আদিবাসী ও প্রান্তবাসী মানুষের সামাজিক মর্যাদা ও আইনি সমানাধিকারের জন্য ১৮৭৩ সালের লড়াইকে স্বীকৃতি দিতে ‘মর্যাদা ২০১৩’ নামে দু’দিনের স্মরণসভা হল বনগাঁয়। অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতরের তরফে অনুষ্ঠানে প্রান্তবাসী মানুষের নিজেদের জীবন, সংস্কৃতি তুলে ধরা হয়েছে। পুরো অনুষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা করেছেন মন্ত্রী উপেন বিশ্বাস।
অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৮৭৩ সালে জনজীবন বিপন্ন হয়ে পেছিল। গাঙ্গেয় বদ্বীপ এলাকার পূর্বাঞ্চলের আদি বাসিন্দারা যাঁরা বর্তমানে নমশূদ্র বলে পরিচিত, ১৮৭৩ সালে তাঁরা সামাজিক মর্যাদা ও আইনি সমানাধিকারের দাবিতে আন্দোলন করেছিলেন। জমিদার, ভূস্বামীদের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেছিলেন এঁরা। সাধারণ ধর্মঘটও হয়। সামাজিক পরিষেবাও বয়কট করেন। উপেনবাবু বলেন, “১৮৭৩ সালের ওই আন্দোলন ইতিহাসে এক অনন্য ঘটনা। সম্ভবত সারা বিশ্বেই মর্যাদা ও আইনের জন্য লড়াইয়ে তা এক বিরল ঘটনা।”
তাঁদের সেই লড়াইকে স্বীকৃতি দিতে ২০১১ সালের ডিসেম্বরে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে রাজ্য সরকার। রাজ্যপালও তাতে সম্মতি দেন। |
শনিবার সকালে বনগাঁ থানা সংলগ্ন ইছামতীতে নৌকার আদলে মূল মঞ্চ করা হয়। বাছাড়ি বাইচ, কবি গান, পুতুলনাচ, ঢাক বাজানোর মতো নানা অনুষ্ঠান হয়। উপেনবাবু ছাড়াও ছিলেন মন্ত্রী মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুর, বনগাঁর সাংসদ গোবিন্দচন্দ্র নস্কর, বনগাঁ উত্তর কেন্দ্রের বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন মহকুমাশাসক অভিজিৎ ভট্টাচার্য।
অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বাছাড়ি বলতে এক ধরনের সরু ও লম্বা নৌকা বোঝানো হয়। একমাত্র প্রতিযোগিতাতেই ব্যবহার করা হয় এই নৌকা। নদী-তীরবর্তী মায়ানমার, চিন, জাপান, বিভিন্ন দেশের মানুষের অবসরের খেলা এই প্রতিযোগিতা।
অনুষ্ঠানে দেখা গেল, মহকুমার গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলির উপর তোরণ বাঁধা হয়েছে। স্থানীয় খেলাঘর ময়দান, আয়রন গেট ক্লাবের মাঠে ও ইছামতীতে আলাদা আলাদা তিনটি মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। বাছাড়ি বাইচ ও ভাটিয়ালি গানের ব্যবস্থা করা হয়েছিল নদীতেই। সন্ধ্যায় নৌকায় শিল্পীদের ভাটিয়ালি গান শুনতে হাজির হয়েছিলেন প্রচুর মানুষ। ছিল কবিগান, সারিগানও। মৎস্যজীবী ও মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষই মূলত ওই সংস্কৃতির বাহক। পুতুলনাচও রয়ে গিয়েছে তাঁদের মধ্যে। কিন্তু ভাটিয়ালি ছড়িয়ে গিয়েছে সমাজের সব স্তরে। |
এ দিন বাছাড়ি বাইচ প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে বাগদার পুরদাহ থেকে এসেছিলেন কল্পনা বিশ্বাস, কল্পনা বলো, শিখা বিশ্বাস, ঝর্না মজুমদার। বললেন, “সংসার সামলে বাইচ অভ্যাস করতে হয়। এত মানুষ অনুষ্ঠান দেখতে এসেছেন বলে খুব আনন্দ হচ্ছে। দর্শকদের ভিড়ে মিশে থাকা এক বৃদ্ধও বললেন, “আমি নিজেও এই সম্প্রদায়ের মানুষ। বাংলাদেশে এমন কত হতো। এখানেও হচ্ছে দেখে খুব গর্ব হচ্ছে।”
উপেনবাবু বলেন, “নিছক বিনোদন নয়। আদিবাসী বা প্রান্তবাসী মানুষ প্রতিদিন বৈষম্যের শিকার হন। অথচ সংবিধানে সব মানুষের সমানাধিকার, সমান মর্যাদা স্বীকৃত। অনেক লড়াই ছিল তার পিছনে। সেই লড়াইকে স্মরণ করতেই এই উদ্যোগ।” |