বিজ্ঞানে টাকা মেলে না কেন, ক্ষুব্ধ ভারতরত্ন
ভারতরত্ন পাওয়ার পরে ২৪ ঘণ্টাও কাটেনি। নতুন বিতর্ক তুলে দিলেন বিজ্ঞানী সি এন আর রাও। এ দিন সাংবাদিক বৈঠক করে রাও জানান, শুধু সেনসেক্স আর ব্যবসা-বাণিজ্যে নজর দিলেই দেশ উন্নতি করবে না। দীর্ঘকালীন উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন বিজ্ঞানে অগ্রগতি। সে জন্য টাকার দরকার। সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, রাজনীতিকরা সেই টাকা ঠিক মতো দিচ্ছেন না বলে দাবি করে তাঁদের নির্বোধ বলতেও ছাড়েননি রাও।
সচিন তেন্ডুলকরের সঙ্গে কাল ভারতরত্ন হয়েছেন তিনি। কিন্তু খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নিজের খুশি হওয়ার কথা জানানো ছাড়া আর কোনও বিষয় নিয়ে মুখ খোলেননি। খুললেন আজ, বেঙ্গালুরুতে এক সাংবাদিক বৈঠকে। ঘটনাচক্রে, এ দিনই প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ চিঠি দিয়েছেন রাওকে। ভারতরত্ন সম্মানের জন্য তাঁকে অভিনন্দন জানানোর পাশাপাশি বলেছেন, ‘তরুণ বিজ্ঞানীদের হাতে করে গড়ে তুলুন আপনি। দেশের বিজ্ঞানচর্চার পরিকাঠামোকেও পোক্ত করুন।’ তাৎপর্যপূর্ণ হল, এ দিনের সাংবাদিক বৈঠকে এ সব নিয়েও নিজের মত জানিয়েছেন রাও। এবং জানিয়েছেন খোলা গলায়।
প্রধানমন্ত্রীর বিজ্ঞান বিষয়ক উপদেষ্টা পরিষদের চেয়ারম্যান রাও এ দিন বলেন, “ভারতের ভবিষ্যৎ দাঁড়িয়ে রয়েছে বিজ্ঞানের উপরে।” সেটা কেমন, তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে রাও বলেন, “দুনিয়ায় যে সব দেশ উন্নতি করেছে, তারা সকলেই বিজ্ঞানে উন্নত।” তাঁর কথায়, “শিক্ষায় এবং বিজ্ঞানে বিনিয়োগ আরও বাড়ানো উচিত, যাতে ভারতের ভবিষ্যৎ আরও সুরক্ষিত হয়।” এর পরেই তিনি বলেন, “শুধু সেনসেক্স আর বাণিজ্য ভাল হলেই দেশ উন্নতি করবে না। এতে বড়জোর পাঁচ বা দশ বছরের জন্য পরিস্থিতি বদলাতে পারে। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নের জন্য বিজ্ঞান ছাড়া গতি নেই।”
রাওয়ের এই বক্তব্য কিন্তু উন্নত দেশগুলির প্রথম সারির অর্থনীতিবিদদের অনেকেই এখন মানছেন। সম্প্রতি ভারতীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময়ে জাপানের ডাই চি রিসার্চের প্রধান অর্থনীতিবিদ হিদেও কুমানো বলেন, “জাপানের অর্থনীতি এখন যে থমকে গিয়েছে, তাতে বিজ্ঞানে নতুন আবিষ্কার না হলে সেখান থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব নয়।” কেউ কেউ বলেছেন, জাপান বিজ্ঞানে উন্নত বলেই তাকে অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি বলে মনে করছেন হিদেও। ভারতের ক্ষেত্রে সেটা কতটা ঠিক, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
