শহরের উপকণ্ঠে ফুলবাড়ি এলাকায় নির্মীয়মাণ মুখ্যমন্ত্রীর শাখা সচিবালয় চত্বর থেকে সরানো ২৪টি পরিবার অভিযোগ করছেন, তাঁদের ‘ফুটবল’-এর মতো ক্রমাগত এক জায়গা থেকে অন্যত্র ঠেলাঠেলি করা হচ্ছে। এই পরিবারগুলিকে পুনর্বাসনের জন্য পাট্টা বিলি করে নগদ টাকা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে পুনর্বাসন দেওয়া সম্ভব হয়নি।
পরিবারগুলির অভিযোগ, প্রথমে তাঁদের শালুগাড়া পাঠানো হয়। সেখানে বাসিন্দাদের একাংশের বাধায় তাঁরা ফের ফুলবাড়িতে ফেরেন। পর দিন ওই জায়গার মালিকানা দাবি করে কার্যত দখল নেয় সেনা বাহিনী। রবিবার ফের তাঁদের থাকার জন্য অস্থায়ী ভাবে দু’টি জায়গার ব্যবস্থা করে সেখানে পাঠানো হয়। সেখানেও স্থায়ী ভাবে ক’দিন থাকতে পারবেন, তা ওই পরিবারগুলির সদস্যদের কাছে স্পষ্ট নয়। তাই পরিবারগুলির তরফে দুলাল আনসারি, জামাল মহম্মদ, আবুল হোসেনের মতো বাসিন্দাদের অভিযোগ, “আমরা কী ফুটবল না কি। এক বার লাথি মেরে এক দিকে পাঠানো হচ্ছে। সেখান থেকে ফেরানো হচ্ছে। ফের অন্য জায়গায় পাঠানো হচ্ছে। আবার সেখান থেকে কোথায় ঠেলা হবে কে জানে?” পরিবারগুলির ক্ষোভের বিষয়টি জানেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবও। তিনি বলেন, “ওই বাসিন্দারা কোনও কথা বলতেই পারেন। একটা জায়গায় তাঁদের পুনর্বাসন দেওয়া হয়েছিল। সেই জায়গা নিয়ে সমস্যা হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি তাদের যাতে সঠিক ভাবে পুনর্বাসন দেওয়া যায়।” |
প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য অবশ্য অভিযোগ করেছেন, দায়সারা পরিকল্পনার ফলেই দরিদ্র মানুষের হয়রানি হচ্ছে। অশোকবাবুর বক্তব্য, “সব কিছু একটা পরিকল্পনা নিয়ে এগোতে হয়। রাতারাতি কিছু করা যায় না। তাই সস্তায় বাজিমাত করার চেষ্টা কখনও কাম্য নয়।” অশোকবাবুর প্রশ্ন, “কোথায় পুনর্বাসন দেওয়া হবে, তা ঠিক না করেই কেন তাদের ঘরবাড়ি ভেঙে সরানোর জন্য তাড়াহুড়ো করা হল?” একই সুরে সিপিএমের দার্জিলিং জেলা সিপিএমের কার্যনির্বাহী সম্পাদক জীবেশ সরকার বলেছেন, “গরিব মানুষকে এ ভাবে নানা জায়গায় নিয়ে গিয়ে হয়রান করা কত দিন চলবে?”
গত বুধবার শালুগাড়ার বিকাশ নগর এলাকায় তাদের পুনর্বাসন দিয়ে জমির পাট্টাও হাতে তুলে দিয়েছিলেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী। অথচ ঘরবাড়ি ভেঙে সেই জায়গায় বসতে গেলে স্থানীয় বাসিন্দারা বাধা দেন। অনেকে জমির মালিকানা দাবি করেছেন। তা ছাড়া খেলার মাঠ নষ্ট করতে দিতে রাজি নন বাসিন্দাদের একাংশ। বাধ্য হয়ে উচ্ছেদ হওয়া বাসিন্দাদের ফের ফিরে এসে খোলা আকাশের নীচে রাত কাটাতে হয়। প্রশাসনিক কর্তা, বিকাশনগর এলাকার বাসিন্দাদের নিয়ে বৈঠক করে মন্ত্রী জানান, সমীক্ষা করে দেখা হবে জমি কার। প্রশাসনের কাছে নথি রয়েছে। এর পরেই সেখানে বাসিন্দাদের পুনর্বাসন দেওয়া যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। বিকাশনগরের জমি নিয়ে গোলমালের আশঙ্কায় সেখানে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। অথচ শনিবার সেনাবাহিনী ওই জায়গা তাদের বলে দাবি করে। ওই দিন থেকে সেখানে সেনা জওয়ান মোতায়েন করাও হয়। সেনাবাহিনীর প্রতিনিধির সঙ্গে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বৈঠকে ঠিক হয় জমিটি কাদের তা নিয়ে যৌথ সমীক্ষা হবে।
এ দিন পরিবারগুলির একাংশকে রাজগঞ্জের চতুরাগছ জুনিয়র হাই স্কুলের কয়েকটি ঘরে নিয়ে যাওয়া হয়। অন্যদের পাঁচকেলগুড়ি এলাকায় স্বনির্ভর গোষ্ঠীর প্রশিক্ষণের জন্য তৈরি ভবনে রাখা হয়েছে। সেখানে গাদাগাদি করে থাকতে সমস্যা হচ্ছে বলে তারা অভিযোগ তুলেছেন। তা ছাড়া এখান থেকে স্থায়ী ভাবে তাঁদের কোথায় পুনর্বাসন দেওয়া হবে তা এখনও স্পষ্ট না হওয়ায় কচিকাঁচাদের নিয়ে শীতের মধ্যে বিপাকে পড়েছেন অনেকে। |