চাকরির বাজারে হাহাকার। অথচ রাজ্যে তফসিলি জাতি ও উপজাতিদের জন্য সংরক্ষিত বহু পদ খালি পড়ে আছে। এই অবস্থায় রাজ্য সরকারি অফিসগুলিতে সংরক্ষিত শূন্য পদ পূরণে শুধু তফসিলি প্রার্থীদের জন্য ‘বিশেষ’ নিয়োগ প্রক্রিয়া চালু করার কথা ভাবছে সরকার।
অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতর সূত্রের খবর, তফসিলি জাতি ও উপজাতিদের জন্য সংরক্ষিত পদ বিশেষ প্রক্রিয়ায় পূরণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই। সেই ‘বিশেষ’ প্রক্রিয়াটি কেমন হবে, তার উত্তর মিলছে না। তবে মুখ্যমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের সূত্র ধরেই ওই সব পদ পূরণের জন্য অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতরের সচিব সঞ্জয়কুমার ঠাড়ে সব দফতরের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন। সেই চিঠিতে দফতরগুলিকে তাদের সচিবালয় থেকে শুরু করে নিজেদের নিয়ন্ত্রিত সব কার্যালয়, আঞ্চলিক অফিস, সরকারি সংস্থা এবং কর্পোরেশনে তফসিলি জাতি ও উপজাতিদের জন্য সংরক্ষিত কত পদ খালি আছে, তার সবিস্তার হিসেব পাঠাতে বলা হয়েছে।
সংরক্ষিত পদ তফসিলি জাতি ও উপজাতি প্রার্থীদের দিয়েই পূরণ করার দাবি দীর্ঘদিনের। বাম জমানাতেও বারবার এ দাবি উঠেছিল। তৎপর হতে বলা হয়েছিল সব দফতরকেই। কিন্তু বিভিন্ন দফতরে বহু সংরক্ষিত পদ শূন্যই থেকে গিয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, বেকারত্বের বাজারে তফসিলি জাতি ও উপজাতিদের জন্য সংরক্ষিত অজস্র পদ শূন্য ফেলে রাখা হয়েছে কেন? তা হলে কি চাকরির পরীক্ষায় সব পদ পূরণ হচ্ছে না? প্রার্থীর অভাবই যদি ওই সব পূরণ না-হওয়ার কারণ হয়, এখন বিশেষ প্রক্রিয়ায় সেগুলো কী ভাবে পূরণ করা যাবে, উঠছে সেই প্রশ্নও। সরকারি পদে নিয়োগের জন্য পিএসসি এবং নবগঠিত স্টাফ সিলেকশন কমিশন রয়েছে। সাধারণ নিয়োগ পরীক্ষার পাশাপাশি বিশেষ প্রক্রিয়ায় নিয়োগের পরীক্ষা তারা কী ভাবে নেবে, সেটাও বড় প্রশ্ন।
সরকারি মুখপাত্র এই সব প্রশ্নের সরাসরি উত্তর এড়িয়ে গিয়েছেন। তিনি জানান, শূন্য পদের তালিকা মুখ্যসচিবের কাছে জমা পড়বে। তার পরে সেটি মন্ত্রিসভায় পেশ করা হবে। মন্ত্রিসভার সম্মতি মিললে বিভিন্ন স্তরের সংরক্ষিত শূন্য পদ পূরণের জন্য বিশেষ নিয়োগ প্রক্রিয়া চালু করতে বলা হবে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন নিয়োগ কর্তৃপক্ষকে।
কত পদ খালি আছে?
বিধি অনুসারে রাজ্য সরকারের সব দফতরে যত পদ রয়েছে, তার মধ্যে তফসিলি জাতি এবং উপজাতিদের জন্য সংরক্ষিত পদের হার যথাক্রমে ২২ এবং ছয় শতাংশ। অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতরের সর্বশেষ পরিসংখ্যান বলছে, এই মুহূর্তে তফসিলি জাতিদের জন্য সংরক্ষিত পদের চার শতাংশ এবং তফসিলি উপজাতিদের জন্য সংরক্ষিত পদের দুই শতাংশ ফাঁকা পড়ে রয়েছে।
এর আগেও অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতর অনেক বার বিভিন্ন দফতরকে শূন্য পদের তালিকা পাঠাতে বলেছিল। কিন্তু ওই দফতর জানায়, অধিকাংশ দফতরই সেই কাজ সেরেছে অত্যন্ত দায়সারা ভাবে। বহু দফতরই শুধু তাদের মূল অফিসে খালি থাকা সংরক্ষিত পদের হিসেব দিয়েই কাজ সেরেছে। অনেক ক্ষেত্রে সদর দফতর একটা তালিকা দিলেও তাদের জেলা বা মহকুমা অফিস গা করেনি। কিন্তু মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্র এ বার এই বিষয়ে কঠোর মনোভাব নিয়েছেন। তাঁর পরামর্শেই বিষয়টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে সব দফতরকে তাদের শূন্য সংরক্ষিত পদের সবিস্তার তালিকা অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতরে পাঠাতে বলা হয়েছে। |