কোথাও জল দীর্ঘ ক্ষণ ধরে জমে থাকছে, কোথাও আবার জল ব্যাক ফ্লো করছে। জল নামানোর যা ব্যবস্থা, তাতে সময়ের চেয়ে বেশি ক্ষণ ধরে জল জমে থাকছে। পাম্প চালিয়েও লাভ হচ্ছে না।
বছরভর বিধাননগরে এমন সমস্যায় প্রশাসনের কপালে ভাঁজ ফেলেছে। সমীক্ষার পরে পুরকর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেন, আমূল সংস্কারই একমাত্র সমাধানের পথ। সেইমতো অবশেষে নিকাশি ব্যবস্থার সংস্কারে সাত কোটি টাকার একটি খসড়া প্রকল্প তৈরি করে রাজ্য সরকারকে পাঠাতে চলেছে বিধাননগর পুরসভা। কিন্তু যে সব খালে গিয়ে বর্ষা বা নিকাশির জল পড়ে, সেগুলির উন্নতি না করে স্রেফ একটি এলাকার নিকাশি কাঠামো সংস্কার করে আদৌ লাভ হবে কি, প্রশ্ন উঠছে তা নিয়ে।
পুর-কর্তৃপক্ষের মতে, রাজ্য সরকার যদি খালগুলির বহন ক্ষমতা বাড়াতে পারে, তবে বিধাননগরের নিকাশি ব্যবস্থাকে একই ভাবে শক্তিশালী করে তোলা যাবে। রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের দাবি, খালগুলির দু’ধারের এলাকাগুলির উন্নয়নে সার্বিক ভাবেই পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। এক দফা সংস্কার হয়েছে। আগামী বর্ষার আগেই সংস্কারের কাজ শেষ করা হবে।
সমস্যা ঠিক কোথায়?
পুর-প্রশাসনের একাংশের মতে, বিধানগরের দু’টি সেক্টরে ভূমির ঢাল মেনে জমা জল গিয়ে কেষ্টপুর খালে পড়ে। ৩ নম্বর সেক্টরে অবশ্য জমা জল ইস্টার্ন ড্রেনেজ চ্যানেলে ফেলা হয়। অন্য দিকে, নিকাশির ক্ষেত্রে বিধাননগরের ভরসা বাগজোলা খাল। তাই সেগুলির বহন ক্ষমতা বাড়লে বিধাননগরের সমস্যা অনেকটাই কমে যাবে।
বিধাননগরে মোট ৮টি স্যুয়ারেজ পাম্পিং স্টেশন ও একটি ড্রেনেজ পাম্পিং স্টেশন রয়েছে। স্যুয়ারেজ পাম্পিং স্টেশনগুলিতে ৪-৬টি মোটর রয়েছে এবং কমবেশি ৪০টি নন-রির্টান ভালভ্ ও স্লুইস গেট রয়েছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, দীর্ঘ দিনের পুরনো ওই পাম্পিং স্টেশনের মোটরগুলি অকেজো হয়ে রয়েছে। ফলে জমা জল সরাতে বেশি সময় লাগছে।
পাম্পিং স্টেশনগুলির সার্বিক সংস্কারের মতো নিকাশির একাধিক ত্রুটির ক্ষেত্রে সংশোধনের পরিকল্পনা করেছে পুর-প্রশাসন। কিন্তু এই পরিকল্পনা ঘিরেও প্রশ্ন রয়েছে খোদ প্রশাসনিক মহলেই। যেমন সার্বিক ভাবে নিকাশি ব্যবস্থায় ক্ষমতা বৃদ্ধির কোনও পরিকল্পনা নেই। পাশাপাশি বিধানগরের ভূমির ঢাল বর্তমানে কী অবস্থায় রয়েছে, তার সমীক্ষাও হয়নি। সূত্রের খবর, ভূমির ঢালের চলতি অবস্থা দেখতে জিপিআরএস ব্যবস্থা চালুর পক্ষপাতী পুরসভা। কিন্তু অর্থের অভাবেই হয়নি।
ফলে নিকাশি সংস্কারের খসড়া প্রকল্পের সাফল্য নিয়ে শঙ্কা থাকছে বলেই মত একাংশের। বিধাননগর পুরসভার চেয়ারম্যান পারিষদ (নিকাশি) দেবাশিস জানার দাবি, শুধু বিধাননগরে নিকাশি ব্যবস্থার শক্তি বৃদ্ধি করলেই কাজ হবে না। কেন না বাগজোলা-সহ অন্য খাল দু’টির বহন ক্ষমতাও বাড়াতে হবে। তিনি বলেন, “বিধাননগরের নিকাশি ব্যবস্থা অবিলম্বে না সংস্কার হলে বিপদ বাড়বে। তাই চলতি ব্যবস্থার উন্নয়নে এই প্রকল্প। রাজ্য সরকারের কাছে দ্রুত পাঠানো হচ্ছে।”
এই প্রসঙ্গে পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, “খালগুলির সংস্কারের কাজ এক দফা হয়েছে। আরও হবে। ফলে সমস্যা কমে যাবে। তবে খালগুলির বহন ক্ষমতা বাড়ানোর অবশ্যই প্রয়োজন। সে পরিকল্পনাও চলছে। পুরসভা প্রস্তাব পাঠালে নিশ্চিত ভাবেই সহযোগিতা করা হবে। পাশাপাশি, ভূমির ঢাল পরীক্ষা করতে যদি অর্থের সমস্যা হয়, সে ক্ষেত্রে বিধাননগরের তরফে প্রস্তাব পেলে তারও ব্যবস্থা করা হবে।”
সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “শুধু বিধাননগরের জন্যই নয়, খালের দু’পাড়ের একাধিক এলাকার স্বার্থেই সংস্কার জরুরি। পলি তোলা, লক গেটের মেরামতি-সহ একাধিক পরিকল্পনায় সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে। তবে ইচ্ছা করলেই নাব্যতা বাড়ানো যায় না। সব দিক খতিয়ে দেখেই পরিকল্পনা করা হয়েছে।” |