নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য মন্ত্রিসভা গড়ে ফেললেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর ফর্মুলা অনুযায়ী, এই সর্বদলীয় সরকারই বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন পরিচালনা করবে। তবে খালেদা জিয়ার দল বিএনপি এই সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তাতে যোগ না-দেওয়ার কথাই ঘোষণা করেছে। সরকারের একতরফা সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানাতে আগামিকাল রাষ্ট্রপতি মহম্মদ আব্দুল হামিদের দ্বারস্থ হচ্ছেন খালেদা।
আওয়ামি লিগ নেতা ওবায়দুল কাদের যদিও দাবি করেছেন, বিএনপি-কে সরকারে আনার জন্য নেপথ্যে কথাবার্তা চলছে। এই মন্ত্রিসভায় বিএনপি-র জন্য অন্তত ৭-৮টি পদ খালি রাখা হয়েছে। কিন্তু বিএনপি-র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভি আনন্দবাজারকে বলেছেন, “নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের জন্য বিএনপি-র আন্দোলন চলবে।” আপাতত হরতাল, অবরোধ, আইন অমান্য ছাড়া দাবি আদায়ের অন্য রাস্তা তাঁরা দেখছেন না। কোন সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে, তা নিয়েই রাজনৈতিক সঙ্কট তীব্র হয়েছে।
বাংলাদেশে নির্বাচন পরিচালনার জন্য নিজের নেতৃত্বে একটি সর্বদলীয় সরকারের প্রস্তাব দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অন্য দিকে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন চেয়ে আন্দোলনে নেমেছে বিরোধী বিএনপি-জামাতে ইসলামি জোট। ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার জন্য প্রধানমন্ত্রী হাসিনা টেলিফোনে আলোচনায় ডেকেছিলেন বিরোধী নেত্রী খালেদা জিয়াকে। কিন্তু তা নাকচ করে টানা হরতালের পথে নেমেছে খালেদার দল বিএনপি। আওয়ামি লিগের দাবি, জানুয়ারিতে এই সরকারের মেয়াদ শেষ না-হওয়া পর্যন্ত হরতাল-অবরোধে দেশ অচল করে দেওয়ার কৌশল নিয়েছে বিএনপি। সে জন্য তাদের ছাড়াই অন্তর্বর্তী সর্বদলীয় সরকার গড়া হচ্ছে। অবশ্য মত পাল্টে তারা এই সরকারে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে তাদের নেওয়া হবে।
সর্বদলীয় সরকারের মন্ত্রিসভায় আওয়ামি লিগ ছাড়াও এরশাদের জাতীয় পার্টি ও বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাংসদরা যোগ দিয়েছেন। এ দিন যে নতুন ছয় পূর্ণ মন্ত্রী শপথ নিয়েছেন, তাতে আওয়ামি লিগের দুই কেন্দ্রীয় নেতা আমির হোসেন আমু ও তোফায়েল আহমেদ ছাড়া রয়েছেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি, ঢাকার সাংসদ রাশেদ খান মেনন। এ ছাড়া রয়েছেন, প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি হুসেইন মহম্মদ এরশাদের স্ত্রী রওশন এরশাদ-সহ জাতীয় পার্টির তিন সাংসদ। প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন জাতীয় পার্টির দু’জন। কয়েক দিন আগে মন্ত্রিসভার সব সদস্য সর্বদলীয় সরকারের সমর্থনে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পদত্যাপত্র পেশ করেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব হুসেন ভুঁইঞা জানিয়েছেন, এই নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভায় কারা বাদ যাবেন তা মঙ্গলবার জানা যাবে। আগের যে সব মন্ত্রী নতুন মন্ত্রিসভায় থাকবেন, তাঁদের ছাড়া বাকিদের পদত্যাগপত্র রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।
বিএনপি-র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভি আনন্দবাজারকে বলেন, “এই সরকারের সব সদস্যই শাসক মহাজোটের। তাই এদের নিরপেক্ষতা নিয়ে মানুষের যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তী সরকারের দাবিতে বিএনপি যে আন্দোলন করছে, এই সরকারে যোগ দিলে তার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা হবে।” রিজভি আরও বলেন, “আওয়ামি লিগ যে বিরোধীদের বাদ দিয়ে একতরফা নির্বাচনে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকতে চায়, সে কথা তাঁরা বার বার বলেছেন। এমন একটি অন্তর্বর্তী সরকার গড়ার পরে সেই আশঙ্কাই জোরদার হল।” হাসিনার এই পদক্ষেপের পরে আলোচনা শুরু করা কার্যত অসম্ভব হয়ে গেল বলেও জানিয়েছেন রিজভি।
জাতীয় পার্টির নেতা এরশাদ অবশ্য এ দিনই শাসক মহাজোট ছেড়ে পৃথক ভাবে নির্বাচন করার ঘোষণা করেছেন। রাজনৈতিক সঙ্কটের জন্য তিনি হাসিনা ও খালেদা উভয় নেত্রীর একগুঁয়ে মনোভাবকেই দায়ী করেছেন। বিএনপিকে অন্তর্বর্তী সরকারে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়ে এরশাদ বলেন, ‘‘হরতাল মানুষের ক্ষতি করে। আপনারা নির্বাচনের প্রক্রিয়ায় যোগ দিন। কারচুপি হলে একসঙ্গে ভোট-বর্জন করব।’’ বিএনপি নেতা রিজভি অবশ্য এরশাদের আহ্বানকে গুরুত্ব না দিয়ে বলেছেন, ‘‘উনি দু’মুখো নেতা। কখন যে কী বলেন, ঠিক নেই। সেনা-শাসক হিসেবে তাঁর গণতন্ত্র-বিরোধী ভূমিকা দেশবাসী জানে।’’
|