|
|
|
|
|
|
|
‘সুলভ’ |
মাঝে মাঝেই দুর্লভ অবশ্য। দেখলে শুনলে গা ঘিনঘিন করে, কিন্তু বিপদে সে-ই চূড়ান্ত বন্ধু।
অগতির গতি। জানেন কি, পরশু বিশ্ব শৌচাগার দিবস? লিখেছেন সুস্নাত চৌধুরী। |
ফ্রি কিংবা এক টাকা
নিশিডাকেরও বাড়া হিসিডাক। ডাক এলে, জিপার-সর্বস্ব পুং, আপনি এই আগলবিহীন সমাজে আইন ও ভদ্রতা না মেনে যে-কোনও ওয়ালেই পোস্ট করতে পারেন। তবে, দেওয়ালে দেবদেবী বা মহাপুরুষের টাইল দেখলে তক্ষুনি আঁতকে উঠে ব্যক্তিগত পোস্টাপিস খুলে আপনাকে পৌঁছে যেতে হবে ডাকঘরে। তোমার ডাকে সাড়া দিতেই, বহে গেছে...! আপনি উসেইন-তর গতিতে পৌঁছে যাবেন ওই দূরে— কংক্রিটের আধখাওয়া অ-কর্পোরেট কিউবিক্লে। বলে লাভ নেই, ইটের ধাপে আপনি পা রাখতে পারবেন না; কেন না আপনার আগের জন রাখেননি। কারণ, তার আগের জনও রাখেননি। তার আগের জনও...। বিনে পয়সার পৌনঃপুনিকতার ট্র্যাডিশন কাটাতে চাইলে আপনি তখন খুঁজবেন এই এলাকায় দুর্লভ একটি সুলভ। কমপ্লেক্স তো বটেই ব্যাপারটা। তার ওপর আবার গ্যাঁটগচ্চা আছে। খুচরোর আকালে পার্সে কয়েন না থাকলে রবিঠাকুর-কয়েনেজ’ই আপনার শেষ পারানির কড়ি। ‘দ্বারী মোদের চেনে না যে, বাধা দেয় পথের মাঝে, বাহিরে দাঁড়িয়ে আছি, লও ভিতরে ডেকে ডেকে।’ মুক্ত। ধারা।
আপনিও চেনেন না, আপনার পাশের লোকও চেনেন না বিন্দেশ্বর পাঠককে। পদ্মভূষণ,১৯৯১। এক টাকায় মুক্তির কারিগর। আপনার ওয়াটার-লু যুদ্ধের বিরুদ্ধেই তাঁর ‘সুলভ আন্দোলন’। সেই ১৯৭০-এ তিনিই প্রতিষ্ঠা করেন সুলভ ইন্টারন্যাশনাল সোশাল সার্ভিস অর্গানাইজেশন। আপনি জানেন না তিনি ডবল এম এ। পিএইচ ডি, ১৯৮৫, পটনা বিশ্ববিদ্যালয়। জানেন না, তিনি এই পিএইচ ডি থিসিস লেখার জন্য দিনের পর দিন থেকেছেন বিভিন্ন জমাদার পরিবারের সঙ্গে, যাঁদের কাজ অন্যের বর্জ্য পদার্থ হাতে করে পরিষ্কার করা, এবং তাঁদের জীবনে জীবন মিলিয়ে বিন্দেশ্বর মনে করেছেন: এই মানুষগুলিকে অবমানব করে রাখলে সমগ্র দেশের ও সভ্যতার অপমান। আর তা ছাড়াও দেশের একটি সুস্থ পরিচ্ছন্ন শৌচ-অভ্যাস ও তার পরিকাঠামো গড়ে তোলা উচিত বৈজ্ঞানিক সামাজিক নান্দনিক ও অবশ্যই মানবিক কারণে।
