ভূগর্ভস্থ জলস্তরের ওঠা-নামা জানা যাবে এসএমএসেও! ইচ্ছে করলে দিনে একাধিক বারও এই তথ্য নেওয়া যাবে ন্যূনতম খরচে।
খড়্গপুর আইআইটি-র বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, বিদেশে এই অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ইতিমধ্যেই প্রচলিত। এখনও এ দেশে জনপ্রিয় হয়নি। কেন্দ্রীয় সরকার বা রাজ্য সরকার যদি চায়, তা হলে এই প্রযুক্তি ব্যবহারে প্রয়োজনীয় সাহায্য করতে পারে আইআইটি। আইআইটি-র সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের গবেষক ধ্রুবজ্যোতি সেন বলেন, “এই প্রযুক্তি প্রয়োগে বিশেষ খরচ হবে না। কম খরচে, ইচ্ছে করলে প্রতি মিনিটেও জলের ওঠানামা জানা যাবে বাড়ি বা অফিসে বসে।”
বর্তমানে যে ভাবে প্রতিটি এলাকায় পানীয় জলের জন্য নলকূপ, সেচের জন্য গভীর নলকূপ বসানো হচ্ছে, তাতে জলস্তর দ্রুত নেমে যাচ্ছে। হঠাৎ করেই জলহীন হয়ে পড়ছে নলকূপগুলি! সঙ্কট দেখা দিচ্ছে পানীয় জলের। ক্ষতি হচ্ছে চাষের। বোরো ধান চাষের কারণে যে সব এলাকায় শ্যালো বা ডিপটিউবওয়েল চলে সেখানে এই সমস্যা বেশি। নিয়মিত জলস্তর ওঠানামার তথ্য প্রশাসনের কাছে না থাকায় এ ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ করা যায় না।
বর্তমানে জলস্তর মাপা হয় প্রায় মান্ধাতার আমলের পদ্ধতিতে। এর জন্য প্রতি ব্লকে ৩-৪টি করে কুয়ো খুঁড়ে রাখা রয়েছে। দড়িতে পাথরের টুকরো বেঁধে তা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। পাথর জল ছুঁলে হিসেব করা হয় জলস্তর কতটা উঠেছে বা নেমেছে। জল অনুসন্ধান দফতর জানাচ্ছে, বছরের চারটি সময়ে জলস্তর ওঠানামার হিসেব নেওয়া হয়। এপ্রিল, অগস্ট, নভেম্বর ও জানুয়ারি মাসে। যদিও অভিযোগ, অনেক ক্ষেত্রেই তথ্য নেওয়া হয় না। জলস্তর মাপা হলেও দফতরের পক্ষ থেকে তা অন্য দফতরকে জানানোর ক্ষেত্রে চলে টালবাহানা।
আইআইটি-র বিশেষজ্ঞদের মতে, নয়া পদ্ধতিতে অতি সহজেই মিলবে ওই তথ্য। এর জন্য প্রয়োজন মাইক্রো কন্ট্রোলার ও প্রেসার সেন্সর। মাইক্রো কন্ট্রোলার থাকবে উপরে। যার মধ্যে মোবাইলে ব্যবহার করার একটি সিম থাকবে। মাইক্রো কন্ট্রোলারের সঙ্গে তার দিয়ে জুড়ে স্টিলের কেসে রাখা প্রেসার সেন্সরকে মাটির গভীরে নামিয়ে দিতে হবে। কোথায়-কোথায় ও দিনের মধ্যে কোন-কোন সময়ে বা কত দিন অন্তর তথ্য পাঠাতে হবে তা মাইক্রো কন্ট্রোলারে ‘সেট’ করে দিলেই হল। চাপ অনুভব করে প্রেসার সেন্সর জলের ওঠানামা জানাবে মাইক্রো কন্ট্রোলারকে। মাইক্রো কন্ট্রোলার তা এসএমএসে জানিয়ে দেবে নির্দিষ্ট করে দেওয়া ঠিকানায়। অফিসে বা বাড়িতে, নিজের কম্পিউটারে ঠিক সময়ে মিলে যাবে তথ্য। দিনে ক’বার, কিংবা কত দিন অন্তর এসএমএস নেওয়া হচ্ছে সেই অনুযায়ী মাসে অল্প কিছু টাকা খরচ হবে। যন্ত্রটি পাম্প হাউসের জলে ইতিমধ্যেই পরীক্ষা করে দেখে নিয়েছেন ধ্রুবজ্যোতিবাবু। কলকাতার বালিগঞ্জ, ধাপা লক ও পামার বাজারের পাম্প হাউসগুলিতে পরীক্ষা চলছে। শীঘ্রই খড়্গপুর আইআইটি-র ভেতরে ভূগর্ভে জলের ওঠানামা পরীক্ষার জন্যও পদক্ষেপ শুরু হয়েছে।
ধ্রুবজ্যোতিবাবুর কথায়, “বাইরের সংস্থা থকে কিনলে এক-একটি ইউনিটের দাম পড়বে ৭৫ হাজার টাকা। মাটি খুঁড়ে তা ভূগর্ভে পাঠানোর খরচ আলাদা। কোনও সংস্থা নিজেরা কাজটা করলে খরচ অনেকটা কমে আসবে। ধ্রুব্যজোতিবাবু তাঁদের পরীক্ষায় চার ঘণ্টা অন্তর এসএমএস নিচ্ছেন। এসএমএস খাতে মাসে ২৫০ টাকা খরচ হচ্ছে বলে তিনি জানান।
পাথর ঝুলিয়ে হিসেব নেওয়া ও সেই হিসেব দফতের ফাইলে তোলা, অন্য দফতরকে তা জানানো মান্ধাতার আমলের এই প্রযুক্তি ও পদ্ধতি যে বেশি দিন চলতে পারে না, রাজ্য সরকারের কর্তারাই মানছেন সেটা। তাই স্বয়ংক্রিয় ভাবে ভূগর্ভস্থ জলের ওঠানামা জানতে ইতিমধ্যেই উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য সরকার। জল অনুসন্ধান দফতরের মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র বলেন, “স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে জলস্তরের ওঠানামা জানতে
আমরাও উদ্যোগী হয়েছি। এ বিষয়ে গবেষণার জন্য একটি পরীক্ষাগারও তৈরি করা হয়েছে। সেখানকার গবেষণায় ফল কী আসে আগে দেখি। যদি দেখা যায়, আইআইটি-র গবেষকেরা যেটা বলছেন, তাতে কম খরচ হবে, তখন নিশ্চয় এ ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা শুরু করব।” |