এক দিনেই নুন-গুজব অনেকটা স্তিমিত। তবু রাজ্যের বিভিন্ন বাজারে নজর রাখতে শনি ও রবিবার খাদ্য দফতরের ৩০০ জন পরিদর্শকের ছুটি বাতিল করল সরকার। স্বরাষ্ট্রসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, গুজব কোথা থেকে ছড়ালো, তা তদন্ত করে দেখতে রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (আইবি)-কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এ দিন সর্বশেষ পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক এনফোর্সমেন্ট ব্রাঞ্চের কয়েক জন কর্তা এবং উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের নুন ব্যবসায়ীদের নিয়ে বৈঠক করেন। সেখানে ঠিক হয়, খাদ্য দফতরের এক জন পরিদর্শক চিৎপুরে দিনরাত থেকে নজরদারি করবেন রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কত নুন শহরে ঢুকছে, কত নুন কোথায় পাঠানো হচ্ছে। বৈঠক শেষে খাদ্যমন্ত্রী চিৎপুরের নুন-গুদাম পরিদর্শনও করেন। তিনি বলেন, “এখনই যা নুন মজুত রয়েছে তাতে আগামী এক বছর রাজ্যে কোনও সমস্যা হবে না।” |
মজুত কোথায় কত বস্তা |
চিৎপুর |
৩ লক্ষ * |
উত্তরবঙ্গ |
৫০ হাজার |
মুর্শিদাবাদ |
৩০ হাজার |
বীরভূম |
২০ হাজার |
খড়গপুর |
১ লক্ষ |
বর্ধমান |
৩০ হাজার |
বাঁকুড়া |
২০ হাজার |
পুরুলিয়া |
১৫ হাজার |
মোট ৫ লক্ষ ৬৫ হাজার
(২ কোটি ৮২ লক্ষ
৫০ হাজার টন) |
* প্রতি বস্তায় ৫০ কেজি
তথ্যসূত্র: রাজ্য খাদ্য দফতর |
|
পড়শি রাজ্য ওড়িশা, বিহার ও অসমের পর নুন নিয়ে গুজব ছড়িয়েছে এ রাজ্যেও। সেই গুজবে ডানা মেলে শুক্রবার পাহাড় থেকে জঙ্গল এলাকার বহু দোকানে লম্বা লাইন পড়ে। সর্বত্রই উদ্দেশ্য ছিল নুন মজুত করে রাখা। যারা এই গুজব ছড়িয়ে কৃত্রিম সঙ্কট তৈরির চেষ্টা করছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য গত কালই নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। এটা যে একটা গুজব, তা মনে করেন বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বসুও। এ দিন কলকাতায় এক অনুষ্ঠানে তিনি ওই কথা বলেন। তবে নুন নিয়ে গুজব ছড়ানোর জন্য সরকার বিরোধী দলগুলির দিকে অভিযোগের আঙুল তোলায় বিমানবাবু তা উড়িয়ে দেন।
প্রশ্ন উঠেছে, কারা গুজব ছড়ালো? খাদ্যমন্ত্রীর দাবি, “মালদহের কয়েক জন নুন ব্যবসায়ী সঙ্কট তৈরির গুজব রটিয়েছেন। নিমেষে তা ছড়িয়ে পড়েছে রাজ্যের ৩০-৪০টি এলাকায়। সোমবারের মধ্যে আসল ছবিটা জানার পর মুখ্যমন্ত্রীকে একটি রিপোর্ট দেব।” একই সঙ্গে তাঁর অভিযোগ, “রাজ্যে নুন গুজবের পিছনে রয়েছে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির কিছু নেতা এই গুজব ছড়িয়েছে। ” মন্ত্রীর দাবি, প্রথমে পেঁয়াজ, তার পর আলু। আর এখন নুন নিয়ে সঙ্কট তৈরির চেষ্টা হচ্ছে। এর পরে চাল বা ওই ধরনের কোনও নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য নিয়ে গুজব ছড়িয়ে সরকারকে বিপদে ফেলার চেষ্টা হতে পারে।
এ দিনের পর্যালোচনা বৈঠকে খাদ্যসচিবের পেশ করা রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, রাজ্যে মোট ৫ লক্ষ ৬৫ হাজার বস্তা (প্রতি বস্তায় ৫০ কিলোগ্রাম) নুন মজুত রয়েছে। আগামী মঙ্গলবার আরও ৮৫০০ টন নুন আসবে অন্য রাজ্য থেকে। চিৎপুরের গুদাম পরিদর্শনের পরে সরকারি কর্তারা জানান, সেখানে ৩ লক্ষ বস্তা নুন রয়েছে। এই নুন খোলা বাজারে
বিক্রি হয় যথাক্রমে ৬ এবং ৮ টাকা কেজি দরে। খাদ্য দফতর ঠিক করেছে, এখন থেকে রেশনে নিয়মিত নুন সরবরাহ করা হবে যথাক্রমে ২৫০ গ্রাম, ৫০০ গ্রাম এবং এক কেজির পাউচ প্যাকেটে। |