অবশ্য আমাদের পাবলিক ইউরিনালগুলো কতটা ‘মানবিক’ হয়েছে তা নিয়ে তর্ক চলবে। কোনও ‘মানবী’ই নিতান্ত নাচার না হলে সেখানে যেতে চান না। পুরুষদের হায়া এমনিতেই কম, কিন্তু তাঁরাও অনেকেই মনে করেন, সেখানে দাঁড়িয়ে-বসে প্রাকৃতিক কাজকর্ম করতে গেলে প্রকৃতিকেই অপমান করা হয়। তবে, সবাই তো শুধু প্রাকৃতিক কাজ করতে ও অঞ্চলে ছোটেন না। অনেকেই আবার নিখাদ ‘শৈল্পিক’ কারণে ইউরিনালস্থ হন। তাঁরা কাগজে নয়, ওই নির্দিষ্ট জায়গাটির দেওয়ালে নিজস্ব আঁকিবুঁকি কাটতে ভালবাসেন। কেন, তা হয়তো জানেন ফ্রয়েড, বা পিকাসো, বা জন বার্জার। আমরা অতশত জানি না, তবে এটুকু বলতে পারি, তাঁদের সৃষ্টির টার্গেট-দর্শক একটু অদ্ভুত: আগামী ইউরিনকারীরা। সব পেন্টার এক রকম গ্যালারি পছন্দ করেন না, এই চিত্রকরদের প্রিয় এগজিবিশন-রুমের পরিবেশ কিঞ্চিৎ স্বতন্ত্র। গোঁড়া পাবলিক একে ডাকেন ‘অসভ্যতা’, স্বল্প আঁতেল একে ডাকেন ‘গ্রাফিত্তি’, আর ১৯৬৬-তে বার্কলি-র অ্যালান দুন্দে একে ডাকলেন ‘ল্যাট্রিনালিয়া’ বলে।
এ জিনিস, যাকে বলে, স্থানমাহাত্ম্যেই একটি নির্দিষ্ট ব্যাপারের দিকে ঝুঁকে থাকে। আঁকতে হবেই বা কেন, স্রেফ লিখেই প্রকাশ করা যায় সেই আদিম ও জরুরি আর্তি। দিন যত গড়ায়, মাইনাস করার দেওয়ালে শিল্পীরা এঁকে চলেন একের পর এক ‘প্লাস’। এই উন্মোচন- উৎসবে আপনিও শামিল হতে পারেন। সম্ভবত হয়েছেনও। নিজের নামের সঙ্গে জুড়ে দিয়েছেন সেই সব ডাকসাইটে সুন্দরীর নাম, যাঁদের বাসস্টপে তিন মিনিট, কিন্তু স্বপ্নে সারা রাত দেখেছেন। আপনার যৌন একাকিত্ব ‘অমুক+তমুক’-এর নিরামিষ গ্রাফিত্তিতে মেশাল আমিষ মশলা। কথায়-ছবিতে সেই দেওয়াল পত্রিকায় উঠে এল স্মার্ট যৌনতার কথা। সুনির্বাচিত স্ল্যাং। কাঁচা হুমকি। আপনার চোখে তখন অবদমিত কামনার চশমা। নিজেকে একটু আড়ালে রেখে, আর-পাঁচ জনের সামনে স্বরচিত রূপকথার ম্যুরাল প্রদর্শনই কি তাবৎ আর্টের গোড়ার কথা নয়? |
|
ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী। |
বোধহয় সেই জন্যই, সারা পৃথিবীর তাবৎ ইন্টেলেকচুয়াল সমাজবিজ্ঞানীরা হেদিয়ে পড়লেন দেওয়ালের কানে-কানে বলা সেই সব কথা আর ছবি নিয়ে। ব্যাপারটা এত দূরই এগোল আবিশ্ব, গাল পেড়ে দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল ২০০৫-এ নাকি তাদের একটি ওপিনিয়ন কলামের নামই দিয়ে দিল How to earn your Pee h.D!
