সম্পাদকীয় ২...
অবশেষে
বশেষে মলদ্বীপের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট মামুন আবদুল গায়ুমের ভাই আব্দুল্লা ইয়ামিন জয়ী হইয়াছেন। সপ্তাহকাল আগেও তাঁহার জয়ের সম্ভাবনা দৃশ্যমান ছিল না। উপর্যুপরি নির্বাচনে তিনি গদিচ্যুত প্রেসিডেন্ট মহম্মদ নাশিদের অর্ধেক ভোটও সংগ্রহ করিতে পারিতেছিলেন না। আর কখনও দেশের পুলিশ, কখনও সুপ্রিম কোর্ট সেই নির্বাচন নানা অজুহাতে বাতিল বা অবৈধ ঘোষণা করিতেছিল। শেষ পর্যন্ত যে ‘নির্বাচন’টি অনুষ্ঠিত হইল, তাহাতে চমকপ্রদ ভাবে ইয়ামিন জয়ী হইয়া গেলেন। ইহা নিঃসন্দেহে রহস্যময়। মহম্মদ নাশিদ অবশ্য নির্বাচনী ফলাফল শিরোধার্য করিয়া দায়িত্বশীল বিরোধী নেতার ভূমিকা পালনের অঙ্গীকার করিয়াছেন। তিনি যে গণতন্ত্রে বিশ্বাসী, অথচ মলদ্বীপ যে এখনও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার সহিত তত অভ্যস্ত নয়, তাহাও এতদ্দ্বারা কিছুটা স্পষ্ট হইয়াছে।
আব্দুল্লা ইয়ামিনের জয়ে দেশের ইসলামপন্থী গোষ্ঠীগুলি উচ্ছ্বাস ব্যক্ত করিতেছে। ভারতের তাই পূর্বে ইয়ামিন সম্পর্কে কিছু আপত্তি ছিল। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর তাঁহাকে সমর্থন না-জানাইয়াও নয়াদিল্লির উপায় নাই। একটা সময় ছিল, যখন ভারতই ছিল মলদ্বীপের ঘনিষ্ঠতম বন্ধু। ১৯৮৮ সালে মামুন আবদুল গায়ুমের বিরুদ্ধে সামরিক অভ্যুত্থান বানচাল করিতে নয়াদিল্লিই নৌবাহিনী প্রেরণ করিয়াছিল। কিন্তু গায়ুমের তিন দশকের স্বৈরশাসনের অবসান এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার আবাহনে ভারতের ইতিবাচক ভূমিকা স্বার্থবাদীদের পছন্দ হয় নাই। নেপথ্য হইতে গায়ুম ও তাঁহার অনুচরেরা ক্ষমতায় ফেরার রকমারি প্রচেষ্টা চালাইতে থাকেন। সুযোগ বুঝিয়া এই পর্বেই চিন তাহার বিপুল আর্থিক অনুদান, বিনিয়োগ এবং সামরিক সাহায্যের সম্ভার লইয়া মালেতে হাজির হইতে থাকে। বিপুলসংখ্যক চিনা পর্যটকও মলদ্বীপ সফরে যাইতে থাকেন, যাহার ফলে এই দ্বীপরাষ্ট্রের পর্যটন-নির্ভর অর্থনীতি বেজিংয়ের উপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল হইয়া পড়ে। ক্রমে ভারতের সহিত সম্পর্কও তিক্ত হইতে থাকে। মালের বিমানবন্দর গড়ার জন্য পরিকাঠামোগত বিনিয়োগের যে বিপুল ঠিকাদারি ভারতীয় সংস্থাকে দেওয়া হইয়াছিল, তাহাও অকস্মাৎ রদ করিয়া দেওয়া হয়। এই অবস্থায় তাহাকে আরও দূরে ঠেলিয়া দেওয়া বিচক্ষণ কূটনীতি নয়। নয়াদিল্লি তাই নূতন প্রেসিডেন্টকে স্বাগত জানাইয়াছে।
গায়ুম বকলমে মলদ্বীপের শাসনক্ষমতায় ফিরিয়া আসিয়াছেন। দ্বীপরাষ্ট্রে তিন দশকের স্বৈরশাসন তাঁহাকে বিপুল সম্পত্তির অধিকারী করিয়াছে। তাঁহার লোকবল প্রচুর, অনুগত, বশংবদের সংখ্যাও অগণিত। এখন আবার তদুপরি তিনি জনাদেশের অনুমোদনও পাইয়া গেলেন। ফলে তাঁহার সঙ্গে মোকাবিলা করা নয়াদিল্লির পক্ষে রীতিমত কঠিনই হইবে, বিশেষত চিন ও পাকিস্তানের মতো প্রতিদ্বন্দ্বীদের সহিত প্রতিযোগিতায়। তবে গায়ুম বা ইয়ামিনের ইসলামপন্থা যদি গোঁড়া রাজনৈতিক ইসলামের পৃষ্ঠপোষক হয়, তবে আজ-না-হউক কাল চিন ও পাকিস্তান উভয়কেই সতর্ক হইতে হইবে। পাকিস্তান যেমন তালিবানি মোল্লাদের আক্রমণে জর্জরিত, চিনের শিনজিয়াং প্রদেশও তেমনই জেহাদি ইসলামের নূতন বিস্ফোরণকেন্দ্র হইয়া উঠিতেছে। নয়াদিল্লিকে কিস্তিমাত করিতে গিয়া কাচের ঘরে নিজেদের বাস করার এই বাস্তব আশা করা যায় তাহারা স্মরণে রাখিবে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.