পাহাড়ে প্রাথমিক স্তরে লেপচা ভাষা পড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে নানা জটিলতা ও বিতর্ক দানা বাঁধতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করলেন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা সভাপতি বিমল গুরুঙ্গ। রবিবার কালিম্পঙে এক দলীয় সভায় মোর্চা সভাপতি জানিয়ে দেন, সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পাহাড়ের প্রাথমিক স্কুলে লেপচা ভাষায় পড়াশোনা চালু করানোর যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা কার্যকর করা নিয়ে নানা জটিলতা তৈরি হয়েছে। তা নিয়ে চলছে বিতর্কও। গুরুঙ্গের যুক্তি, “জিটিএ-র হাতে প্রাথমিক শিক্ষা দফতর হস্তান্তর করেছে রাজ্য সরকার। সে জন্য প্রাথমিকে লেপচা ভাষা চালুর বিষয়টি জিটিএ-র উপরেই নির্ভর করবে। এটা নিয়ে জিটিএ-র সঙ্গে আলোচনা না করলে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হওয়া জটিল হবে।”
এর পরে গুরুঙ্গের সংযোজন, “প্রাথমিকে লেপচা ভাষা চালু হলে পাহাড়ের ‘তামাঙ্গ’, ‘ভুটিয়া’ সহ অন্য সম্প্রদায়ের মানুষও তাঁদের ভাষা প্রাথমিকে পড়ানোর দাবি করলে বিতর্ক বাড়বে।” মোর্চা সূত্রের খবর, আসন্ন দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে এই নিয়ে আলোচনার উপরে জোর দেবে মোর্চা। সেই সঙ্গে জিটিএর কাজে কোনও রকম হস্তক্ষেপ না করা এবং বিভিন্ন দফতরের দায়িত্ব হস্তান্তর করার বিষয়েও দ্বিপাক্ষিক এবং ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে মোর্চার প্রতিনিধিরা জানাবেন বলে গুরুঙ্গ জানিয়েছেন। সরকারি সূত্রের খবর, রাজ্য সরকার পাহাড়ে প্রাথমিকে লেপচা ভাষা চালুর সিদ্ধান্ত নিলেও তা জিটিএ-এর মাধ্যমে করবে। রাজ্য সরকারের একজন শীর্ষ কর্তা জানান, দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে সব বিষয়েই আলোচনা হবে। |
জিটিএ-র অস্থায়ী কর্মীদের স্থায়ীকরণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাও একমাত্র জিটিএ-র হাতে রয়েছে বলে গুরুঙ্গ দাবি করেছেন। সম্প্রতি বেশ কিছু অস্থায়ী কর্মী তৃণমূল প্রভাবিত দার্জিলিং হিমালয়ান কর্মচারী সংগঠনে যোগ দিয়েছেন। ঘটনাচক্রে এদিনই, সংগঠনের প্রতিনিধিরা শিলিগুড়িতে এসে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবের সঙ্গে দেখা করেছেন। গৌতমবাবু বলেন, “ওই কর্মীরা স্থায়ীকরণের দাবি জানিয়েছেন। দ্রুত তাঁদের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করানোর ব্যবস্থা করব।”
এদিন দুপুরে কালিম্পঙের সভায় গুরুঙ্গ বলেন, “কিছু অস্থায়ী কর্মী তৃণমূলের সংগঠনে যোগ দিয়েছেন। তৃণমূল তাঁদের নানা আশ্বাস দিচ্ছে। তবে জিটিএ ছাড়া স্থায়ীকরণের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা আর কারও নেই।” রাজনৈতিক ভাবে এ দিনও গুরুঙ্গ তৃণমূলকে আক্রমণ করেছেন।
পুলিশের সাহায্যে শাসক দল পাহাড়ে সংগঠন প্রসারের কাজ করতে চাইছে বলে বিভিন্ন থানা থেকে তৃণমূলের পতাকা বিলি হচ্ছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
উন্নয়নের ‘বার্তা’ও এদিন গুরুঙ্গের সভায় শোনা গিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর সুরেই দার্জিলিংকে ‘সুইৎজারল্যান্ড’ বানানোর কথা জানিয়েছেন মোর্চা প্রধান। তিনি বলেন, “পাহাড়ে উন্নয়নের কাজ জিটিএ চালিয়ে যাক। আগে যে কাজগুলির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, সে কাজগুলিও দ্রুত শেষ হোক। জিটিএ-কে আগামী দু’বছরের সময় দিয়েছি। ওই সময়ের মধ্যে জিটিএ এলাকাকে সুইৎজারল্যান্ড বানাতে হবে। তাঁদের বলেছি, সেটা যদি না পারেন তবে সেটাও আমাকে জানাবেন।”
কর্মী নিয়োগের জন্য জিটিএ দ্রুত নিজস্ব নিয়োগ বোর্ড গঠন করবে বলেও এদিন গুরুঙ্গ জানিয়েছেন। জিটিএ সদস্যদের সাধারণ বাসিন্দাদের স্বার্থে সততা এবং দক্ষতার সঙ্গে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
পৃথক গোর্খাল্যান্ডের দাবির কথাও সভায় জানিয়েছেন গুরুঙ্গ। তাঁর কথায়, “গোর্খাল্যান্ডের জন্য আমি আন্দোলন চালিয়ে যাব। এর জন্য পাহাড়বাসীকে ধৈর্য ধরতে হবে। কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে দাবি জানাতে দিল্লি যাচ্ছি। গত সপ্তাহে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করছি। কেন্দ্রীয় সরকারও জানে যে, আমিই গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে আন্দোলন করে চলা একমাত্র নেতা। তাই রাষ্ট্রপতিও দেখা করতে সম্মতি দিয়েছিলেন।” |