বাঙালির সত্যিই বারো মাসে তেরো পার্বণ।
দু’দিনের কার্তিক লড়াই শেষ হতে না হতেই তাই কাটোয়ার পাশের ছোট শহর দাঁইহাট মজেছে রাস উৎসবে। আজ, সোমবার ছোটবড় মিলিয়ে শহরের ৫৫ জন পুজো উদ্যোক্তা যোগ দেবেন রাসের শোভাযাত্রায়। তবে রাস উৎসবে যোগ দিয়েছে ৭২টি পুজো। |
শোভাযাত্রা সুষ্ঠু ভাবে করার জন্য দাঁইহাট পুরসভা, পুলিশ, কাটোয়া ২ ব্লক প্রশাসন ও দাঁইহাট কেন্দ্রীয় রাস উৎসব কমিটির তরফে নানা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, দাঁইহাট বাজার হয়ে সুভাষ রোড, স্টেশন রোড, চামপচা রোড ও সমাজবাড়ি হয়ে শোভাযাত্রা যাবে। রাস্তার নর্দমাগুলি অস্থায়ী ভাবে ঢেকে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। রাস্তার নানা জায়গায় স্বাস্থ্য শিবির ও পানীয় জলের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। এছাড়া শহরের শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় পুলিশ ও দাঁইহাট কেন্দ্রীয় রাস উৎসব কমিটির স্বেচ্ছাসেবীরা থাকবেন। শহরের বেশ কিছু রাস্তায় নো-এন্ট্রি থাকবে বলেও পুরকর্তারা জানিয়েছেন।
উদ্যোক্তাদের তরফে জানা গিয়েছে, শোভাযাত্রায় বিভিন্ন রকম লোকনৃত্যের পাশাপাশি মঙ্গলযান, ক্যান্সার নিয়ে সচেতন করার জন্য বিশেষ ট্যাবলোও থাকবে। থাকবে নানা দেবদেবীর মূর্তিও। এছাড়া আলোকসজ্জার বৈচিত্র্যও নজর কাড়বে। কেন্দ্রীয় রাস কমিটির দাবি মেনে গভীর রাত পর্যন্ত পরিবহণ ব্যবস্থা সচল থাকবে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। কমিটির সম্পাদক সন্দীপ দাস বলেন, “আমরা ব্লক প্রশাসনের কাছে ১৯ দফা দাবি জানিয়েছিলাম। তার বেশিরভাগই মেনে নেওয়া হয়েছে।” |
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রথমে কোনও মূর্তি নয়, পটচিত্রেই বিভিন্ন দেবদেবীর পুজো হত। বিসর্জনের দিনে নৌকা করে পটগুলিকে ভাগীরথীতে ঘোরানো হত। সেই কারণেই দাঁইহাটে রাস উৎসব এক সময়ে ‘পট পূর্ণিমা উৎসব’ নামে পরিচিত ছিল। পরবর্তীকালে অবশ্য শাক্ত মতাবলম্বীরাও রাস উৎসবে জড়িয়ে পড়েন। স্থানীয় শবশিবপাড়ায় কালীপুজোর মধ্যে দিয়েই দাঁইহাটে শুরু হয় রাস উৎসব। রাস-গবেষক অশেষ কয়াল বলেন, “১৯৫০-৫১ সালে শেষ বারের মত পট নিয়ে রাসের শোভাযাত্রা বের হয়েছিল। পটটি চিত্রিত করেছিলেন পাতাইহাটের পূর্ণচন্দ্র আচার্য।”এ বছর ‘ক্লাব প্রীতম’ তাঁদের মণ্ডপে ফুটিয়ে তুলেছে বৃন্দাবনের মধুবন। শ্রীকৃষ্ণের ননি-চুরি থেকে বকাসুর বধের নানা দৃশ্য তুলে ধরা হয়েছে সেখানে। ক্লাব সদস্যরাই ১৫ দিন ধরে দিনরাত এক করে মণ্ডপ তৈরি করেছেন। পুরনো কাটোয়া-কালনা রোডের বিবেকানন্দ ক্লাব আবার তাদের মণ্ডপে মহাভারতের নানা দৃশ্য তুলে ধরেছে। মণ্ডপটি তৈরি করা হয়েছে সেগুন কাঠ দিয়ে। এ ছাড়া মাতঙ্গিনী, নট্টরাজ প্রমুখ ক্লাবের মণ্ডপও চোখে পড়ার মতো। দাঁইহাটের বিশিষ্ঠ শিক্ষক দেবীপ্রসন্ন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “রাস উৎসব আমাদের আবেগ। তাই পকেটে টান থাকলেও উৎসবে খামতি নেই।”
|
ছবি তুলেছেন অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়। |