শনিবার রাত তখন প্রায় দশটা। ক্রিকেট থেকে সচিনের অবসরের খবর যখন শোকাচ্ছন্ন করে ফেলেছে রাসের নবদ্বীপকেও, তখন হঠাৎ প্রাণ ফিরে এল মান্না দে-র গান ধরে। গানতলার মোড়ে সেই রাতে ‘ক্যালকাটা ব্যান্ডের’ স্যাক্সোফোনে একের পর এক মান্না দে হিট্স। একবার ‘অ্যায় মেরে যোহরা জবি’ তো তারপরই ‘ইয়ারি হ্যায় ইমান মেরা’। সেটা শেষ হতে না হতেই ‘রামাইয়া বাস্তা ভাইয়া’। কলকাতার ওই নামী ব্যান্ডের তালে তালে দুলছে আঠারো থেকে আটষট্টির পা, কোমর। নাচতে নাচতেই হঠাৎই বছর চল্লিশের এক যুবক পকেট থেকে এক গোছা দশ টাকার নোট বের করে ব্যান্ড বাদকদের দিকে উড়িয়ে দিলেন জমিদারি ঢঙে। গায়ে মাথায় ছড়িয়ে পড়া সেই টাকা কুড়োবেন কি না ব্যান্ড বাজিয়েরা তা বুঝে ওঠার আগেই আরও একজন প্রায় একই ভাবে উড়িয়ে দিলেন টাকার নোট। সে টাকা ছড়িয়ে পড়ল রাস্তা জুড়ে। জোড়া স্যাক্সোফোনে তখন ‘এ ভাই জারা দেখকে চলো’। এ ভাবেই শনিবার রাত থেকে রাসে মেতে উঠল শহর নবদ্বীপ। এবার শনি-রবি দুদিন রাস হলেও শহরের বিভিন্ন বারোয়ারি গত বৃহঃস্পতিবার থেকেই প্রতিমার উদ্ধোধন শুরু করে দিয়েছিলেন। ফলে কার্যত রাস এ বার তিন দিনের উৎসবে রূপান্তরিত হয়েছে। |
রাসের ভিড় নবদ্বীপে। ছবি তুলেছেন সুদীপ ভট্টাচার্য। |
আর উদ্ধোধন পর্বে সব থেকে বেশি ছুটতে হয়েছে নবদ্বীপের বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী পুন্ডরীকাক্ষ সাহাকে। কমবেশি ৫০টি প্রতিমার উদ্বোধন হয়েছে তাঁর হাতে। আর এই রাসকে ঘিরে সেজে উঠেছে নবদ্বীপ। একদিকে প্রায় তিনশো প্রতিমা ও তাদের মন্ডপ, আলোকসজ্জা, মাইক, বাজনা। অন্য দিকে শতাধিক মঠ-মন্দিরের বৈষ্ণবীয় রাস। আর এই দুই ভিন্নমুখী রাস দেখতে লাখো মানুষের ভিড়। যদিও অন্য বছরের তুলনায় এবার লোক সমাগম কিছু কম। একই দিনে কার্তিক পুজো হওয়ায় লোক ভাগ হয়ে গিয়েছে বলে ধারণা প্রশাসনের। তবে এ বার প্রথম থেকেই আইন শৃঙ্খলার বিষয়ে কঠোর হয়েছে পুলিশ। প্রায় ৭০০ পুলিশকর্মী ও অফিসার রাস সামলাতে নবদ্বীপে মোতায়েন করা হয়েছে। রাত বাড়তেই টহলদার পুলিশের দাপটে থমকে গিয়েছে মাইক-তাসার শব্দ। সোমবার আড়ং। শোভাযাত্রার প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ত সবাই। দুটি বিষয়ে সকলের আগ্রহ, এক, এ বার বিদ্যুৎ থাকবে না কি অন্ধকারেই ডুববে শহর, আর দুই শোভাযাত্রার গতি কতটা মসৃণ করতে পারবে প্রশাসন। |