স্বাস্থ্য দফতরের নতুন প্রকল্প ‘স্বাস্থ্যবন্ধু’তে ফোন করার দু’টি অভিজ্ঞতা। অভিজ্ঞতা ১: বৃহস্পতিবার বিকেল ৫.১৫। হেল্পলাইন নম্বরে ফোন করে পিজির বার্ন ইউনিটে শয্যা খালি আছে কি না, জানতে চাওয়া হয়েছিল। ১০ মিনিট পরে সংশ্লিষ্ট কর্মী বার্ন ইউনিটের মোট শয্যার সংখ্যা জানালেন। জানার ছিল, শয্যা খালি আছে কি না। কিছু পরে ফের ফোন করতে বললেন ওই কর্মী। ১০ মিনিট পরে ফোন করেও উত্তর মেলেনি। বরং রোগী নিয়ে সোজা ইমার্জেন্সিতে যেতে পরামর্শ দেন ওই কর্মী। কিন্তু শয্যা খালি না থাকলে তো ইমার্জেন্সি থেকে রোগী নিয়ে ঘুরতে হবে? ‘স্বাস্থ্যবন্ধু’র কর্মী নিরুত্তর।
অভিজ্ঞতা ২: এ নেগেটিভ গ্রুপের দুই ইউনিট রক্ত কোন ব্লাড ব্যাঙ্কে পাওয়া যাবে জানতে চাওয়া হয়েছিল বিকেল সাড়ে পাঁচটায়। প্রথম বারে ১০-১৫ মিনিট পরে ফোন করতে বলা হয়। তখন সংশ্লিষ্ট কর্মী জানান, ব্লাড ডোনেশনের কার্ড থাকলে যে কোনও ব্লাড ব্যাঙ্কেই মিলবে। কিন্তু বিরল গ্রুপের রক্ত তো যে কোনও ব্যাঙ্কে সব সময়ে মজুত থাকে না! এ ক্ষেত্রেও নিরুত্তর সংশ্লিষ্ট কর্মী।
এই দুই অভিজ্ঞতাই বুঝিয়ে দেয়, বহু ঢাকঢোল পিটিয়ে শুরু হওয়া প্রকল্পটি কী অবস্থায়। সরকারি হাসপাতালে শয্যার জন্য এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ঘোরার হয়রানি, কোথায় রক্ত মিলবে সেই তথ্যের অভাব এবং সেই কারণে রোগীমৃত্যু ঠেকাতে ‘স্বাস্থ্যবন্ধু’ নামে ২৪ ঘণ্টার এই হেল্পলাইন চালু করেছে স্বাস্থ্য দফতর। ওই নম্বরে ফোন করলে রাজ্যের কোন হাসপাতালে কত শয্যা খালি, কোন চিকিৎসকের কোথায় কবে আউটডোর, কোন ব্যাঙ্কে কোন গ্রুপের কত রক্ত মজুত তার তথ্য মিলবে। মঙ্গলবার ইলামবাজারে এর উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু গোড়া থেকেই হোঁচট খাচ্ছে প্রকল্প।
স্বাস্থ্যকর্তাদের একাংশের অভিযোগ, যে সংস্থা দায়িত্বে, ব্যর্থতা তাদেরই। তারাই কর্মীদের যথাযথ প্রশিক্ষণ দেয়নি। সংশ্লিষ্ট বিপিও সার্ভিসেস-এর সহকারী ম্যানেজার প্রদীপ সাহার সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। সংস্থার এক কর্তা মানছেন, “আমাদের প্রশিক্ষণে গাফিলতি রয়েছে। অধিকাংশ প্রশ্নেরই জবাব দেওয়া যাচ্ছে না। কী ভাবে এমন বিষয় নিয়ে কাজ হয়, কর্মীদের অধিকাংশেরই ধারণা নেই। আমাদের আরও সময় দরকার।”
সমস্যাটা উপলব্ধি করেই স্বাস্থ্যকর্তারা ওই কর্মীদের পাশাপাশি কয়েকটি হাসপাতালের সহকারী সুপারদেরও প্রথম এক মাস বিভিন্ন শিফ্টে প্রকল্পে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন। তা ঘিরেও তৈরি হয়েছে বিতর্ক। সহকারী সুপারদের একাংশ বাড়তি ভাতা দাবি করেছেন। যদিও দফতর অনড়। বিশেষ সচিব দিব্যেন মুখোপাধ্যায় লিখিত নির্দেশ জারি করেছেন, তালিকায় যে সব সহকারী সুপারের নাম আছে, তাঁদের ওই কাজ করতেই হবে। ওই নির্দিষ্ট সময়ে কোনও ছুটির আবেদন গ্রাহ্য হবে না। বাড়তি ভাতা দেওয়ারও প্রশ্ন নেই।
পাশাপাশি স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা স্বীকার করেছেন, বিভিন্ন হাসপাতালের ‘ডেটাবেস’-এর হাল খুব খারাপ। কবে কোন চিকিৎসকের আউটডোর, সেই তথ্যও বহু ক্ষেত্রে মজুত থাকে না। যে চিকিৎসক বহু দিন চলে গিয়েছেন, তাঁর নামও জ্বলজ্বল করছে তালিকায়। প্রাথমিক এই তথ্যটুকুই যেখানে ঠিকঠাক সরবরাহের পরিকাঠামো নেই, সেখানে কোন হাসপাতালে শয্যা খালি, তা জানানো যাবে কী করে?
স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, “সবে তো প্রকল্প শুরু হল। প্রচুর ফোন আসছে। কর্মীরা সাধ্যমতো সাহায্য করছেন। আর একটু সময় দিন। তার মধ্যেই সব কিছু গুছিয়ে নেওয়া যাবে।” |