এত ফুটেজ খাওয়া সেই আপনিও মোক্ষম আনইজি ফিল করলেন, যখন সেই দেওয়ালে চরকসুশ্রুতধন্বন্তরিবিধানরায়তর প্রতিশ্রুতি নিয়ে হাজির হলেন স্বয়ং ডঃ ডি কে লোধ। টাইফয়েড-ভাইরাল-ম্যালেরিয়া-জন্ডিসে অভ্যস্ত, বড় জোর ডেঙ্গি বা চিকুনগুনিয়ার নাম শুনেছেন। এড্স-ও সই। তা বলে, বিচিত্র সব উপসর্গে অতিবিচিত্র আধা-তৎসম আধা-বিদেশি রোগের বিজ্ঞাপন! সরি, রোগ-উপশমেরই বিজ্ঞাপন। এ সব আপনাকে তো লাজুক করে তুলবেই। তাই, ইস্কুলের মতো কাটাকুটি কিংবা মেনপয়েন্ট-মেনপয়েন্ট খেলার প্রশ্নই ওঠে না। বরং আপনাকে না ‘প্যারুরেসিস’ রোগ খেয়ে ফেলে, সে দিকে অতি কড়া লক্ষ রাখলেন আপনি। এ এক বিশেষ কিসিমের স্ফিংটেরিক ফোবিয়া। আর কেউ থাকলেই আটকে যাওয়া। হেব্বি পাচ্ছে, কিন্তু কিছুতেই বেরচ্ছে না। ভাগ্যিস, এ হেন প্রকাশ্য গোপন রোগের টোটকা আপনি জেনে গিয়েছিলেন! ওইখানে দাঁড়িয়ে কোনও কথা বা চোখাচোখি নয়; পারলে দু-পাশে ফাঁকা খোপ রেখে জায়গা নির্বাচন; অহেতুক দেরি নয়; কোনও ইমোশন-টিমোশন তো একেবারেই নয়। আর যদি স্মুদলি সব কিছু চলে, সেই ঝরনাতলার নির্জনে, সার্কাসের বেঁটে জোকারের মতো পিছু ফিরে নিচু হয়ে কিছু ক্ষণ পর্যবেক্ষণ করতেই পারেন— একটি বুটের টোয়ের আগায় একটি শিশিরবিন্দু।
এক টাকা+এক টাকা= দু’টাকা
এখানে আর বসা-দাঁড়ানো লিঙ্গবৈষম্য নেই। নারী-পুরুষ সমান-সমান। বিল গেট্সও বসেই ডাউনলোড করেন। তবে, সার কথা বুঝিয়েছিলেন গোপাল ভাঁড়। ছোট কাজ না হলে বড় কাজ হয় না। তাই পার কাজ এক টাকা করে মোট দু’টাকা, চলতি রেট। অবশ্য ‘ছোট বাইরে’-র নামে ঢুকে আপনি স্বল্প আইসপাইস খেলে চলে যেতেই পারেন ‘বড়’ ভেতরে! কেউ টের না পেলেই হল।
খুচরো বাঁচানোর আরও পদ্ধতি আছে। ধরুন, আপনি ধর্মতলায়। বড় ডাক এসেছে। সুলভের দিকে হাঁটবেন, নাকি স্মার্টলি সাহেব-সুবোর মতো গটগট বেগে এন্ট্রি নেবেন ওবেরয়দের গ্র্যান্ডাকঘরে? আকাচা শার্টেও আপনি এ দিক-সে দিক তাকান, ঢুকে যান ওয়াশরুমে। দারোয়ান সেলাম ঠুকবে। কিংবা, বাংলায় ফিরে এসো বাবা। আপনি নন্দন চত্বরে, খুচরো অটুট রেখে ঢুকে পড়ুন বাংলা অকাদেমির এক তলায়। ঢুকে, এখনও, এই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতেও, একটু বামপন্থী হয়ে দু’পা এগোলেই মুক্তির সন্ধান। আপনি পাঠক না-হোন, ও-চত্বরে এতখানি ঘোরাঘুরি যখন, লেখক-কবি-সম্পাদক কিছু তো একটা হবেনই। অতএব, বাংলা ভাষায় করা আপনার অধিকার।
