করহীন বাজেট, মাঝপথে করের বোঝা
রাজ্যের গত বাজেটে করহীন প্রস্তাব পেশ করে হাততালি কুড়িয়েছিলেন ত্রিপুরার অর্থমন্ত্রী বাদল চৌধুরী। তবে শেষ রক্ষা হল না। মাস ছয়েকের মধ্যে রাজ্যের বামফ্রন্ট সরকার তথাকথিত বিকল্প অর্থনীতির পথ ছেড়ে, বেহাল আর্থিক পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রায় সর্বক্ষেত্রেই কর বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে মনমোহন-চিদম্বরমের চিহ্নিত পথেই পা বাড়ালেন। সিদ্ধান্ত হয়েছে কয়েকদিন আগেই। চলতি মাসেই প্রয়োজনীয় সরকারি বিজ্ঞপ্তি জারিও হতে চলেছে। আর্থিক বছরের মাঝখানে কেন এই পথ বদল? রাজ্যের অর্থমন্ত্রী বাদল চৌধুরীর সাফাই, ‘‘করহীন বাজেট পেশ করা হয়েছিল ঠিকই। তবে রাজস্ব বাড়ানোর উদ্দেশে কোনও কোনও ক্ষেত্রে কর বসানো জরুরি হয়ে উঠেছে।’’ বাদলবাবুর ব্যাখ্যা, “‘কোনও কোনও ক্ষেত্রে কর না বাড়ালে কেন্দ্রের নিয়ম অনুসারে অনুদান কমে যায়। ফলে সে সব ক্ষেত্রে কর বাড়াতেই হল।” চতুর্দশ অর্থ কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে রাজস্ব বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সরকারের এই প্রয়াসকেই তুলে ধরা হল।
দেশি-বিদেশি মদ ছাড়াও তামাক, সিগারেট, গুটখা-সহ যাবতীয় তামাকজাত পণ্যের উপর কর অনেকটাই বাড়ছে। বর্তমানে এ ধরনের পণ্যের ক্ষেত্রে ১৩.৫ শতাংশ কর প্রযোজ্য। বেড়ে হবে ৩০--৩৫ শতাংশ। এ ছাড়া ভ্যাটের আওতাধীন সব জিনিসের উপরেই কর বাড়ছে ১ শতাংশ হারে। ফলে রাজ্যে প্রায় প্রতিটি জিনিসের নতুন করে দাম যে বাড়বে তা বলা বাহুল্য। একই সঙ্গে বাড়ছে বৃত্তি করও। বাদল চৌধুরীর কথায়, ‘‘ভ্যাটের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত প্রতিটি দফতরকেই নিয়ম অনুসারে রাজস্ব বাড়ানোর নোটিশ দিতে বলা হয়েছে।’’ তার পরেই বর্ধিত কর আরোপ হবে। নভেম্বরের মধ্যেই সরকারি বিজ্ঞপ্তি জারি করার পর্বটি শেষ হয়ে যাবে বলে মন্ত্রী জানান।  অর্থমন্ত্রীর আশা, ‘‘ভ্যাট-সহ নানা ক্ষেত্রে কর বৃদ্ধির ফলে রাজ্য সরকারের রাজস্ব সংগ্রহ বাড়বে ৭০ কোটি।’’
বাজেট পর্বের বাইরে, আর্থিক বছরের মাঝখানে দাঁড়িয়ে কর বৃদ্ধির বিষয়টি রাজ্য সরকারের ‘আর্থিক ব্যবস্থাপনার’ ক্ষেত্রে ‘চূড়ান্ত ব্যর্থতা’ হিসেবেই দেখছেন প্রাক্তন বিরোধীদল নেতা, কংগ্রেসের রতনলাল নাথ। তাঁর কথায়, ফিসকাল রেসপনসিবিলিটি অ্যান্ড বাজেট ম্যানেজমেন্ট (এফআরবিএম) আইন, ২০০৫ অনুসারে বাদলবাবুর দেওয়া ২০১২-১৩ আর্থিক বছরের চতুর্থ ত্রৈমাসিক ‘রিভিউ রিপোর্ট’ অনুযায়ী, বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছিল ১৪৯ কোটি টাকা। ব্যয় ধরা হয়েছিল ৮১১৯ কোটি টাকা। কিন্তু কেন্দ্রের বরাদ্দ মিলে সরকারের কাছে টাকা আসে ৮৪৭৬ কোটি টাকা। কিন্তু ওই আর্থিক বছরে খরচ হয়েছিল ৬৭০৬ কোটি। উদ্বৃত্ত থেকে যায় ১৫৭৫ কোটি টাকা।
রতনবাবুর প্রশ্ন, এই উদ্বৃত্ত টাকা কোথায় গেল? তাঁর বক্তব্য: এ ছাড়া, রাজ্যে বিত্তবানদের করফাঁকির পরিমাণ ক্রমশই বাড়ছে। ২০০৯-২০১০, ১০-১১, ১২-১৩ আর্থিক বছরে করফাঁকিদাতার (সংস্থা এবং ব্যক্তির হিসেবে) সংখ্যা যথাক্রমে ১৫৯৮, ১৮৭১, ২০২১ এবং ২০৪২। এই পরিসংখ্যান দিয়ে রতনবাবুর অভিযোগ, ‘‘রাজ্য সরকার কর ফাঁকিদাতাদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা না নিয়ে সাধারণ মানুষের উপর করের বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছে।’’ উল্লেখ্য, এ বছর রাজ্যের ৯৪১৬ কোটির বাজেটে প্রস্তাবিত রাজস্ব বৃদ্ধি ধরা হয়েছে ১৪০৬ কোটি টাকা। প্রধান বিরোধী দল, কংগ্রেসের বক্তব্য, ত্রিপুরায় ‘তুঘলকি’ পদ্ধিতে কর চাপানো হচ্ছে। প্রশ্ন উঠেছে, তা-ও বাজেট বরাদ্দের অধিকাংশটাই কেন্দ্রীয় অনুদানের উপর নির্ভরশীল কেন? সমস্ত করই প্রত্যাহারের দাবিতে প্রদেশ কংগ্রেস ৫ ডিসেম্বর আইন অমান্য আন্দোলনের ডাক দিয়েছে বলে জানান মুখপাত্র অশোক সিনহা। কর বৃদ্ধির সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছে রাজ্য তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্বও। ত্রিপুরায় দলের চেয়ারম্যান রতন চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘নিয়ন্ত্রণহীন বাজারে মূল্যবৃদ্ধির জেরে নাভিশ্বাস উঠছে সাধারণ মানুষের। তার উপর, অগণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে রাজ্য সরকার নজিরবিহীন ভাবে ভ্যাট এবং পেশাকর বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গরিব, সাধারণ মানুষের আর্থিক যন্ত্রণা এতে আরও বাড়বে।’’ অবশ্য রাজ্য সিপিএমের মুখপাত্র গৌতম দাস মনে করেন, ‘‘রাজস্ব বাড়ানোর ক্ষেত্রে রাজ্যের সিদ্ধান্তে সাধারণ মানুষের উপর তেমন প্রভাব পড়বে না। মূলত, নেশার জিনিসের উপরেই কর বেশি করে বাড়ানো হয়েছে। অন্য ক্ষেত্রে খুবই কম।’’


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.