বাস বেশি চললে লোকসানের পাল্লা বাড়ছে। কারণ, এক দিকে ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি সত্ত্বেও ভাড়া না বাড়ানো। অন্য দিকে, পুরনো বাসের সংখ্যাবৃদ্ধি। সব মিলিয়ে ফাঁপরে পড়েছেন সিএসটিসি কর্তৃপক্ষ। মুশকিল আসানের পথ খুঁজতে
চলতি সপ্তাহে নিগমের পরিচালনমণ্ডলীর বৈঠকে আলোচনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বাস পথে নামালে কিলোমিটার পিছু নিগমের আয় ২৮ টাকার মতো। ব্যয় প্রায় ৭০ টাকা। কর্তৃপক্ষের দাবি, এই ব্যয়ের বড় অংশ যায় কর্মীদের বেতন দিতে। তবে, ডিজেলের বাড়তি দামের জন্য ফাঁপরে পড়তে হচ্ছে বলে স্বীকার করেছেন নিগমের ম্যানেজিং ডিরেক্টর প্রসন্নকুমার মণ্ডল। একই সঙ্গে অবশ্য তিনি দাবি করেছেন, “মাঝে নিগমের পরিস্থিতি এমন হয়েছিল যে বাস চালানোই দায় হয়ে উঠছিল। এখন পরিস্থিতির সামান্য উন্নতি হয়েছে।”
নিগমের ৭৫৫টি বাসের অর্ধেকও চলছে না। তেল কিনতে মাসে এখন নিগমের খরচ হচ্ছে সাড়ে তিন কোটি টাকা। ২০১১-তে নয়া সরকার রাজ্যে দায়িত্ব নেওয়ার সময়ে নিগমের মাসিক গড় আয় ছিল প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা। এখন তা কমে মাসে হয়েছে ৪ কোটি ৬৮ লক্ষ। বেশিরভাগ বাস পুরনো। নিগমের আইএনটিইউসি সমথির্র্ত কর্মিসমিতির সম্পাদক সমীর মারিক বলেন, “এক লিটার ডিজেলে পাঁচ কিলোমিটারও চলছে না। জোড়াতালি দিয়ে মেরামতি চলছে অথর্ব বাসের। ফের মুখ থুবড়ে পড়ছে সে সব। সব মিলিয়ে বাস বেশি চললে লোকসানের বহর বাড়ছে।”
একই বক্তব্য সিটু সমর্থিত কর্মিসমিতির সাধারণ সম্পাদক রামপ্রসাদ সেনগুপ্তর। তিনি বলেন, “২০১১-তে প্রতিদিন গড়ে নিগমের ৫০০ বাস রাস্তায় নামত। এখন সংখ্যাটা কমে হয়েছে ৩১০-এর মতো। কলকাতার সঙ্গে বিভিন্ন
জেলার সংযোগকারী দূরপাল্লার বাস এই দু’বছরে ১৫০ থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ৪৫-এ।”
কেন এই হাল? প্রসন্নবাবুর কথায়, “আমাদের বেশির ভাগ বাস পুরনো। সেগুলি চালাতে তেল বেশি লাগে। কোনও কোনও দিন রাস্তায় বার হওয়া মোট বাসের প্রায় ২০ শতাংশ বসে যাচ্ছে।” এই অবস্থায় জেএনএনইউআরএমে যে ৬৩২টি নতুন বাস কেনা হবে, সেগুলি শীঘ্র নামানোর চেষ্টা করছেন নিগম কর্তারা। এমডি-র কথায়, “সে ক্ষেত্রে আয় একটু বাড়বে। নতুন বাস কিনতে খরচ হবে প্রায় সাড়ে ৩০০ কোটি টাকা।” পরিবহণসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “সমস্যাগুলো অনেক দিনের। যাত্রীদের প্রতিও তো সিএসটিসি-র কর্তব্য আছে। খরচ হলেও তাই
বাস চালাতে হবে। আশা করছি
নতুন বাস এলে পরিস্থিতি কিছুটা ইতিবাচক হবে।”
কিন্তু ডিপোয় ডিপোয় অচল অথবা পুরনো বাসের সংখ্যা তো বেড়ে যাচ্ছে। প্রসন্নবাবু বলেন, “শীঘ্রই প্রায় ২৫০ বাস নিলামে বিক্রির পরিকল্পনা হয়েছে। পরিচালনমণ্ডলীর আগামী বৈঠকে এ নিয়ে সবিস্তার আলোচনা হবে। সিএসটিসি সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় সরকারের একটি সংস্থাকে প্রথম পর্যায়ে ১৬০টি ও দ্বিতীয় পর্যায়ে ৮৪টি পুরনো বাস বিক্রির দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। প্রথা মেনে শীঘ্রই তারা বিজ্ঞপ্তি দেবে। এর ফলে অন্তত তিন কোটি টাকা আয় হবে। এর পরে আরও কিছু বাস নিলামে বিক্রি করা হবে। গত বছর ২১৮টি পুরনো বাস বিক্রি করে নিগমের আয় হয়েছিল ৩ কোটি টাকার কিছু বেশি।
সিএসটিসি-র বিভিন্ন ডিপোয় অচল বাসের পাশাপাশি বছরের পর বছর ধরে পড়ে রয়েছে প্রচুর ইঞ্জিন ও যন্ত্রাংশ। এ কথা স্বীকার করে এমডি বলেন, “ইঞ্জিনিয়ারদের বলেছি, এগুলির তালিকা তৈরি করতে। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ১২৫টি ইঞ্জিন পাইকপাড়ার ডিপোয় এনে একসঙ্গে রাখা হবে। দরপত্র ডেকে এগুলো বিক্রি করার পরিকল্পনা রয়েছে। শুধু অচল ইঞ্জিন বিক্রি করেই ৪০ লক্ষ টাকা মিলবে।”
রাস্তা থেকে সরকারি-বেসরকারি বাস উধাও হয়ে যাওয়ার দায় পূর্বতন বাম সরকারের উপরে চাপিয়ে দায় সেরেছেন রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র। তাঁর বক্তব্য, “বাসের এই হাল দীর্ঘ দিনের অপরিকল্পনার মাসুল। আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি। নতুন কিছু বাস সরকারি নিগমগুলোকে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। সেগুলি এলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে।” |