প্রায় এক মাস হল বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এইচআইভি রোগীদের অতি প্রয়োজনীয় ‘নেভিরাপিন’ ওষুধের সরবরাহ হচ্ছে না। জাতীয় এডস নিয়ন্ত্রণ সংস্থা (ন্যাকো) থেকে ওই ওষুধ আসার কথা। কিন্তু রাজ্যের স্বাস্থকর্তাদের অভিযোগ, ন্যাকোর কর্তারা হাত তুলে দিয়ে উল্টে তাঁদের বলছেন, “আপাতত কোনও ভাবে সামলে নিন।” অথচ রাজ্যের ওই ওষুধ কেনার অধিকার নেই, তার কাছে এর জন্য কোনও টাকাও বরাদ্দ হয় না। ফলে বর্ধমানের পাশাপাশি মুর্শিদাবাদ, মালদা, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া-র প্রায় ২০০ জন এইচআইভি রোগী বিপদে পড়েছেন। কারণ ওই ৫ রাজ্যের এইচআইভি আক্রান্তেরা ওষুধের জন্য এই কেন্দ্রের উপর নির্ভরশীল।
নেভিরাপিন ওষুধটি এক সঙ্গে অন্তত এক মাসের জন্য দিয়ে দেবার কথা। কিন্তু ওষুধের অভাবে তা দেওয়া হচ্ছে খুব বেশি হলে ৫-৭ দিনের জন্য। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের এআরটি কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক সুব্রতকুমার দত্তের কথায়,“ নেভিরাপিন ওষুধটি রোগীদের মাসের জন্য একেবারে দেওয়া দরকার। অন্যথায় তাঁদের দূরদূরান্ত থেকে বার বার বর্ধমানে আসতে হয়। এতে তাঁদের আর্থিক অবস্থার উপর চাপ পড়ে। শারীরিক ভাবেও তাঁরা পেরে ওঠেন না। কিন্তু ওই ওষুধ স্টকে না থাকায় বাধ্য হয়ে আমাদের পক্ষে রোগী পিছু পাঁচ-সাতদিনের বেশি দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।”
বর্ধমানের বিভিন্ন মহকুমার এইচআইভি বা এডস রোগীদের নিয়ে তৈরি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানের সম্পাদক পরিমল রায়ের দাবি, “এডস রোগীদের নিত্য ব্যবহার্য ওই নেভিরাপিন না-থাকায় চিকিৎসা ব্যাহত হচ্ছে। অথচ এই ওষুধটি নিয়মিত না খেলে এডস আক্রান্তদের শরীরে নানা সমস্যা দেখা দেয়। ওষুধের অভাবে অনেক এইচআইভি বা এডস আক্রান্তেরা নানা শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন। তাঁদের শরীরের রক্ত শুকিয়ে যাচ্ছে।”
ওষুধ নিয়ে ন্যাকোর টালবাহানায় রাজ্য এডস নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংস্থা (স্যাক্স)-র প্রকল্প অধিকর্তা উৎপল ভট্টাচার্য তিতিবিরক্ত। তাঁর কথায়, “কখনও ওষুধ, কখনও রক্তের ব্যাগ বা কিট নিয়ে ন্যাকো আমাদের বিপদে ফেলছে। হঠাৎ কিছু না-জানিয়ে সরবরাহ বন্ধ করে দিচ্ছে। রক্তের ব্যাগ বা কিট আমরা প্রয়োজনে নিজেরা কিনতে পারি। কিন্তু এইচআইভি-র ওষুধ কিনতে পারি না। এই ভাবে কখনও চলে?”
বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকেরা অবশ্য জানিয়েছেন, নেভিরাপিনের অভাবে রোগীদের ‘এসএলএন’ (স্ট্যাবুডিন, ল্যামিবুডিন ও নেভিরাপিনের মিশ্রণ) ওষুধ দিতে তাঁরা বাধ্য হচ্ছেন। কিন্তু এই ওষুধ অতি বিশেষ অবস্থা ছাড়া ব্যবহার করার কথাই নয়। যদি সাধারণ এইচআইভি-র ওষুধে কোনও রোগীর প্রতিক্রিয়া হয় তখন এসএলএন ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছে ন্যাকো। এটি যখন-তখন খরচ করার কথা নয়, যতটা পারা যায় সঞ্চয় করার কথা। কিন্তু নেভিরাপিনের অভাবে সেই ওষুধও প্রচুর হারে রোগীদের দিয়ে দিতে হচ্ছে। |