বীরভূমে সমীক্ষা
ফোন, টিভি থাকলেও শৌচাগার নেই
ত পরিমাণ মানুষ মোবাইল ফোন ব্যাবহার করে, সেই পরিমাণ শৌচাগারও নেই। দারিদ্রসীমার নীচে বসবাসকারী পরিবার তো বটেই, গ্রামের অনেকের বাড়িতে মোটরবাইক, টিভি প্রভৃতি থাকলেও শৌচাগার নেই। এমনই তথ্য উঠে এসেছে জেলা প্রশাসনের করা সমীক্ষায়। অথচ বেশ কয়েক বছর ধরে গ্রাম-শহরের প্রতিটি বাড়িতে শৌচাগার নির্মাণের জন্য নানা ভাবে অভিযান চালিয়েছে জেলা প্রশাসন।
আজ, মঙ্গলবার জাতীয় শৌচাগার দিবস। নির্মল ভারত অভিযানের লক্ষ্যে পৌঁছনোর জন্য সোমবার রাজ্য সরকার বীরভূম জেলা পরিষদে নির্দেশপত্র পাঠিয়েছেন বলে জানান, জেলা পরিষদের র্কাযনির্বাহী অধিকারিক তথা অতিরিক্ত জেলাশাসক বিধান রায়। তিনি বলেন, “কয়েকদিন আগেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইলামবাজারে ঘোষণা করেছেন ২০১৭ সালের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গকে নির্মল রাজ্যে পরিণত করতে হবে। সেই মতো জেলা প্রশাসন শৌচাগার নির্মাণে উদ্যোগী হয়েছে। গত দু বছর আগে ইলামবাজার ব্লকের ৭টি পঞ্চায়েত নির্মল পঞ্চায়েত বলে ঘোষিত হয়েছে। ওই এলাকাটি প্রাক্তন জেলা পরিষদের সভাধিপতি অন্নপূর্ণা মুখোপাধ্যায়ের। এ বছর ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে জেলার ২০টি পঞ্চায়তকে নির্মল পঞ্চায়েত করার প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।”
মোবাইল, টিভি, ফ্রিজ থাকলেও অনেকের বাড়িতে শৌচাগার নেই, তা খোঁজ নিয়ে জানাও গিয়েছে। নলহাটি ২ ব্লকের হায়দারপুরের বাসিন্দা মইনুদ্দিন শেখ ও নাজিম শেখরাও বিত্তবান। টিভি, ফ্রিজ, পাকা ধানের গোলা রয়েছে। কিন্তু তাঁদের বাড়িতে শৌচাগার নেই। প্রশ্ন করতেই তাঁরা বললেন, “এ ব্যাপারটা ভাবিনি। এ বার ভাবব।” সিউড়ি পুরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা শীলা বাউড়ি পরিচারিকার কাজ করেন। তাঁর খড়ের ছাউনি বাড়িতে টিভি রয়েছে। ওই পাড়ায় অন্তত ২০টি পরিবারে শৌচাগার নেই। তাঁরা জানেনই না এ ক্ষেত্রে সরকারি সাহায্য পাওয়া যায়। পুরপ্রধান উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায় বলেন, “আমাদের চূড়ান্ত ব্যর্থতা। ঘরে ঘরে যাতে শৌচাগার হয়, তার জন্য উদ্যোগী হব।” শুধু সাধারণ মানুষ নন, পঞ্চায়েত প্রধানের বাড়িতেও শৌচাগার নেই। মল্লারপুর ১ পঞ্চায়েতের প্রধান রুবি মাড্ডি। তাঁর স্বামী লক্ষ্মীরাম মাড্ডি খেতমজুরের কাজ করেন। ঋণ করে মাস দেড়েক আগে মোটরবাইক কিনেছেন। টিভি অনেক দিন থেকেই আছে। দু’টি মোবাইল ফোন রয়েছে। প্রশ্ন করতেই হকচকিয়ে বলেন, “এতদিন গুরুত্ব দিইনি।” ময়ূরেশ্বর ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, তৃণমূলের ধীরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বিষয়টি নিয়ে আমাদের অনেক আগে ভাবা উচিত ছিল। শৌচাগার নির্মাণের জন্য এ বার উঠে পড়ে লাগব।” প্রসঙ্গত, তিনি চার বারের ওই পঞ্চায়েতের কংগ্রেসের প্রধান ছিলেন।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১২ সালের এপ্রিল থেকে নির্মল ভারত অভিযান প্রকল্প ঘোষিত হয়। তার আগে ২০০৪ সালের মে মাস থেকে সার্বিক স্বাস্থ্যবিধান কর্মসূচি ঘোষিত হয়। সেই সময় থেকে এখনও পর্যন্ত এপিএল তালিকাভুক্ত পরিবারদের মধ্যে ১,৯৫,৯২৯ পাকা শৌচাগার নির্মাণ করা হয়েছে। যেখানে লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ২,৯২,৮৯৩টি। বিপিএল তালিকাভুক্ত পরিবারের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩,৩৮,৯৮৯টি। সেখানে এখনও পর্যন্ত ২,৯১,২৪৭টি পরিবার শৌচাগার নির্মাণ করেছে। একশো দিনের কাজের মধ্যে শৌচাগার নির্মাণকে যুক্ত করার কথা মুখ্যমন্ত্রী আগেই ঘোষণা করেছেন। তাতে দশ হাজার টাকা ব্যায়ে উন্নতমানের শৌচাগার নির্মাণ করার সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও এই জেলায় এখন তা সম্ভব হইনি বলে স্বীকার করে নিয়েছেন অতিরিক্ত জেলাশাসক বিধানবাবু।
বিধানবাবু জানিয়েছেন, জেলায় অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে ৩,৮১৬টি শৌচাগার নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ২,৫৬০টি নির্মিত হয়েছে। প্রতিটি প্রাথমিক স্কুলে শৌচাগার নির্মাণের প্রস্তাব নেওয়া হয়েছিল। লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫,৫১৭টি। সেখানে হয়েছে ৫,৮২৬টি। বিধানবাবু বলেন, “গ্রামাঞ্চলে শৌচাগার নির্মাণ এবং তার ব্যাবহারের ক্ষেত্রে পঞ্চায়তগুলিকে সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে।” কিন্তু পঞ্চায়েতগুলি কতটা কী করবে তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। মল্লারপুর ১ পঞ্চায়েতের তার উদাহরণ।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.