শহর কলকাতা এবং শহরতলিতে মোটরসাইকেল চুরির বেশ কয়েকটি চক্র সক্রিয় বলে পুলিশের খবর। তবে এ-পর্যন্ত সেই সব চক্রের যারা ধরা পড়েছে, তাদের সকলেই পুরুষ। এ বার মোটরসাইকেল চুরির অভিযোগে এক তরুণীকে গ্রেফতার করল পুলিশ। শনিবার রাতে ঘটনাটি ঘটে বারাসত থানার ন’পাড়া আমতলা এলাকায়।
পুলিশ জানায়, ধৃত তরুণীর নাম সৌরভী মুখোপাধ্যায়। তাঁর বাড়ি জলপাইগুড়িতে। বছর তেইশের ওই তরুণী বছরখানেক ধরে আমতলায় একটি বাড়িতে ‘পেয়িং গেস্ট’ হিসেবে আছেন। সেই বাড়িতে মোটরবাইকটি পাওয়া গিয়েছে। তবে ওই তরুণীর দাবি, তিনি মধ্যমগ্রামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে সেটি কিনেছেন। তাঁর দাবি সত্যি কি না, পুলিশ তা যাচাই করছে। রবিবার সৌরভীকে বারাসত জেলা আদালতে তোলা হয়। তরুণীর আইনজীবী রাজারাম চট্টোপাধ্যায় আদালতে বলেন, তাঁর মক্কেল বাস্কেটবল খেলোয়াড় এবং রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। ধৃতকে জামিনে মুক্তি দেন বিচারক।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, জ্যোতিষ সেন নামে আমতলার এক বাসিন্দা ১৭ অক্টোবর দুপুরে তাঁর কাচের দোকানের সামনে নিজের মোটরসাইকেল রেখে কাজ করছিলেন। কিছু পরে তিনি দেখেন, মোটরসাইকেল উধাও। থানায় ডায়েরি করলেও এত দিন সেটির খোঁজ মেলেনি। হঠাৎ এক দিন তিনি লক্ষ করেন, এক তরুণী ওই এলাকাতেই তাঁর মোটরবাইকটি চালাচ্ছেন। তবে তাতে নম্বরপ্লেট নেই। তরুণী কোন বাড়িতে থাকেন, সেই খোঁজও নেন তিনি। তার পরে শনিবার রাতে কয়েক জনকে নিয়ে মেয়েটির বাড়ির সামনে অপেক্ষা করতে থাকেন। তরুণী ফিরতেই জ্যোতিষবাবুরা তাঁকে ঘিরে ধরেন। তাঁদের প্রশ্নের মুখে পড়ে তরুণী প্রথমে জানান, অশোক দেবনাথ নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে তিনি মোটরসাইকেলটি কিনেছেন। কিন্তু অশোকের ঠিকানা দিতে পারেননি তিনি। পরে শ্যাসে নম্বর মিলিয়ে দেখা যায়, মোটরবাইকটি জ্যোতিষবাবুরই। তরুণী পালানোর চেষ্টা করলে স্থানীয় লোকজন তাঁকে আটকে পুলিশে খবর দেন। পরে বারাসত থানার পুলিশ এসে তাঁকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যায়।
এ দিন বিচারক ডি সাঁতরার এজলাসে তোলা হয় সৌরভীকে। তাঁর আইনজীবী রাজারামবাবু বিচারকের কাছে সৌরভীর ২১টি শংসাপত্র জমা দেন। জানান, বাস্কেটবল খেলোয়াড় হিসেবে তাঁর মক্কেলের যথেষ্ট নামডাক আছে জলপাইগুড়িতে। ২০০৫ সালে তিনি বাস্কেটবলে জলপাইগুড়ির হয়ে জুনিয়র পর্যায়ে প্রতিনিধিত্বও করেছিলেন বলে আইনজীবীর দাবি। তিনি জানান, তাঁর মক্কেল রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক পরীক্ষায় পাশ করে নেতাজি মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রির জন্য পড়াশোনা করছেন। বারাসতে থেকে তিনি চাকরির পরীক্ষার জন্যও প্রস্তুতি চালাচ্ছেন।
এ দিন এজলাসে দাঁড়িয়ে কাঁদতে দেখা যায় সৌরভীকে। ওই তরুণী জানান, তিনি একটা পুরনো মোটরসাইকেলের খোঁজ করছিলেন। অশোক দেবনাথ নামে মধ্যমগ্রামের এক বাসিন্দা তাঁর কাছে এসে বলেন, তাঁর স্ত্রী অসুস্থ। হাসপাতালে ভর্তি করানোর জন্য টাকার দরকার। নিজের মোটরবাইকটি ২৫ হাজার টাকায় বেচে দিতে চান অশোক। সৌরভী তাঁকে বলেন, তাঁর কাছে মাত্র দু’হাজার টাকা আছে। অশোক তখনকার মতো তাতেই রাজি হয়ে যান। শনিবারেই মোটরবাইকের গাড়ির কাগজপত্র পাওয়ার কথা ছিল বলে সৌরভী জানান। ওই তরুণীর দাবি, তিনি পরিস্থিতির শিকার। |