ছ’বছরেও সেতু হয়নি, মেলেনি ক্ষতিপূরণও
নিম্নচাপের বৃষ্টি থেকে মাথা বাঁচাতে কজওয়ের হিউম পাইপের মধ্যে আশ্রয় নিয়েছিলেন তিন গ্রামবাসী। হঠাৎ হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়েছিল রাজনগরের কাঁটাশোলা গ্রামের ওই কজওয়েটি। কেউ বাঁচেননি সেদিন। বছর ছয়েক আগের ওই অশুভ দিনের কথা এখনও ভুলতে পারেননি গ্রামবাসী বা ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলি। তবে বাসিন্দাদের দাবি মেনে এখনও সেই ভাসাপুল বা কজওয়েটি তৈরি হয়নি। এমনকী তিন ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের মধ্যে দু’টি পরিবার কোনও সরকারি সাহায্য এখনও পায়নি।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অক্ষেপ, মাত্র শ’খানেক মিটার চওড়া গুরুত্বপূর্ণ ভাসাপুলটি তৈরি করিয়ে দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ না নিয়েছিল তৎকালিন বাম সরকার, না বর্তমানে ক্ষমতাসীন তৃণমূল সরকার। অথচ কজওয়েটি হয়ে গেলে শুধু রাজনগরের বেশ কিছু গ্রামের মানুষই উপকৃত হবেন না, উপকৃত হবেন লাগোয়া ঝাড়খণ্ডের বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষও। সব থেকে বড় বিষয়, সিউড়ি থেকে মশানজোড় যাওয়ার রাস্তার দূরত্ব এক ধাক্কায় কমে যাবে অন্তত ২০ কিলোমিটার।
সুদিন ফিরবে কি না জানেন না কাঁটাশোলা গ্রামের বাসিন্দারা। ছবি: দয়াল সেনগুপ্ত।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজনগরের চন্দ্রপুর পঞ্চায়েত এলাকায় থাকা কাঁটাশোলা গ্রামের কিছুটা দূরেই রয়েছে কজওয়েটি। এটি কাঁটাশোলা কাঁদর নামেই পরিচিত। কিছুটা গিয়ে কাঁদরটি কুশকর্ণিকা নদীতে মিশছে। সাধারণত বর্ষাকলের ৪-৫ মাস বাদে তেমন জল থাকে না কাঁদরে। ফলে কিছুটা মোরাম ছড়িয়ে রাস্তা করে দিব্যি চলাচল করা যায়। কিন্তু বার্ষার মাসগুলিতে চরম দূর্ভোগে পড়তে হয়ে বলে জানিয়েছেন এলাকার বাসিন্দারা। গৌরাঙ্গ ঘোষ, সপ্তম দলুই, নির্মলকুমার সাধু, সুজয় মণ্ডল, পরেশ পাল বলেন, “কাঁদরের এ-পারে থাকা কাঁটাশোলা, গণেশপুর, ভবানীপুর, বেলেড়া, নতুনগ্রাম বা ও-পারে থাকা রামডাঙা, হরিপুর এবং ঝাড়খণ্ডের বাংলা, কুমকুমা, আমজোড়ার মতো বহু গ্রামের মানুষ ওই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করেন বিভিন্ন কাজে, সেটা জমির ফসল দেখভাল করতেই হোক বা ফসল ঘরে তুলতে কিংবা ব্যবসার জন্য।” বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, বছর কয়েক আগে ঝাড়খণ্ডে অমজোড়ার কাছে ময়ূরাক্ষ্মী নদীর উপর সেতু হয়ে যাওয়ায় রাজনগরের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রটি উন্নত হতে পারতো। অসুবিধা করেছে এই ভাঙা কজওয়েটি। একসময় সিউড়ি-আমজোড়া রুটের বাস এই পথে চলাচল করত। ২০০৭ সালের ৮ অক্টোবর মাসে কজওয়ে ভেঙে পড়ার পর থেকেই এই পথ ছেড়ে দিয়েছে বাস মালিকেরা।
এই অবস্থায় কুশকর্ণিকা নদীর উপর থাকা কানমোড়া সেতু হয়ে ঘুরে যেতে হলে কমপক্ষে ১০ কিলোমিটার পথ বেশি যেতে হয়। প্রশাসনের সব স্তরের দৃষ্টি অকর্ষণ করেও বিশেষ কিছু হয়নি বলে ক্ষোভ বাসিন্দাদের। তাঁদের দাবি, সেতুটি হলে সিউড়ি থাকে রাজনগরের সিসালফার্ম বা সিউড়ি-মশানজোড়ের দূরত্ব আনেকটাই কমে যেত। তখন সকলেরই সুবিধা হত। রাজনগর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তৃণমূলর সুকুমার সাধুর (গত পাঁচ বছর সংশ্লিষ্ট চন্দ্রপুর পঞ্চায়েতর উপ-প্রধান ছিলেন) দাবি, “আমাদের তরফে চেষ্টা করা হলেও, যেহেতু পঞ্চায়েত সমিতি বা জেলা পরিষদের ক্ষমতায় বামেরা ছিল তাই সে ভাবে কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে পারিনি। তবে ক্ষমতায় এসেই উক্ত সেতুটির ব্যাপারে জেলাপরিষদের সভাধিপতির সঙ্গে কথা হয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করব।”
ক্ষতিগ্রস্থ দু’টি পরিবার সাহায্য না পাওয়ার পিছনেও তৎকালীন ক্ষমতাসীন বমেদের দিকেই অভিযোগের আঙুল তুলছেন সুকুমারবাবু। জোলাপরিষদের সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরীও বলেন, “ভাসাপুলটি আমি এখনও দেখিনি। খুব শীঘ্রই দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের চেষ্টা করছি। তবে দুর্ঘটনা বা ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণের বিষয়টি নিয়ে আমার কিছু জানা নেই।” এ ব্যাপারে রাজনগর পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সভাপতি, সিপিএমের অঞ্জনা মণ্ডল বলেন, “আমাদের আন্তরিকতায় ঘাটতি ছিল না। কিন্তু রাজ্যে সরকার পরিবর্তন হয়ে যাওয়ার পরে, আমরা জেলাপরিষদ বা পঞ্চায়েত সমিতিতে ক্ষমতায় থাকলেও সেই অর্থে সাহায্য পাইনি।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.