যদি ভাবেন নগদে পে করে ঢুকলেও অধিকার জন্মায়, ভুল ভাবছেন। ছুটন্ত আপনি অগ্রিম দু’টাকা দিয়ে পড়িমরি ঢুকেছেন। গুড লাক, কোথাও কিছু ভাসছে না। নড়বড়ে ছিটকিনিটা যদিও টালিগঞ্জের সেটের মতো, ধাক্কা দিলেই যাতে খুলে যায়, সে ভাবেই বানানো। তবু তাকে ম্যানেজ করে, ইজ্জত বাঁচিয়ে আপনি জাস্ট বসেছেন, একটা শান্তি আপনাকে ঘিরে ধরবে-ধরবে করছে...ও কী? সহসা শুনি রাতের কড়ানাড়া। ‘দাদা, আর কত ক্ষণ?’ বাইরে গোটা কলকাতার এক সঙ্গে পেয়েছে। দ্বার খোল, দ্বার খোল। অথবা, শৌচাগারের পাংচুয়াল কেয়ারটেকার আপনাকে চিল্লিয়ে জানান দিচ্ছেন, দু’টাকায় কেনা টাইম খতম। আপনি ইসবগুল নাকি সিঙ্গাপুরি, এই কোষ্ঠকঠিন পৃথিবীর তাতে থোড়াই কেয়ার। সে বিশ্বাসই করবে না, পাবলিক টয়লেট আসলে বিয়ের মতো। যারা এই বিবাহ নামক প্রতিষ্ঠানের বাইরে আছে, তারা চায় যেন-তেন ভেতরে ঢুকতে। সে বুঝবেই না, যারা ভেতরে আছে, তারাও মরিয়া বাইরে বেরোতে। যেন আপনি জয়রাম রমেশের দলে, শৌচাগারকেই মন্দির ভেবেছেন। উলটে সে সতর্কীকরণ লিখে রাখবে দেওয়ালে— নো লাউড ফিলোজফিকাল থিঙ্কিং।
বেগতিক= বেগ+ গতি
গতি যখন আছেই, তখন আর ‘বেগ’ মানে স্পিড নয়, ট্রাব্ল। হ্যাঁ, সেই সব পাবলিক টয়লেটের কথা বলছি, যখন আপনি গতিশীল, আর অনেক ক্ষণ ধরে বেগ পেয়ে, এ বার বেগতিক বুঝেছেন। তার পর যেতে যেতে যেতে... এবং এত ক্ষণ দূরপাল্লার বাসে খেতে খেতে খেতে... না, এমতাবস্থায় নদীর সঙ্গে দেখা হওয়ার কোনও সম্ভাবনা আপনার নেই, নদীর পাড়ে কাজ সারার প্রশ্নও নেই। বরং আপনার গন্তব্য বহরমপুর হলে কৃষ্ণনগর, দিঘা হলে মেচেদা— এতটা পথ পেরোলে তবে হল্ট বলা যাবে। বাস থামলেই গুঁতিয়ে নামুন, পড়িমরি ছুটুন। কৃষ্ণনগরে সরপুরিয়া কিংবা মেচেদায় শিঙাড়ার অর্ডার দিন, সঙ্গে বিনি পয়সায় হালকা হয়ে আসুন। ব্যবস্থা এমনই, আপলোড করলে, ডাউনলোড ফ্রি।
ব্যাপারটা ট্রেনে হলে অবশ্য অন্য রকম। লোকাল ট্রেনে জার্নি যদি লম্বাতর হয়, আপনার হাতে জাস্ট কোনও অপশন নেই। সরপুরিয়াও নেই, সিঙাড়াও নেই। প্যাকেটে বাদাম বা খোসা ছাড়ানো ডিমসেদ্ধর দিকেও আপনি আর লোলুপ নজরটি ফেলতে পারবেন না। কাপড়ে-চোপড়ে হওয়ার থেকে বাঁচতে কোনও মতে চুপচাপ বসে, ঠায় স্টেশন গুনতে লাগবেন ডিসেন্ডিং অর্ডারে (কঠিন ট্রিগোনোমেট্রি কষতে যাবেন না, অংক পরীক্ষার কথা মনে পড়ে উলটে উৎপত্তি হতে পারে)। এ যেন জীবনের দীর্ঘতম যাত্রা। গন্তব্য এলে, তার পর, কাণ্ড সারতে পারলে, সে এক অনির্বচনীয় অনুভূতি (কার্টসি: গোপাল ভাঁড়)! অবশ্য দূরপাল্লার ট্রেনে আপনার জন্য টোটাল অ্যারেঞ্জমেন্ট রয়েছে। ঝক্কাস! দরজায় ঘটাং-ঘট লক, চিকনাই স্টাইলের কমোড (নিচে ফুটো), ঝরঝরে ফ্ল্যাশ, গুটখাওলা বেসিন। এখন প্রশ্ন হল একটাই, অত জোরে দুললে কি আপনার হয়?