আজ প্রকারান্তরে রাও দেশের বিজ্ঞানচর্চাকে সেই জায়গাতেই তুলে নিয়ে যাওয়ার কথাই বলেছেন। তাঁর মতে, সে জন্য বিজ্ঞানচর্চার পরিকাঠামো তৈরি করা প্রয়োজন। আর তার জন্য চাই বিপুল অর্থ। সেই টাকার সংস্থান ঠিক মতো করা হয় না বলে এর পরে রাও দুষেছেন রাজনীতিকদের। মেজাজ হারিয়ে বলেছেন, “কেন এই নির্বোধেরা, এই রাজনীতিকেরা আমাদের জন্য এত কম বরাদ্দ রাখেন?” এর সঙ্গে তিনি জুড়ে দেন, “তা সত্ত্বেও আমরা, বিজ্ঞানীরা কিছু করে দেখিয়েছি।”
বিজ্ঞানচর্চা বা গবেষণার ক্ষেত্রে কত টাকা দরকার? সরাসরি কোনও অঙ্ক বলেননি রাও। তবে বলেছেন, “আমাদের জন্য যে লগ্নি করা হয়, তা অত্যন্ত কম। হাতে পেতেও অনেক সময় লাগে। যা আমরা পাই, তাই দিয়েই কাজ করি।” যে পরিমাণ অর্থ গবেষণার জন্য পাওয়া যায়, তাকে শুধু খারাপ বলতে তিনি নারাজ। বলেছেন, “ওটা কোনও টাকাই নয়।” বলেছেন, “সরকার যে সহায়তা দেয় তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেকই কম। এটাকে আরও বাড়ানো যায়।” বাড়ালে কী হবে, বলতে গিয়ে রাওয়ের বক্তব্য, “আমরা শিক্ষা এবং বিজ্ঞানচর্চায় কতটা লগ্নি করব, তার উপরে দাঁড়িয়ে আছে ভারতের ভবিষ্যৎ।” তাঁর কথায়, এখন মাত্র দু’শতাংশ বরাদ্দ হয় এর জন্য। এই লগ্নি বাড়ানো উচিত।
রাওয়ের এই মন্তব্য নিয়ে শাসক দল কংগ্রেস প্রকাশ্যে কিছু বলতে চায়নি। তবে ঘরোয়া আলোচনায় কংগ্রেস নেতারাও মেনে নিয়েছেন, স্বাস্থ্য-শিক্ষার মতো সামাজিক ক্ষেত্রে বরাদ্দ অনেক কম। সে জন্য সাধারণ মানুষের মধ্যেও ক্ষোভ থাকে। রাওয়ের আজকের বক্তব্যে তারই প্রতিফলন রয়েছে। একই সঙ্গে তাঁদের বক্তব্য, টাকা দিতেই চায় সরকার। কিন্তু তার অন্য অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। তাই বেশি টাকা বরাদ্দ করা সম্ভব হয় না। তাঁরা এ-ও বলছেন যে, কিন্তু এই যে মঙ্গলযান উৎক্ষেপণ করা হয়, সেটাও তো প্রধানমন্ত্রী উৎসাহী হয়েছেন বলেই। রাজনীতিকরা সকলে নির্বোধ হলে কি সেটা হত?
রাও এ দিন একই সঙ্গে তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রকেও তুলোধোনা করেছেন। কোনটা বিজ্ঞান এবং কোনটা নয়, সে ব্যাপারে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, “তথ্যপ্রযুক্তির সঙ্গে বিজ্ঞানের কোনও যোগ নেই। তথ্যপ্রযুক্তি শুধু কিছু লোকের টাকা রোজগারের একটা পথ। আর তারা কারা জানেন? তারা সকলে খুব অসুখী মানুষ।”
কেন এ কথা বলছেন, ব্যাখ্যা করতে গিয়ে রাও বলেন, “প্রায় রোজই দেখি, কেউ হয়তো খুন হয়েছেন, কেউ আত্মহত্যা করেছেন। কেউ এতটাই অবসাদগ্রস্ত যে, তাঁর কাছে জীবনটাই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে।” রাওয়ের সাফ কথা, “আমার দিকে তাকান। দেখুন, আমি ৮০ বছর বয়সেও কতটা আনন্দে রয়েছি!” কেন? জবাবটা দিলেন তাঁর স্ত্রী ইন্দুমতী। বললেন, “বিজ্ঞানে ঢুকলেই ওঁর বয়স কমে যায়। ওঁর ছাত্রদের থেকেও উনি ছোট হয়ে যান!”
এ দিন সেই বিজ্ঞানের জন্যই গলা ফাটালেন রাও।

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.