এক পুলিশ অফিসারের বাড়িতে ভাঙচুর, লুঠপাট চালানো হয়েছে। তবে সেই ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পরেও পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করেনি। পুলিশ অফিসারের পরিবারের তরফেও এই বিষয়ে কোনও অভিযোগ করা হয়নি। জেলার পুলিশ সুপার কল্যাণ মুখোপাধ্যায় বলেন, “ওই অফিসারের উপরে এলাকার কিছু মানুষের ক্ষোভ রয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে আমরা জানতে পেরেছি। গোটা বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি।”
শনিবার দুপুরে মালদহের ইংরেজবাজারের মাদিয়া গ্রামে ইংরেজবাজার থানার সহকারী সাব ইন্সপেক্টর ওই অফিসারের বাড়িতে হামলা হয়। ওই অফিসারের আরও দুই ভাইও পুলিশকর্মী। পুলিশ জানিয়েছে, হামলাকারীরা ওই বাড়ি থেকে গয়না, লক্ষাধিক নগদ টাকা, কাঁসার বাসনপত্র লুঠ করে নিয়ে গিয়েছে। আসবাবপত্র, টিভি, সাইকেল বাড়ির বাইরে বার করে আগুন লাগিয়ে ধরিয়ে দেওয়া হয়। রবিবার দুপুরে রাজ্যের পর্যটন মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু চৌধুরী মাদিয়া গ্রামে যান। মন্ত্রী বলেন, “কিছু সমাজবিরোধী ওই পুলিশ অফিসারের বাড়িতে লুঠ করে আগুন ধরায়। পুলিশ সুপারকে বলেছি অভিযুক্তদের শনাক্ত করে গ্রেফতার করতে।” ওই পুলিশ অফিসারের ভাই সরোজ সিংহ বলেন, “আমার মা থানায় অভিযোগ দায়ের করবেন। পরিবারের লোকজন এবং ঘনিষ্ঠদের সঙ্গে আলোচলা চলেছে।”
এদিকে ফের হামলার আশঙ্কায় ওই পাড়ায় পুলিশ ক্যাম্প বসানো হয়েছে। এলাকায় পুলিশ ও র্যাফ টহল দিচ্ছে। জেলা পুলিশ সুপার বলেন, “পরিস্থিতির উপর পুলিশ নজর রেখেছে। তদন্ত শুরু হয়েছে।” পুলিশ সূত্রে খবর, ঘটনার পর পুলিশ সুপার ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ঘটনাস্থলে যান। গ্রামের কিছু বাসিন্দা ওই পুলিশ অফিসারকে সাসপেন্ড করার দাবি জানিয়ে পুলিশ সুপারকে বিক্ষোভ দেখান। পরে জেলা পুলিশ সুপার ওই অফিসারকে সাসপেন্ডে করার আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
তিন ভাই পুলিশে কাজ করেন বলে এলাকার বাসিন্দারা পরিবারটিকে সমীহ করে চলেন। পুলিশ সূত্রেই জানা গিয়েছে, তারই সুযোগ ওই অফিসার নিয়েছেন বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ। শনিবার ওই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। ওই অফিসার এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে তাঁর ভাই কলকাতা পুলিশের এক কর্মী বলেন, “দাদার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ ভিত্তিহীন। দাদা গ্রামের বাড়িতেই থাকেন না। মালদহে শহরে থাকেন। সবসময় নিজের ডিউটি নিয়েই থাকেন। উদ্দেশ্যেপ্রণোদিতভাবে সব করা হয়েছে।” এদিন দুপুরে সিংহ পাড়ায় ওই পুলিশ অফিসারের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির সামনে আগুনে পোড়া চারটি সাইকেল, টিভি, খাট, বাসনপত্র, জামাকাপড় পড়ে রয়েছে। গাড়িও ভাঙচুর করা হয়েছে। বাড়ির ভিতরে আটটি ঘরে সমস্ত জিনিসপত্র লন্ডভন্ড। অনুপবাবুর বৃদ্ধা মা ভানুরামী সিংহ জানান, প্রথমে বাড়িতে চড়াও হয়ে লোকজন তাঁর ছেলেকে খোঁজে। তিনি বলেন, “তার পরে বাড়িতে লুঠপাট চালায়। জিনিসপত্র বাইরে ফেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। কয়েকজন আমাকে পুড়িয়ে মারার কথা বলেন। ভয়ে ছোট দুই নাতনিকে নিয়ে পাশে ভাইয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলাম। না পালালে হয়ত পুড়িয়ে মারত।” |