কিংবা, মোশন বাড়লে কি আপনার মোশন লুজ হয়ে আসে? তা হলেও চিত্তির। বিমানে উঠলে করবেন কী! ঘন ঘন যাওয়া তো বিসদৃশ ঠেকবে। আরে বাবা, মার্কিন মুলুকেই মাঝারি দরের বিমানে পঞ্চাশ জন প্রতি একটি করে মুক্তিস্থান থাকে। লম্বা পথে অত ইয়ে ওরা ফেলবেই বা কোন চুলোয়? ট্রেনের মতো সে তো আর বাতাসে ভাসিয়ে দেওয়া চলে না! অবশ্য চলত এক কালে। তিনের দশকে বিলিতি সুপারমেরিন স্ট্র্যানরের বায়ুযানটিতে ছিল এমনই এক মুক্ত শৌচাগার। উড়তে-উড়তে তার ঢাকনাটি যখন খুলে দেওয়া হত, জন্মদিনের বেলুন ফেটে চকচকে কাগজের মতো নিচে সব ছড়িয়ে পড়ত, বাতাসের ধাক্কায় শোনা যেত এক রকম শিসের আওয়াজ। সেই থেকে যানটির বদনামই হয়ে যায়— ‘হুইস্লিং শিটহাউস’। কিংবা জলপথও আপনার কিসমতে শুধু যাওয়া-আসা শুধু স্রোতে ভাসা হবে না। বাই চান্স আপনি যদি সাবমেরিনে সওয়ার হন, সে শৌচাগারটি ব্যবহার করতেই রীতিমত এক জন ইঞ্জিনিয়ারকে ডাক পাঠাতে হবে! এতই নাকি জটিল তার অপারেশন। একটু ভুলচুক হলেই আপনার বাহ্যটি আর বাহ্য থাকবে না, সটান এসে মাখামাখি হয়ে যাবে সাবমেরিনের গায়েই।
বিশ্ব শৌচাগার দিবস
সত্যি বলছি, বানাচ্ছি না, ১৯ নভেম্বর বিশ্ব শৌচাগার দিবস। যে জিনিসটি এমন প্রাণপণ সার্ভিস দিল, তাকে ওই দিন কিঞ্চিৎ স্বতন্ত্র ভাবে উদযাপন করতে পারি না আমরা? ধরুন, ‘বানান যখন ভাবায়’ শীর্ষক প্রদর্শনী। কারণ হরদম দেখা যায়, কোনওটার গায়ে লেখা— GENTS TO LET! কোনওটার আবার— LADIES TOY LET! বা ধরুন, আসছে টয়লেটে-টয়লেটে যদি উত্তর-আধুনিকদের ‘শক আর্ট’-এর প্রদর্শনী করা যায়। অনেকটা ২০০৮-এ নিউ ইয়র্কে যেমন করেছিলেন শিল্পী আন্দ্রে সেরানো। ‘শিট’ ফোটোগ্রাফ এক্সিবিশন। কিংবা ১৯৬১-তে মিলানের পিয়েরো মানজোনি-র কৌটো-ভরা ‘আর্টিস্ট’স শিট’। ‘থার্টি গ্রাম নেট, ফ্রেশলি প্রিজার্ভড’। দেদার বিকিয়েছিল শিল্পীর ক্রিয়েশন! আবার নিউজিল্যান্ডের জন কাজিন্স। ১৯৮৪-তে সুরে মাতালেন এডিনবরা ফেস্টিভ্যাল, টানা সাত ঘণ্টা ধরে জল খেলেন আর লাইভ মূত্র ত্যাগ করলেন সাতটি ড্রামের উপর। সা নি ধা পা মা গা রে। এমন বাণিজ্য আরও স্ট্রেটকাট করা যায়। ১৮৭০ পর্যন্ত বিলেতে যা চলেছে। লন্ডনের স্ট্রিটকর্নার থেকে পিপে-পিপে মূত্র তোলা হত জাহাজে। তারপর জাহাজ যেত হুইটবি। ভেতরে টলটল করছে ফটকিরি তৈরির অপরিহার্য কাঁচামাল।
শুধু অর্থকরী নয়, অর্থবোধকও। ১৯১৭-এ ফরাসি ডাডাইস্ট মার্সেল দুশাঁ-র আর্ট ওয়ার্ক ছিল ‘ফাউন্টেন’। স্রেফ একটা পোসের্লিন ইউরিনাল দাঁড় করিয়ে দিয়েছিলেন স্টুডিয়োতে। এখন দেখার, কতটা উচ্চতায় রেখেছিলেন সেই মূত্রাধার। ঢ্যাঙা আর গেঁড়ের তো একই বুল’স আই হতে পারে না! তা হলে কোন অ্যাপ্রক্সিমেশন তুলে ধরেছিল শিল্পীর চোখ? গার্নার আর গাওস্কর পাশাপাশি দাঁড়ালে কোথায় হবে গুড লেংথ? কোথাকার জল তখন কোথায় গড়াবে? এ সব বিতর্কিত সময়ে, আপনি, এত ক্ষণ চেপে রাখার পর বড়জোর পুরন্দর ভাটের কবিতার ডাকে সাড়া দেবেন...
চারদিকে ছনছন
সারা গায়ে ঘিনঘিন
থই থই ছপছপ
ইউরিন! ইউরিন! |
|
|
|
|
|