সম্পাদক সমীপেষু...
এত সুন্দর ঐতিহ্য এ ভাবেই ধ্বংস হয়ে যাবে?
দার্জিলিং হিমালয়, ডুয়ার্স এবং তরাই অঞ্চলের পর্যটনের বিকাশে মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েছেন এবং বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা নানা সময়ে ঘোষণা করেছেন। কিন্তু দার্জিলিং ও ডুয়ার্সে যাওয়ার প্রবেশপথ এন জে পি স্টেশন ও সংলগ্ন এলাকাগুলো জঞ্জাল ও আবর্জনার স্তূপে ভয়াবহ দূষিত হয়ে যাচ্ছে। এন জে পি স্টেশনের প্রবেশপথটি ভেঙে চুরমার হয়ে গিয়েছে। স্টেশনের ভিতরে পর্যটন সহায়তা কেন্দ্রের দুটো স্টল বহু দিন পর্যন্ত ছিল। ইদানীং সেটাকে তুলে দেওয়া হয়েছে। বিগত দশ-পনেরো বছরে এন জে পি স্টেশনের পাশে গজিয়ে উঠেছে অসংখ্য বহুতল হোটেল। স্টেশনের সামনের চত্বরে কয়েকশো দোকান স্টেশন এলাকা জবরদখল করে আবর্জনার পাহাড় তৈরি করে চলেছে। যে সব হোটেল গড়ে উঠেছে তারা লাইসেন্সপ্রাপ্ত নয়। এই হোটেলগুলোর কোনও নিকাশি ব্যবস্থাই নেই। রেলওয়ে রানিং রুমকে ঘিরেই গড়ে উঠেছে নানা ঝুপড়ি এবং বেআইনি দোকান। সন্দেহ নেই, এগুলো সাধারণ মানুষের আয়েরও রাস্তা। কিন্তু সব ধরনের দূষণ ছড়াচ্ছে এই সব হোটেল, দোকান, ঝুপড়ি এবং বস্তি। মাঝে মাঝে রেল কর্তৃপক্ষ এন জে পি স্টেশন ‘বিউটিফিকেশন ড্রাইভ’ নিয়ে থাকেন। কংক্রিটের দেওয়াল, রাস্তা, প্ল্যাটফর্ম ভেঙে আবার নতুন করে তৈরি হয়। সবচেয়ে বড় কথা, কয়েকশো অটো এন জে পি স্টেশনে, স্টেশন চত্বরকে কালো ধোঁয়ায় দূষিত করলেও স্টেশনের চত্বর থেকে সবুজ গাছকে নির্বিচারে নিধন করে কালো পিচে মোড়া হয়েছে। পর্যটককে আকৃষ্ট করার এটাই কি একমাত্র রাস্তা? কংক্রিটের দেওয়াল নীচের রাস্তার অসম্ভব গরমে অটোর কালো ধোঁয়ায় পর্যটকরাও আক্রান্ত হচ্ছেন। স্টেশনের চার পাশের রাস্তাটা কার্যত ডাম্পিং গ্রাউন্ড হয়ে গিয়েছে। নোংরা, কটুগন্ধে রেলযাত্রী এবং পর্যটক — সকলেরই গা-গুলিয়ে ওঠে। জঞ্জাল অপসারণ কার দায়িত্ব সেটা নিয়ে রেল কর্তৃপক্ষ, শিলিগুড়ি পুরসভা, পূর্ত দফতর প্রত্যেকেই একে অপরের বিরুদ্ধে তোপ দাগছে।
শিলিগুড়ি ও জলপাইগুড়ির মধ্যে ন্যাশনাল হাইওয়ের বেহাল অবস্থা। সেপ্টেম্বর ২০১৩। ছবি: সন্দীপ পাল।
শিলিগুড়ির হাসপাতাল, রাস্তাঘাট, তেনজিং নোরগে বাস টার্মিনাস, সিকিম বাসস্ট্যান্ড, মহানন্দা, ফুলেশ্বরীর দু’পাশের দূষণ এবং পূতিগন্ধ শিলিগুড়ির হাজার হাজার মানুষকে অসুস্থ করলেও কারওই যেন কিছু করার নেই। ডন বসকো স্কুল সংলগ্ন জ্যোতিনগরে, আশিঘরের শত সহস্র বাসিন্দা শিলিগুড়ির বর্জ্যের কুপ্রভাবে সীমাহীন ভাবে আক্রান্ত। মুখ্যমন্ত্রী ইস্টার্ন বাইপাস সম্প্রসারণের শিলান্যাস করলেও, জ্যোতিনগর, আশিঘরের বর্জ্য, আবর্জনাজনিত দূষণের অব্যাহতি দিতে কোনও পরিকল্পনা বা স্কিম ঘোষণা করেননি। লক্ষণীয়, এ সব অঞ্চলেও বহু বহুতল ঘরবাড়ি নির্বিচারে গড়ে উঠছে। মারাত্মক তথ্য হল, জ্যোতিনগরে ডাম্পিং গ্রাউন্ডকে ভরাট করে নগরায়ণ চলছে। এন জে পি স্টেশন থেকে শুরু করে ফুলবাড়ি, নৌকাঘাট, মেডিক্যাল কলেজ, শিবমন্দির, বাগডোগরা— যেখানেই নগরায়ণের থাবা বিস্তার লাভ করেছে, শহুরে বর্জ্য এবং আবর্জনায় মানুষের জীবন ও স্বাস্থ্য কলুষিত হচ্ছে। ন্যাচারাল ডাম্পিং গ্রাউন্ড