সম্পাদকীয় ২...
আইন ও সমাজ
ইন ও তাহার প্রয়োগ সচরাচর সমাজের বাস্তব অবস্থাকেই প্রতিফলিত করে। কোনও দেশের আইন যদি মহিলাদের প্রতি বৈষম্যমূলক হয়, লিঙ্গসাম্যের পরিবর্তে লিঙ্গবৈষম্য অনুমোদন করে, তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায়, তাহা সমাজে অনুশীলিত বৈষম্যেরই প্রতিচ্ছবি। একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়াছে, গোয়া রাজ্যে ত্রিশ বৎসর বয়স অবধি স্ত্রী পুত্রসন্তানের জন্ম দিতে ‘ব্যর্থ’ হইলে স্বামীর পুনর্বিবাহের আইনি অনুমোদন রহিয়াছে। তাহার অর্থ এই নয় যে, আইনটি কার্যক্ষেত্রে প্রযুক্ত হইয়া থাকে। ভারতে অনেক আইনই আইনের কেতাবে থাকিয়া গিয়াছে, কিন্তু তাহাদের প্রয়োগ বহু কাল হয় নাই। কিন্তু আইনটি যে আছে, তাহাই সমাজের পক্ষে লজ্জাকর। বস্তুত, সমীক্ষাটি এমন বিবিধ লজ্জার নমুনা ভারতের বিভিন্ন আইন হইতে তুলিয়া আনিয়াছে। কিছু রাজ্যের আইনে মহিলার সম্পত্তির উত্তরাধিকার তাঁহার মৃত্যুর পর কেবল তাঁহার স্বামীর পরিবারের জন্য নির্দিষ্ট, মহিলার বাবা-মা-ভাই-বোনের কোনও অধিকার স্বীকৃত নয়। আবার কোনও রাজ্যে ভূসম্পত্তির উত্তরাধিকার মৃতের কন্যা বা বিধবা স্ত্রীদেরও প্রাপ্য নয়। সকল আইনই যে কেতাবিমাত্র, তাহাও বলা চলিবে না।
এই আইনগুলি সনাতন সমাজের পরিচয় বহন করিতেছে। ভারতীয় পিতৃতন্ত্র নারীকে একপুরুষগামিনী হইতে বাধ্য করে, কিন্তু পুরুষের জন্য একনারীগমনের বাধ্যতা নাই। তাই সতী বা সতীত্বের ধারণাগুলি কেবল নারীর যৌন শুদ্ধতার পরিচায়ক হিসাবে ব্যবহৃত, পুরুষের কাছে একটি নারীর প্রতি যৌন আনুগত্য সনাতন সমাজ দাবি করে না, প্রত্যাশাও না। সন্তানের পিতৃপরিচয়ই প্রাধান্য পাওয়ার ফলে এবং পুত্রসন্তানই সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হওয়ায় এই পুরুষতন্ত্রে পুত্রের জন্মদানে ব্যর্থ স্ত্রীকে পরিত্যাগ না করিলেও দ্বিতীয় বার পাণিগ্রহণের বন্দোবস্ত অনুমোদিত। একই কারণে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে পঞ্চায়েত সদস্য ও পুরপিতাদের সন্তানসংখ্যা দুইটিতে সীমাবদ্ধ রাখার পরিণামে কন্যাভ্রূণহত্যা বাড়িতেছে। কারণ দুইটি সন্তানই যদি কন্যা জন্মে, তবে সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হইবে কে? তাই পঞ্চাশ বছর পূর্বে জনসংখ্যায় প্রতি হাজার পুরুষপিছু মহিলার সংখ্যা যেখানে ছিল ৯৭৬, এখন সেখানে এই অনুপাত প্রতি হাজারে ৯১৯। এই পরিসংখ্যানের মধ্যেই লুকাইয়া রহিয়াছে কন্যাভ্রূণহত্যার হাড়-হিম-করা বাস্তবতা। আর সেই বাস্তবতায় নিহিত মঙ্গলায়নে আগুয়ান আধুনিক ভারতের সামাজিক অনগ্রসরতা, মহিলাদের প্রতি বৈষম্য অনুশীলনের তত্ত্ব ও প্রয়োগ।
রামায়ণে রাজা দশরথ পুত্রেষ্টি যজ্ঞ করিয়াছিলেন। কন্যালাভের জন্য যজ্ঞানুষ্ঠানের কথা পৌরাণিক ভারতে তত শুনা যায় না। ‘পুত্রার্থে ক্রিয়তে ভার্যা’ কেবল প্রাচীন শাস্ত্রের বচন নয়, আজও অনেকেই তাহা মানিয়া চলেন। নারীর স্থান যে কেবল পাকশালায় এবং স্বামীর প্রজননশয্যায়, হিটলারের এই সুভাষিতও তাঁহারা শিরোধার্য করিয়া থাকেন। রাজ্যে-রাজ্যে উত্তরাধিকার, পণ-প্রথা, বিবাহবিচ্ছেদ, বিচ্ছিন্না নারীর খোরপোষ সংক্রান্ত যে-সকল আইনকানুন রহিয়াছে, সেগুলির সবই আপাতদৃষ্টিতে নারী-সহায়ক হইলেও কার্যত নারীর ক্ষমতায়ন ও লিঙ্গসাম্যে অন্তর্ঘাত ঘটাইয়া চলে। আইন কিন্তু সমাজের আগে-আগেও চলিতে পারে। রক্ষণশীল হিন্দু সমাজে সতীদাহ ও বাল্যবিবাহ চালু থাকিলেও আইন তাহা রদ করিয়া প্রগতির আবাহন করিয়াছিল।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.