ওয়াঘার এপার থেকে
অপ্রতিরোধ্য সচিন অবসর জীবন
কাটানোর রাস্তাটাও ঠিক বার করে নেবে
নিবারের ওয়াংখেড়ে বিশ্বজুড়ে মানুষকে অনেক কিছু শিখিয়ে গেল। অবিশ্বাস্য ওই পরিবেশ ভোলা যাবে না। একের পর এক হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া, গৌরবোজ্জ্বল সব দৃশ্য! তার মধ্যেও সচিন তেন্ডুলকরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কেরিয়ারের শেষ ঘণ্টাটা সবাইকে মন্ত্রমুগ্ধ করে দিয়ে গেল।
এমন একটা দিনে সচিন যে আবেগে ভাসবে, সেটাই স্বাভাবিক। ও চিরকালের মতো সেই মঞ্চকে বিদায় জানাচ্ছিল, যেটা এত বছর ছিল ওর একমাত্র জীবন। যে মঞ্চ ওকে এই পৃথিবীতে সব কিছু দিয়েছে মহানায়কের মর্যাদা, সম্মান, সাফল্য, ভালবাসা, প্রশংসা আর সবচেয়ে বড় কথা, ওর প্রতি একটা গোটা দেশের অবিচল আস্থা। সচিনের চোখে জল তো আসবেই। কিন্তু আমার কাছে সবচেয়ে বেশি মনে রাখার মতো হল, মাঠে সচিন যে ভাবে ওর বক্তৃতায় নিজেকে মেলে ধরল। ওর বিনয়, আর খেলাটার প্রতি অকৃত্রিম ভালবাসা আর শ্রদ্ধা সচিনের প্রতিটা কথায় এমন ভাবে বেরিয়ে এল যে, ওয়াংখেড়েতে সচিনকে শেষ কুর্নিশ জানাতে আসা হাজার হাজার অনুরাগীর মনে ওর আসনটা নতুন উচ্চতায় উঠে গেল।
বিদায়ী বক্তৃতায় কথাগুলো একেবারে মন থেকে বলছিল সচিন। আরও একবার পরিষ্কার হয়ে গেল, খ্যাতি আর প্রাচুর্যের চুড়োয় পৌঁছেও ও নিজের শিকড়কে এক মুহূর্তের জন্য ভুলে যায়নি। ছোটবেলা থেকে শুরু করে কেরিয়ারের শেষ দিন পর্যন্ত যারা ওর সুখ-দুঃখের সঙ্গী থেকেছেন, তাঁদের প্রত্যেককে ধরে ধরে কৃতজ্ঞতা জানাল। সচিনের কথায় নিজের ভাই-বোন, কাকিমা, বাবা-মা, বাচ্চারা আর ওর মিষ্টি বউ অঞ্জলির জন্য যে আবেগ বেরিয়ে এল, সেটাই বলে দেয় এক জন মহান ক্রিকেটার হওয়া সত্ত্বেও ওর জীবনে আপনজনদের জায়গাটা ঠিক কোথায়।
শনিবারের যে মুহূর্তটা আমাকে সবচেয়ে বেশি ছুঁয়ে গেল সেটা হচ্ছেস সচিন যখন সব কিছুর শেষে পিচের উপর গিয়ে বাইশ গজ-কে প্রণাম করল। ওই প্রণামটা যে কোনও পেশার পেশাদারের জন্য একটা বিরাট শিক্ষা জীবনে সাফল্য পেতে হলে সবার আগে যে কাজটা করছ, সেটাকে মন থেকে শ্রদ্ধা করতে হবে। গত চব্বিশ বছরে লোকে ক্রিকেটার সচিন তেন্ডুলকরকে ঘিরে থাকা গ্ল্যামারটা দেখেছে। ওর নাম, যশ, খ্যাতি, প্রতিপত্তি, টাকা এই সব। শনিবার কিন্তু তারাই দেখল, এত কিছু সত্ত্বেও একটা জায়গায় সচিনের সঙ্গে তাদের কোনও ফারাক নেই। সেটা নিজের পেশার প্রতি, নিজের শিল্পের প্রতি ভালবাসা, শ্রদ্ধা, আবেগ।
ক্রিকেট ছাড়ার পর সচিন কী করবে বা করতে পারে, তা নিয়ে দেখছি অনেকেই গবেষণা শুরু করে দিয়েছে। আমি শুধু একটাই কথা বলব, ও নিজের রাস্তা নিজেই বের করে নেবে। কারণ এই লোকটা সত্যিই অপ্রতিরোধ্য। তা ছাড়া, সচিন শুধু ঈশ্বরের বরপুত্র নয়, ও হল ঈশ্বরের সবচেয়ে প্রিয় বরপুত্র।
এ ব্যাপারে কোনও সন্দেহই নেই যে, সচিন কোনও দিনও রেকর্ড বই থেকে মুছে যাবে না। মানুষের হৃদয় থেকেও না। একটা কথা আছে, চ্যাম্পিয়নরা কখনও হারিয়ে যায় না। আর সচিন হল সেই চ্যাম্পিয়ন, যে লোকের মনে চিরকাল একটা বিশেষ জায়গা দখল করে থাকবে। ভারত সরকার একদম যোগ্য লোককেই ভারতরত্ন দিয়েছে। সব মিলিয়ে শনিবারটা ভারতীয় ক্রিকেটের ব্র্যান্ডকে নতুন উচ্চতায় তুলে দিল। আর তার জন্য মুম্বইয়ের মানুষকে আমি আলাদা করে ধন্যবাদ দিতে চাই। ওঁরা সচিনকে যে ভাবে সম্মান জানালেন, সেটা দেখার পর প্রত্যেক বাচ্চা এর পর তাদের বাবা-মাকে বলবে, আমি ক্রিকেট খেলতে চাই যাতে কেরিয়ারের শেষে আমার জন্যও লোকে এই রকম উচ্ছ্বসিত সংবর্ধনা বরাদ্দ রাখে।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.