বলে কিছুই থাকছে না। যে কারণে শিলিগুড়িতে বায়ু দূষণের সঙ্গে জলদূষণও মাত্রাতিরিক্ত। দূষণ এন জে পি স্টেশনেই সীমাবদ্ধ তাই নয়, অত্যন্ত সুন্দর শিলিগুড়ি জং স্টেশন ও তেনজিং নোরগে বাস টার্মিনাস এবং পাশের এস জে ডি এ বিল্ডিং, মার্কেট, সিকিম বাস টার্মিনাসও মারাত্মক বর্জ্য ও যান দূষণের কবলে। ট্যুরিস্ট আকর্ষণ করার নামে সহস্র সহস্র ডিজেল চালিত যান শিলিগুড়ি, সিকিম, লাভা, লোলেগাঁও ও দার্জিলিং হিমালয়কে দূষিত করে চলেছে। এন জে পি স্টেশন থেকে শিলিগুড়ি পর্যন্ত রেলপথের দু’ধারে (লক্ষণীয় এখনও এখানে টয় ট্রেনের লাইন আছে) বস্তি, আবর্জনা এবং মনুষ্যবর্জ্যের সহাবস্থান দেখা যায়। নিয়ন্ত্রণহীন ডিজেল চালিত যান গোটা শহরকেই ভয়ানক দূষণে গিলে ধরলেও না-পর্যটন দফতর, না-মুখ্যমন্ত্রীর দফতর এ ব্যাপারে উদ্বিগ্ন। পর্যটনের সঙ্গে দূষণের যে অবিচ্ছেদ্য যোগাযোগ আছে, সেটাই কেউ জানতে চান না। প্রয়োজন এ অঞ্চলে প্রচুর সবুজ গাছ এবং টয় ট্রেনের পুনঃপ্রবর্তন।
পাহাড়ি টয় ট্রেন অত্যন্ত নিভর্র্রযোগ্য ও দূষণহীন যান হওয়া সত্ত্বেও গত কুড়ি বছর ধরে কর্তৃপক্ষ এটা প্রায় চালাতেই পারছেন না। এন জে পি ও শিলিগুড়ি স্টেশনে টয় ট্রেনের জন্য আলাদা শেড প্রায় দু’কোটি টাকা খরচ করে তৈরি হলেও পাঁচ-সাত বছর ধরে এই ট্রেনটি চলছে না। তার পর এটিকে হেরিটেজ ট্রেনের মর্যাদা দেওয়া হলেও শিলিগুড়ি জংশন স্টেশন থেকে অত্যন্ত চড়া ভাড়ায় এটাকে অনিয়মিত ভাবে চালানো হচ্ছে। বর্তমানে এটা একটা শো-পিসে পরিণত হয়েছে। বছর কুড়ি আগে এন জে পি স্টেশনে দার্জিলিং মেলের প্ল্যাটফর্ম এবং টয় ট্রেনের প্ল্যাটফর্ম ছিল পাশাপাশি। ফলে, কলকাতার যাত্রীরা দু’পা হাঁটলেই টয় ট্রেনে উঠতে পারতেন। দার্জিলিং যেতে পারতেন। তার পর শুরু হল মিটার গেজ, ন্যারো গেজকে পরিবর্তিত করে ব্রড গেজ লাইন পাতবার যুগ। কোটি কোটি টাকা খরচ করে মিটার গেজকে বিতাড়িত করা হল। নাম কা ওয়াস্তে টয় ট্রেনের লাইন রেখে দেওয়া হল। এন জে পি স্টেশনে ব্রড গ্রেজ প্ল্যাটফর্মের থেকে টয় ট্রেনের প্ল্যাটফর্মের দূরত্ব ২৫০ মিটার। দু’বার ওভার ব্রিজ ডিঙিয়ে যাত্রীরা আর টয় ট্রেন ধরতে আগ্রহী নন। তার চেয়ে বড় কথা, টয় ট্রেন বলতে কার্যত কিছুই নেই। এখন যেখানে টয় ট্রেনের প্ল্যাটফর্ম তৈরি হয়েছে তার অনতিদূরেই আছে রেলওয়ে রানিং রুম। পাহাড়ি ড্রাইভার, টয় ট্রেনের গার্ড এবং সমতলের গার্ডবাবু ও ড্রাইভার সাহেবরা এই রানিং রুমেই একসঙ্গে খাওয়াদাওয়া করতেন। এবং এই রানিং রুমেই ঘুমোতে যেতেন। টয় ট্রেন নেই। কিন্তু হেরিটেজ খেতাব আছে। পাহাড়ি ড্রাইভাররাও আর সমতলে অর্থাৎ এন জে পি শিলিগুড়ি টাউন স্টেশন, শিলিগুড়ি জংশন স্টেশনে আসেন না। রানিং রুমে নেপালিভাষীরা অমিল। কার্শিয়াঙেও এক সুন্দর রেলওয়ে রানিং রুম ছিল। সমতলের গার্ড-ড্রাইভাররা সেখানে যেতেন, থাকতেন। পর দিন টয় ট্রেন নিয়ে শিলিগুড়ি-এন জে পি ফিরে আসতেন। রেল স্টেশনগুলো ছিল মিলনক্ষেত্র। এখন প্রকৃতিতে, বিশেষ করে হিমালয়ে নানা ক্ষয়রোগ বাসা বেঁধেছে। পাহাড়ে গাছ যেমন নেই, তেমনই আছে ধসের পৌনঃপুনিকতা। টয় ট্রেন চলবে কী ভাবে?


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.