|
|
|
|
শর্ত: ভাল দাম্পত্য |
অসবর্ণ বিয়েতে টাকা, জানেন না পাত্রপাত্রীরা |
আনন্দ মণ্ডল • তমলুক |
তফসিলি জাতি-উপজাতির সঙ্গে বর্ণহিন্দুদের বৈবাহিক সম্পর্ক হলে ৩০ হাজার টাকা সরকারি সাহায্য মেলে। গত প্রায় পাঁচ বছর ধরে কেন্দ্র ও রাজ্যের অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ দফতর যৌথ ভাবে এই প্রকল্প চালাচ্ছে। কিন্তু প্রচারের অভাবে বহু দম্পতি আর্থিক সাহায্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ফলে, এই খাতে বরাদ্দ অর্থও খরচ হচ্ছে না।
সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, প্রাপ্তবয়স্ক ‘অসবর্ণ’ পাত্র-পাত্রী বিয়ের পরে এক বছর ‘ভাল ভাবে’ দাম্পত্য জীবন কাটালে তাঁরা ওই সাহায্যের জন্য জেলা অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ দফতরে আবেদন করতে পারবেন। সঙ্গে থাকতে হবে বিয়ের প্রমাণপত্র (রেজিস্ট্রি সার্টিফিকেট), বয়স ও জাতিগত শংসাপত্র এবং এক বছর ভাল ভাবে দাম্পত্য জীবন কাটানোর ঘোষণাপত্র। আবেদন জমা পড়ার পরে পরিদর্শক (ইনস্পেক্টর) তা খতিয়ে দেখে দফতরে রিপোর্ট দেবেন। সব ঠিকঠাক থাকলে, দফতর থেকেই রাজ্য সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হবে। তা অনুমোদন পেলেই মিলবে আর্থিক সাহায্য।
এ ব্যাপারে অসবর্ণ বিয়ে করা দম্পতিদের সচেতন করতে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদ অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ দফতরের সঙ্গে যৌথ ভাবে সচেতনতা শিবির করার পরিকল্পনা নিয়েছে। প্রতি ব্লকেই শিবির করার জন্য সম্প্রতি জেলা পরিষদের শিক্ষা-সংস্কৃতি সংক্রান্ত স্থায়ী সমিতির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে। জেলা পরিষদের শিক্ষা-সংস্কৃতি কর্মাধ্যক্ষ মামুদ হোসেন বলেন, “সামাজিক বৈষম্য দূর করার ক্ষেত্রে অসবর্ণ বিয়ের বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। বর্তমানে অসবর্ণ বিয়ে করা দম্পতিদের ৩০ হাজার টাকা আর্থিক সাহায্য দেওয়া হয়।”
১৯৯৫ সালের ‘প্রোটেকশন অফ সিভিল রেজিস্ট্রেশন’ আইন বলে ‘সামাজিক বৈষম্য’ দূর করার লক্ষ্যে বিবাহিত দম্পতিদের ওই আর্থিক সাহায্য করা হয়। ২০১২ পর্যন্ত ওই দম্পতিদের এককালীন ৫ হাজার টাকা সাহায্য দেওয়া হত। এ বছরে তা-ই ৩০ হাজার টাকা বেড়ে হয়েছে। দফতর সূত্রের খবর, ২০১২-১৩ আর্থিক বছর ও চলতি আর্থিক বছর মিলিয়ে এখনও জেলায় ৩৮৭ জন দম্পতি সাহায্যের জন্য আবেদন করেছেন। এর মধ্যে ১১৬ জন দম্পতি আর্থিক সাহায্য পেয়েছেন। বাকিদের আবেদন এখনও বিবেচনাধীন।
চলতি আর্থিক বছরে এই খাতে বরাদ্দ ৩৪ লক্ষ ৮০ হাজার টাকার মধ্যে ২৪ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। অভিযোগ, শুধু প্রচারের অভাবেই বাকি টাকা খরচ করা যায়নি। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক জানান, সামাজিক নানা প্রকল্প নিয়ে প্রচারের লক্ষ্যে ইতিমধ্যেই সরকারি ভাবে প্রতি ব্লকে মাসিক ২ হাজার টাকা পারিশ্রমিকে এক জন করে ঢাকি নিয়োগ করা রয়েছে। তাঁরা এই প্রকল্পটি নিয়েও প্রচার করবেন। অনেকের মতোই এই প্রকল্পের কথা জানতেন না প্রাথমিক শিক্ষিকা অসীমা দাস। প্রায় ১২ বছর আগে তাঁর সঙ্গে বিয়ে হয়েছে মহিষাদলের তপন মাইতির। তপনবাবু সাধারণ জাতিভুক্ত। অসীমাদেবীর কথায়, “ওই প্রকল্পের কথা জানা থাকলে আমরা আগেই আবেদন করতাম!”
জেলা অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ আধিকারিক গোপালচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বলেন, “অসবর্ণ বিয়ে করা দম্পতিদের আর্থিক সাহায্য দেওয়ার ক্ষেত্রে টাকার কোনও সমস্যা নেই।” তবে প্রচার নিয়ে অভিযোগ মানতে চাননি গোপালচন্দ্রবাবু। তিনি বলেন, “আমাদের দফতর থেকে প্রচার চালানো হয়। গোটা রাজ্যে আমাদের জেলা থেকেই সবচেয়ে বেশি আবেদনপত্র জমা পড়ে। তা সত্ত্বেও, জেলা পরিষদ উদ্যোগী হলে ভাল হবে।” |
|
|
|
|
|