শীতের মরসুম শুরু মানেই কোচবিহারে যাত্রাগান এবং মেলার আসর। জেলার বিভিন্ন গ্রাম, জনপদ সহ সর্বত্রই যাত্রা এবং মেলার ছোট-মাঝারি আয়োজন গোটা শীতকাল জুড়েই লেগে থাকে। যদিও স্থানীয়দের একাংশের অভিযোগ, সম্প্রতি যাত্রা বা মেলায় শুরু হয়েছে জুয়ার অবাধ আসর। দিনহাটা মহকুমার নয়ারহাট, নাজিরহাট, শুকারুর কুঠি, চৌধুরীহাটের মতো এলাকায় জুয়া কারবারিদের দৌরাত্ম্য সর্বাধিক বলে অভিযোগ। মাথাভাঙা, তুফানগঞ্জ, মেখলিগঞ্জের বেশ কিছু এলাকাতেও নিয়মিত জুয়ার আসর বসছে বলে পুলিশের কাছে অভিযোগ এসেছে।
বাসিন্দাদের নালিশ, কোতোয়ালি থানা এলাকার ডাউয়াগুড়ি, বাবুরহাট ও লাগোয়া কয়েকটি এলাকাতেও জুয়ার আসর দৈনন্দিন রুটিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোচবিহারের জেলাশাসক মোহন গাঁধী বলেন, “দিনহাটার কিছু এলাকায় জুয়া রমরমা নিয়ে অভিযোগ আসছে। মহকুমা প্রশাসনকে বিষয়টি দেখতে বলেছি। পুলিশকেও বলেছি।”
এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, কালীপুজোর পর থেকে জানুয়ারি মাস পর্যন্ত জেলা জুড়ে জুয়ার রমরমা বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ, ওই সময়ে ধান কাটা হয়ে যায়। কৃষক থেকে কৃষি শ্রমিক সকলের হাতেই পর্যাপ্ত টাকা থাকে। সে কারণেই যাত্রাগান আর মেলার আসর বসানো সহজ। আর ওই আসরে জুয়ার হাতছানিতে সাধারণ বাসিন্দারাও সহজেই প্রভাবিত হন বলে তাঁদের অভিযোগ।
কী ভাবে চলে জুয়ার আসর?
জানা যায়, গ্রামে কোনও অখ্যাত যাত্রাদলকে ডেকে এনে নামমাত্র দামে টিকিট বিক্রি করেন। যাত্রা দেখতে ভিড় করাদের দ্বিগুণ টাকা রোজগারের প্রলোভন দেখিয়ে জুয়ার আসরে টেনে আনা হয়। আবার কোথাও যাত্রার পরিবর্তে মেলা বসিয়ে তাস খেলা, চাকতির মধ্যে নম্বর লিখে ঘুরিয়ে নানা রকমের খেলার নামে জুয়ার কারবার চলছে বলে অভিযোগ। পাশাপাশি কিছু বাড়িতে বা গুদামেও নিয়মিত জুয়ার আসর বসছে বলে অভিযোগ। শুক্রবার এক আসর থেকে মাথাভাঙা ১ ব্লকের যুব কল্যাণ আধিকারিককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। একই সঙ্গে ওই আসর থেকে ধরা পড়েছিলেন ওই এলাকার ৫ জন ব্যবসায়ীও। দিনহাটার এক বাসিন্দা তথা ভারত বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির সহকারী সম্পাদক দীপ্তিমান সেনগুপ্ত বলেন, “শীতে সাধারণ বাসিন্দাদের কাটা ধান বিক্রির টাকার লোভেই সক্রিয় হন জুয়ার কারবারিরা। দিনহাটার ক্ষেত্রে অবশ্য বহু ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকায় যাত্রার আয়োজন হয়। লাগোয়া বাংলাদেশি ছিটে জুয়ার আসর বসানো হয় বলে পুলিশেরও কিছু করার থাকে না।” জেলা পুলিশ সুপার অনুপ জায়সবাল বলেন, “কালীপুজো থেকেই জুয়ার কারবার বন্ধে অভিযান শুরু হয়েছে। প্রতিটি থানাকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছি। জেলাজুড়ে জুয়ার আসরে অভিযান চালিয়ে দু’শোরও বেশি অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে।” |