উত্তরপাড়ায় প্রস্তাবিত ফিল্মসিটির জন্য যে জায়গা ইতিমধ্যে ঘেরা হয়েছে, সেখানে শীঘ্রই কাঠামো তৈরি করতে চায় কলকাতা পুরসভা। সে জন্য নিরাপত্তারক্ষীও নিয়োগ করা হবে। সেই সঙ্গে ওই জমিতে থাকা অধিকাংশ ইটভাটার মালিকেরা ক্ষতিপূরণের শর্তে জমি ছেড়ে দিতে রাজি হয়েও শেষমেশ বেঁকে বসায় তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করার সিদ্ধান্তও নিয়েছেন পুর-কর্তারা।
ওই প্রকল্প নিয়ে শনিবার কলকাতা পুরসভায় এক বৈঠক হয়। উপস্থিত ছিলেন পুর-কমিশনার খলিল আহমেদ, উত্তরপাড়া-কোতরঙের পুরপ্রধান এবং হুগলি জেলার ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের আধিকারিকেরা। ওই বৈঠকেই ফিল্মসিটিতে কাঠামো তৈরির সিদ্ধান্ত হয় এবং বেঁকে বসা ইটভাটা মালিকদের বিরুদ্ধে হুগলির অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি সংস্কার) আর আয়েষা আলিকে ‘খনি ও খনিজ আইন’ অনুসারে মামলা করতে নির্দেশ দেন পুর কমিশনার।
পুর কমিশনার বলেন, “যাঁরা জমি ছাড়তে রাজি হচ্ছেন না, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।” তাঁর সংযোজন, “রাজ্য সরকার উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেবে। কিন্তু কেউ অনৈতিক ভাবে জমি আটকালে তা মানা হবে না। যে অংশের জমি নিয়ে সমস্যা নেই, সংশ্লিষ্ট বিভাগ তাড়াতাড়িই সেখানে কাজ শুরু করবে।”
উত্তরপাড়ায় গঙ্গার ধারে প্রায় ৮০ একর জমিতে প্রস্তাবিত ওই প্রকল্পের শিলান্যাস হয় দু’বছর আগে। কিন্তু এখনও কাজ শুরু করা যায়নি। প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়ান ওই জমিতে থাকা ইটভাটা-মালিকেরা। দিন কয়েক আগে তাঁদের নিয়ে বৈঠক হয় কলকাতা পুরসভায়। তখন উত্তরপাড়া পুরসভার চেয়ারম্যান-ইন-কাউন্সিল তথা তৃণমূল নেতা দিলীপ যাদব জানিয়েছিলেন, ১৪ জন ভাটা-মালিকের মধ্যে ১১ জন ক্ষতিপুরণ পেলে সরে যাওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। বাকি তিন জনের দাবি ছিল, তাঁরা নিজের জমিতেই ভাটা করেছেন। তখনই ঠিক হয় ওই তিন দাবিদারকে জমির মালিকানার কাগজপত্র দেখাতে হবে। কিন্তু তাঁরা তা দেখাতে পারেননি বলে পুরসভার দাবি।
এর পরেই পরিস্থিতি আমূল বদলে যায়। সব ইটভাটা-মালিকের পক্ষ থেকে কলকাতা পুরসভা কর্তৃপক্ষকে আইনি চিঠি দিয়ে জানানো হয়, জমি তাঁরা ছাড়বেন না। দাবি করা হয়, ওই জমি তাঁদের। পুরো বিষয়টা নিয়ে নতুন করে জটিলতা তৈরি হয়। তার পরেই বৈঠকে ওই সিদ্ধান্ত। পুরসভার এক পদস্থ অফিসার জানান, যাঁরা প্রথম বৈঠকে ক্ষতিপূরণের শর্তে রাজি হয়েছিলেন, তাঁদের বলা হয়েছিল ভাটা থেকে নিজ নিজ আয়ের বাৎসরিক হিসেব জমা দিতে। কিন্তু তাঁরা চান, জমির আর্থিক মূল্য। যা পুরসভার পক্ষে দেওয়া আইন অনুযায়ী অসম্ভব।
পুরসভার আইন দফতরের এক আধিকারিক বলেন, “খনি ও খনিজ আইন বলে জেলার অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি রাজস্ব) বেআইনি দখলদারকে সরিয়েও দিতে পারেন। এমনকী, ইটভাটা ভেঙেও দিতে পারেন।”
পুরসভা সূত্রে জানানো হয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাধের এই প্রকল্পের যে অংশে দখলদারি নিয়ে সমস্যা নেই, সেই জায়গাতেই প্রথমে কাজ শুরু হবে। এ ব্যাপারে উত্তরপাড়া-কোতরং পুরসভাকে বিষয়টি দেখার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
|