|
|
|
|
বিদ্যুৎ থেকে শৌচাগার, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে সবই অমিল |
নিজস্ব সংবাদদাতা • দুর্গাপুর |
শৌচাগার, বিদ্যুৎ থেকে শুরু করে স্থায়ী পানীয় জলের ব্যবস্থা বা পাকা বাড়ি কোনওটাই নেই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রটির। এমনকী, মাসখানেক ধরে বন্ধ মিড-ডে মিলও। দুর্গাপুর পুরসভার ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের আনন্দপুরের শিশুশিক্ষাকেন্দ্রটির হাল এমনই।
২০০১ সালে স্থানীয় ক্যানেল পাড়ে একটি ঘর ও একটি বারান্দা নিয়ে শুরু হয়েছিল কেন্দ্রটি। অ্যাসবেস্টসের চাল দেওয়া নতুন ঘরে প্রায় ৯০ জন পড়ুয়ার ক্লাস নিতেন শিক্ষিকারা। রান্না বা অন্যান্য কাজের জন্য ছিলেন রাঁধুনি, সহায়িকারাও। কিন্তু কয়েক বছর পর থেকেই আশপাশের এলাকার নিকাশি না থাকার খেসারত দিতে হয় কেন্দ্রটিকে। ওই অঙ্গনওয়ানি কেন্দ্রটি সূত্রে জানা গিয়েছে, আনন্দপুরের ওই এলাকায় গড়ে ওঠা নতুন বাড়িগুলির বেশিরভাগেরই শৌচাগার নেই, নেই উপযুক্ত নিকাশি ব্যবস্থাও। ফলে সামান্য বৃষ্টিতে এলাকার নোংরা জল ঢুকে যায় কেন্দ্রটির মধ্যে। কিছু দিন আগে শিক্ষিকারা চাঁদা দিয়ে শিশুশিক্ষাকেন্দ্রটির পাশে একটি নর্দমা গড়েছিলেন। কিন্তু সর্বশিক্ষা মিশনের আওতায় ওখানে নতুন একটি ঘর হয়। ফলে নিকাশি ব্যবস্থা আবারও নষ্ট হয়ে যায়। অস্বাস্থ্যকর এই পরিবেশে শিশুদের পড়াশোনায় মন বসানো একেবারেই সম্ভব হয় না বলে দাবি শিক্ষিকাদের। এছাড়া কেন্দ্রটির নিজস্ব কোনও শৌচাগার নেই। খুদে পড়ুয়ারা খোলা জায়গাতেই শৌচকর্ম করে। ফলে সংক্রমণের আশঙ্কাও থেকে যায়। শৌচাগার না থাকায় বিপাকে পড়েন শিক্ষিকা বা সহায়িকারাও। তাঁরাই জানান, পাশেই দামোদরের ক্যানাল। ছোটরা মাঝেমধ্যেই নানা ছুতোয় জলে নেমে পড়ে। সেখান থেকেও বড়সড় বিপদের সম্ভাবনা রয়ে যায় বলে তাঁদের দাবি। কিন্তু নির্মল ভারত অভিযান যোজনায় যেখানে প্রত্যেক স্কুলকে শৌচাগার গড়ার জন্য টাকা দেওয়া হচ্ছে সেখানে এই কেন্দ্রটির দশা দেখে চিন্তিত নানা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাও। |
|
জমে নোংরা।—নিজস্ব চিত্র। |
শৌচাগার ছাড়া শিশুশিক্ষাকেন্দ্রটির আরেক সমস্যা হল বিদ্যুৎ না থাকা। শিক্ষিকাদের অভিযোগ, বর্ষার দিনে বা আকাশ মেঘলা হলেই ঘর অন্ধকার হয় যায়। তখন শিশুদের পড়ানোই মুশকিল। এছাড়া স্কুল শুরুর সময় যে অ্যাসবেস্টস লাগানো হয়েছিল, নিয়মিত দেখভালের অভাবে তা ফুটো হয়ে গিয়েছে। ফলে বৃষ্টি হলেই ছাদ চুঁইয়ে জল পড়ে। স্থায়ী পানীয় জলের ব্যবস্থা না থাকায় পড়ুয়াদের চেয়ে থাকতে কখন পুরসভার কলে জল আসবে। এই পরিস্থিতিতে কোথায় রান্না হবে, কোথায় খাওয়া হবে, হাত, ধোওয়া, থালা ধোওয়াই বা কোথায় হবে, সেই সমস্যায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে মিড-ডে মিলের রান্না। এক শিক্ষিকা জানান, পরিচালন সমিতির তরফে গত এক মাস ধরে মিড-ডে মিলের রান্না বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। স্কুলের এক কর্মীর দাবি, লিখিত ভাবে শিশুশিক্ষাকেন্দ্রের পরিস্থিতির কথা সংশ্লিষ্ট কতৃর্পক্ষকে জানানো হয়েছে। কিন্তু এত সব সমস্যার জেরে ক্রমাগত কমছে পড়ুয়া সংখ্যা। ৯০ থেকে কমে বর্তমানে পড়ুয়া দাঁড়িয়েছে ৪০-এ।
আইসিডিএস সুপারভাইজার সুকান্ত সেন জানান, তিনি স্কুলে গিয়ে পরিস্থিতি দেখে এসেছেন। সমিতির তরফে আর্থিক সমস্যা, সব্জি রাখার সমস্যার কথা জানানো হয়েছে। জল ঢুকে ঘরগুলি অপরিচ্ছন্ন হয়ে যাওয়ার জন্যই মিড-ডে মিল রান্না করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন তিনি। তবে তাঁর আশ্বাস, সমস্যার সমাধান করে শীঘ্রই রান্না শুরু হবে। শিক্ষাকেন্দ্রটির এ হেন পরিস্থিতির কথা দুর্গাপুরের মহকুমাশাসক কস্তুরী সেনগুপ্তকে জানানো হলে তিনি বলেন, “বিষয়টি জানা ছিল না। মিড-ডে মিল যত শীঘ্র চালু হয় সে ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা নেব। আর সমস্ত শিক্ষাকেন্দ্রে শৌচাগার থাকা একান্ত জরুরি। নির্মল ভারত অভিযান প্রকল্পে শৌচাগার তৈরির উপর জোর দেওয়া হচ্ছে। ওই শিক্ষাকেন্দ্রেও যাতে শৌচাগার গড়া যায় সে ব্যাপারে খোঁজ নেব।” |
|
|
|
|
|