-বেশি। বাজার প্রতিষ্ঠা হলেই তখন ‘অমুক বিষয়টার মার্কেট-ভ্যালু বেশি, তাই ওতে কাজ করেন এমন থিসিস-অ্যাডভাইসরকে বাছব’ বা ‘গবেষণায় অমুক অমুক কয়েকটা বিষয়ের নামোল্লেখ থাকলে চাকরির বাজারে বিরাট দাম, ডিগ্রি শেষ হওয়ার আগেই তমুক কোম্পানিরা লুফে নেবে’ এই ধরনের চিন্তাভাবনার রমরমা। আর তাতেই কাগজ-কলম নিয়ে বসে বসে অঙ্ক-কষা বিশুদ্ধ তাত্ত্বিক গবেষণার কোণঠাসা অবস্থা, কারণ তার তো বাজারে হাতে-গরম কাটতি নেই। সেই গবেষণা অনেক সময়ই গবেষকের কর্মজীবনে বা জীবদ্দশায় সমাদর পায় না, পরে পায়, কারণ তার প্রকৃত মূল্য বোঝা যায় দেরিতে।

আবার, সব দেশেই কিছু গবেষক আছেন (সংখ্যায় নিতান্তই কম), এই বাজারেও যাঁদের গবেষণার মূল প্রেরণা অর্থনৈতিক নয়, নিজের বিষয়ের প্রতি অকৃত্রিম ভালবাসা। কিন্তু ওই যে বাজারের কথা বললাম, তার দরুন আজকাল গবেষণা জিনিসটার মূলস্রোতটাই চল্লিশ-পঞ্চাশ বছর আগের খাত থেকে ভিন্ন খাতে বইছে। এই দ্বিতীয় ধরনের গবেষকরা স্রেফ সেই মূলস্রোতে থাকার জন্যই (যার ওপর কিনা ছাত্রছাত্রী মহলে তাঁদের গ্রহণযোগ্যতাও নির্ভর করে), অনেক সময় হয়তো কিছুটা ইচ্ছের বিরুদ্ধেও, বিশুদ্ধ তাত্ত্বিক গবেষণা থেকে সরে আসছেন।
এ বার আসি কলকাতার কথায়। এতক্ষণ যে বিশ্বব্যাপী পরিবর্তনগুলির কথা বললাম, কলকাতায় তার ঢেউ এসে লেগেছে অনেক পরে। এখানে তারও আগে থেকে অন্য নানা কারণে তাত্ত্বিক গবেষণার পায়ের তলায় একটু একটু করে মাটি সরে গেছে। সারা রাজ্যের সব উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সঙ্গে গবেষণার ঐতিহ্যবাহী সম্ভাবনাময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির উপরও রাজনীতির (সে ডান বা বাম যা-ই হোক) বিষময় ও সর্বগ্রাসী প্রভাব। তার ফলে সেই প্রতিষ্ঠানের মজ্জায় মজ্জায় ঘুণ ধরে যাওয়া, শিক্ষাব্যবস্থার প্রতিটি স্তরে এক ধরনের অরাজকতা আর অসুস্থ কর্মসংস্কৃতি শিকড় গেড়ে বসা এই চেনা কারণগুলো তো আছেই। বিশ্বমানের তাত্ত্বিক গবেষণার উপযোগী মেধা এ রাজ্যে বা এ শহরে জন্মায় না, এমন দাবি হাস্যকর। শুধু সেই সব মেধাকে চিনে নিয়ে তাত্ত্বিক গবেষণার পথে চালিত ও আকৃষ্ট করার মতো একটা সিস্টেম বা ব্যবস্থা এ সমাজে আজ আর নেই দীর্ঘ দিনের অবক্ষয়ে নষ্ট হয়ে গেছে।
স্বীয় দৃষ্টান্তে তরুণ গবেষকদের কাছে পথপ্রদর্শক বা আদর্শ চরিত্র হওয়ার মতো তাত্ত্বিক গবেষকও আজ এখানে বিরল (ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিকাল ইনস্টিটিউটের মতো কিছু উজ্জ্বল ব্যতিক্রম ছাড়া)। ইতিহাস থেকে অনুপ্রেরণা নেওয়ার বা আদর্শ বাছার ব্যাপারটি এ সব ক্ষেত্রে ঠিক কাজ করে না, চাই বর্তমানের কোনও প্রেরণা-উৎস। ক্রিকেটের উদাহরণ দিয়ে বলা যেতে পারে, আজ যে কিশোর বা তরুণরা কলকাতায় ক্রিকেট খেলে, বাজি রেখে বলা যায়, তাদের ‘রোল মডেল’ সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় বা মনোজ তিওয়ারির মতো কেউ পঙ্কজ রায় নন।
অথচ আমাদের দেশে যেহেতু ফলিত গবেষণার বিশ্বমানের সুযোগসুবিধা কোনও দিনই তেমন ছিল না (আজ অবস্থার অনেক উন্নতি হওয়ার পরও উন্নত বিশ্বের তুলনায় সে সুযোগ সীমিত), তাই কলকাতার পক্ষে বৈজ্ঞানিক গবেষণার বিশ্বমঞ্চে ঠাঁই করে নেওয়ার সেরা রাস্তা ছিল ওই তাত্ত্বিক গবেষণাই। বাঙালি এখানেও পথভ্রান্ত।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অ্যাক্রন বিশ্ববিদ্যালয়ে সংখ্যাতত্ত্বের শিক্ষক


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.