উৎসবে ব্রাত্য, অন্য রাসের দিন গুনছেন যৌনকর্মীরা
লকাতা পেরেছে। উত্তরবঙ্গও পেরেছে। কিন্তু পারল না নবদ্বীপ।
রাসকে কেন্দ্র করে চেনা মেজাজে মেতে উঠেছে শ্রীচৈতন্যের জন্মভূমি। দেশ বিদেশ থেকে আসা লক্ষাধিক মানুষের ভিড়ে জমজমাট বৈষ্ণবতীর্থ। অথচ নবদ্বীপ পুরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ডের তেলিপাড়া লেনে পা রাখতেই মনে হয়, উৎসবেরও যেন এখানে প্রবেশ নিষিদ্ধ! ঘুপচি ঘরগুলোর চৌকাঠে এসে থমকে গিয়েছে ব্যস্ত শহরের কোলাহল। আর সেই নিস্তব্ধতাই আরও বেশি করে জানান দিচ্ছে- ওঁরা ব্রাত্য। এবারেও।
তেলিপাড়া লেনে স্থায়ী যৌনকর্মীর সংখ্যা পঞ্চাশ জন। ওঁরা কেউ চল্লিশ বছর, কেউ ত্রিশ বছর কেউ বা কুড়ি বছর ধরে বাস করছেন এখানেই। রেশন কার্ড রয়েছে। রয়েছে ভোটের সচিত্র পরিচয়পত্রও। ওঁরা সমস্বরে জানাচ্ছেন, “এ পরিচয়পত্রে ভোটকেন্দ্রে যাওয়া যায়। কিন্তু পুজোমণ্ডপে যাওয়ার অনুমতি মেলে না।” যমুনা মণ্ডল যেমন বলছেন, “এ আর নতুন কী! প্রতিবার রাস পূর্ণিমার সকালে স্নান করে মণ্ডপে গিয়েছি। আর প্রতিবারই অপমানিত হয়ে ফিরে আসতে হয়েছে।” পাশ থেকে রীতিমত ফুঁসে ওঠেন গয়া দাস, “মণ্ডপ পর্যন্তই বা কবে যেতে দিল রে! তার আগেই তো গলির মেয়ে বলে দূর দূর করে তাড়িয়ে দিল ওরা।” তারপর থেকে ফি বছর রাস আসে। রাস যায়। অন্ধকারেই থাকে তেলিপাড়া লেন।
যৌনকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, রাসের সময় তাঁরা উৎসবে যোগ তো দিতেই পারেন না। এই সময়টাতে তাঁদের জন্য ওঁত পেতে থাকে নানা বিপদ। এখানে পঞ্চাশ জন যৌনকর্মী স্থায়ীভাবে থাকলেও রাসের সময় সংখ্যাটা প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যায়। সেই অনুপাতে বাড়ে লোকজনের যাতায়াতও। যাদের একটা বড় অংশ পুলিশের খাতায় ‘ওয়ান্টেড’। আর সেই চোর-পুলিশের খেলায় মাঝখানে পড়ে যান রূপা, রাধা, শিবানী, কাকলিরা। যৌনকর্মীদের স্থানীয় অভিভাবিকা ইন্দিরা সাহা বলেন, “বছর দুয়েক আগে সীতা বলে একটি মেয়েকে রাসের সময় মেরে মাথা ফাটিয়ে দিয়েছিল কয়েকজন সমাজবিরোধী। তারও বছর খানেক আগে দু’দল সমাজবিরোধীর গণ্ডগোলে রাসের রাতে বহু মেয়ে বেধড়ক মার খেয়েছিল। আসলে এ সময়ে পুলিশ উৎসব সামলাতে ব্যস্ত থাকে। আর সেই সুযোগে সমাজবিরোধীদের দৌরাত্ম্যও বেড়ে যায়।” এমন অবস্থা থেকে রেহাই পেতে স্থানীয় পুরপিতা মিহিরকান্তি পালকে সঙ্গে নিয়ে নবদ্বীপ থানায় দরবার করেছিলেন ওই যৌনকর্মীরা। পুলিশকর্তারা তাঁদের আশ্বস্ত করে বলেন, “এবার রাসে তেলিপাড়া লেনে যাতে কেউ গোলমাল না করে সে ব্যাপারে পুলিশ নজর রাখবে। তবে ওই তল্লাটে কোনও সমাজবিরোধী ঢুকলেই তা সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে ফোন করে জানাবেন ওই যৌনকর্মীরাই।” যৌনকর্মীরা জানাচ্ছেন, এতে বিপদ বাড়বে, বই কমবে না।
তেলিপাড়া লেনের প্রবীণ প্রজন্মের কাছে রাস আর কোনও অর্থ বহন করে না। সত্তর ছুঁইছুই যমুনা মণ্ডল, মধ্য পঞ্চাশের গয়া দাসের ক্ষোভ, “রাসের সময় কত মণ্ডপে গরিবদের জন্য শীতবস্ত্র, কম্বল বিতরণ করা হয়। আমাদের সেখানেও ঠাঁই নেই।” তাহলে এ রাস আপনাদের নয়? ওঁরা সমস্বরে বলে ওঠেন, “ না, এ রাস আমাদের নয়। আমরা আমাদের মতো করে এক নতুন রাস শুরু করব। যেখানে রাধা, কাকলি, রূপারা প্রতিমা পুজোর জোগাড় করবেন। আর শীতবস্ত্র, কম্বল ঢেকে দেবে গয়াদি, যমুনাদির শীতকে।” দশ নম্বর ওয়ার্ডের তেলিপাড়া লেন এখন সেই রাসের অপেক্ষায়। যেখানে কেউ ব্রাত্য থাকবেন না।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.