তিনি এখনও তৃণমূলের ঘরে। কিন্তু গোটা রাজ্যে কংগ্রেস ফের ঘুরে দাঁড়াবে বলে স্বপ্ন দেখছেন সোমেন মিত্র।
নেত্রীর বিরুদ্ধে ‘বিদ্রোহ’ করে ইতিমধ্যেই সাসপেন্ড হয়ে গিয়েছেন সোমেন-জায়া শিখা। সোমেন নিজেও রোজ তৃণমূল ‘ছাড়ছি-ছাড়ব’ করছেন। কিন্তু আগুপিছু হিসেব কষেই সম্ভবত নিজে থেকে ছাড়তে পারছেন না।
শনিবারও উত্তর ২৪ পরগনার হাবরায় কুমড়া কাশীপুর জুনিয়র হাইস্কুলের মাঠে প্রয়াত কংগ্রেস নেতা আবদুল হামিদ মণ্ডলের স্মরণসভায় গিয়ে ডায়মন্ড হারবারের তৃণমূল সাংসদ সোমেন বলেন, “যে কথা বারবার বলছি, তৃণমূল ছাড়ব এই নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। তবে, যত দিন তৃণমূল আমাকে না ছাড়ছে তত ক্ষণ কোথায় যাব তা নিয়ে সিদ্ধান্ত নিইনি। এই নৈতিকতাটুকু আমার আছে। আমার বিশ্বাস উত্তর ২৪ পরগনা-সহ গোটা রাজ্যে কংগ্রেস আবার ঘুরে দাঁড়াবে।”
যা শুনে তৃণমূলের মহাসচিব তথা রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের টিপ্পনী, “এটা তো একটা রাজনৈতিক রসিকতা। ওঁর আদৌ যদি নৈতিকতা থাকত, উনি এই কথা বলতেন? ওঁর উদ্দেশ্য তো স্পষ্ট!” প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টার্চাযের মন্তব্য, “ওই হিটলারি গণতন্ত্রের দলে কেউ কি বেশি দিন থাকতে পারে? যাঁরা আমাদের ছেড়ে গিয়েছেন, ফিরতে চাইলে সব সময়েই স্বাগত।”
কিন্তু যাদবপুরের তৃণমূল সাংসদ কবীর সুমন যা করেছিলেন, সোমেনও কার্যত একই ছকে খেলছেন। নিজে থেকে তৃণমূল ছাড়লে দলত্যাগ বিরোধী আইনের গেরোয় তাঁকে সাংসদ পদ খোয়াতে হবে। কিন্তু তৃণমূল যদি তাঁকে বহিষ্কার করে, সে ক্ষেত্রে কোনও দলের সঙ্গে যুক্ত নয় (ডিট্যাচড) এমন সাংসদ হিসেবে তিনি সংসদে থেকে যাবেন। সেই সঙ্গে বজায় থাকবে সাংসদ হিসেবে প্রাপ্য যাবতীয় সুযোগ-সুবিধাও।
তৃণমূল সূত্রের খবর, আসন্ন লোকসভা ভোটে সোমেনের টিকিট পাওয়ার প্রায় কোনও সম্ভাবনাই নেই। অর্থাৎ ফের দাঁড়াতে হলে তাঁকে দল বদলাতেই হবে। কংগ্রেসের একাংশও তাঁকে ফেরাতে চাইছে। এ দিন সভায় রাজ্য যুব কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি অমিতাভ চক্রবর্তী, জলপাইগুড়ির কংগ্রেস বিধায়ক সুখবিলাস বর্মা, দলের উত্তর ২৪ পরগনার সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ সমাদ্দার প্রমুখ হাজির ছিলেন। বিশ্বজিৎবাবু তাঁকে ‘আমাদের সাংসদ, আমাদের নেতা’ সম্বোধন করে বলেন,“আগামী দিনে ওঁকে সামনে রেখেই আমরা রাজনীতি করতে চাই।” অমিতাভবাবু বলেন, “দলের খারাপ সময়ে সোমেনবাবু আশা জাগাচ্ছেন।”
এ দিনই মধ্যমগ্রামে তৃণমূল জেলা অফিসে খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ও স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের উপস্থিতিতে নিউ ব্যারাকপুরের তিন কংগ্রেস কাউন্সিলর তৃণমূলে যোগ দেন। ক’দিন বাদে সেখানে পুরভোট। যে কথা তুলে রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী তথা হাবরার বিধায়ক জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের কটাক্ষ, “সোমেনবাবু তৃণমূল ছাড়বেন না কি কংগ্রেসে যোগ দেবেন, তা নিয়ে আমি মন্তব্য করব না। তবে উনি কংগ্রেসের ঘুরে দাঁড়ানোর যে স্বপ্ন দেখছেন, তা অলীক।” |