সম্পাদকীয় ১...
সামর্থ্য অনুসারে
ভাগ্যবানের বোঝা কেন্দ্রীয় সরকার বয়, এমন একটি ধারণা পশ্চিমবঙ্গের শাসককুলের বিলক্ষণ আছে। নিজেদের ভাগ্যপরীক্ষায়, অতএব, বিরাম নাই। অর্থ কমিশন রাজ্য সরকারের সাম্প্রতিক দাবিগুলি মানে কি না, তাহা ভবিষ্যৎ বলিবে। কিন্তু, কেন্দ্রীয় সরকার বর্ধিত বেতনের দায় লইলে তবেই রাজ্য সরকার নূতন বেতন কমিশন বসাইবে, এই দাবিটির গোড়ায় গলদ। একেবারেই গোড়ায়, যেখানে বর্তমান রাজ্য সরকার নাই, বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকারও নাই— রহিয়াছে একটি প্রথা। কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের ব্যয় বিভাগের যুগ্ম সচিব পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যসচিবকে লেখা চিঠিতে যে প্রথার উল্লেখ করিয়াছেন— কেন্দ্রীয় সরকার বেতন কমিশন গঠন করিলে রাজ্য সরকারগুলিও করিয়া থাকে। অর্থাৎ, সরকারি কর্মীদের বেতনে সমতা বজায় রাখিবার প্রথা। ভারতে প্রথা মাত্রেই তাহা প্রশ্নাতীত বলিয়া বিবেচিত। নচেৎ, এত দিনে কেহ জিজ্ঞাসা করিতেন, সমতা বজায় রাখিতে হইবে কেন? কেন্দ্র এবং বিভিন্ন রাজ্যের পরিস্থিতি আলাদা, আর্থিক সামর্থ্য আলাদা। তবে কেন কর্মীদের বেতন সমহারে বাড়াইতে হইবে? রাজ্য সরকারের কর্মচারীরা যদি নিজেদের বঞ্চিত বোধ করেন, কেউ তাঁহাদের আটকাইয়া রাখে নাই। তাঁহারা অবিলম্বে অধিক বেতনের চাকুরিতে যোগ দিন।
বস্তুত, প্রশ্নটি শুধু কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকারের নহে। প্রশ্নটি বেতন সমতার মূল নীতি লইয়া। কেন্দ্রীয় সরকারের সব বিভাগে বেতনক্রম সমান হইতে হইবে, এমন কোনও দায় নাই। বিভিন্ন রাজ্যের সরকারকে সমহারে বেতন দিতে হইবে, এমনও নহে। কোনও একটি রাজ্য সরকারের সকল দফতরে বেতনের হার সমান রাখিবার প্রয়োজন নাই। এমনকী, একই দফতরের বিভিন্ন কর্মীর বেতনও সমহারেই হইবে, ইহাও না-হক দাবি। চাকুরিজীবনের দৈর্ঘ্য বেতনের একমাত্র নির্ণায়ক হইলে উৎপাদনশীলতা, দক্ষতা ইত্যাদির আশা ত্যাগ করাই বিধেয়। প্রত্যেক চাকুরিজীবীর বেতনের একটি নিম্নসীমা থাকিবে, যাহার কম বেতন হইলে জীবনধারণ করা কঠিন হইয়া দাঁড়ায়। কোনও সরকারি কর্মীই তাহার কম বেতন পান বলিয়া আশঙ্কা করিবার কারণ নাই। তাহার পর কোন কর্মীর বেতন কী হইবে, তাহা নির্ধারিত হইবে সেই কর্মীর দক্ষতার ভিত্তিতে। কোনও দফতরে এক জন কর্মীর অবদান কতখানি, তাহা মাপিবার মান্য পদ্ধতি রহিয়াছে। বেসরকারি ক্ষেত্রে সর্বত্র সেই পদ্ধতি অনুসৃত হয়। তাহার ভিত্তিতেই বেতন বাড়ে, পদোন্নতি হয়। সরকারি কর্মচারীদের ক্ষেত্রেই বা সেই নিয়মের ব্যতিক্রম হইবে কেন? তাঁহারাও তো কাজ করিয়াই বেতন লহেন। অন্তত, সেই রকমই কথা।
আরও একটি বিষয়ের উপর কর্মীদের বেতন নির্ভর করে— প্রতিষ্ঠানের আর্থিক সামর্থ্য। যে সংস্থা আর্থিক ভাবে বেহাল, বাজার হইতে ধার করিয়া তাহার কর্মীদের বেতন বাড়ানো হয় না। সরকারের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম প্রযোজ্য হওয়া বিধেয়। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের যদি কর্মীদের বেতন বাড়াইবার সামর্থ্য না থাকে, বেতন বাড়িবে না। অন্য রাজ্য বেতন বাড়াইতেছে বলিয়াই পশ্চিমবঙ্গকেও, তাহার সাধ্যে না কুলাইলেও, সেই পথেই হাঁটিতে হইবে— এই অভ্যাসটি বর্জন করা উচিত। যে রাজ্যে ভাল বেতন মিলিবে, অসন্তুষ্ট কর্মীরা না হয় সেই রাজ্যেই চলিয়া যাইবেন। কেন্দ্রের নিকট রাজ্যের আর্থিক দাবি থাকিতেই পারে। বস্তুত, ঐতিহাসিক ভাবেই কেন্দ্রীয় সরকার পশ্চিমবঙ্গের ন্যায় কিছু রাজ্যকে তাহাদের প্রাপ্যের তুলনায় কম রাজস্ব দিয়াছে। কিন্তু, সেই দাবির সহিত বেতনের বোঝা বহিবার দাবিটি জুড়িয়া দিলে যুক্তি গুলাইয়া যায়, ন্যায্য দাবিটিও তাহার গুরুত্ব হারায়। মুখ্যমন্ত্রী যদি বিদ্রোহ ঘোষণা করিতে চাহেন, তবে বেতন কমিশন নামক মৌলিক ভ্রান্তিটিকেই নিশানা করুন। তাহা হইবে যথার্থ বৈপ্লবিক ঘোষণা।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.