সামনে কঠিন লোকসভা ভোট। সেই নির্বাচনকে ঘিরে কংগ্রেস সম্পর্কে অবস্থান কী হওয়া উচিত, সেই প্রশ্নে দলে বিতর্ক আছে। প্রার্থী ঠিক করার মাপকাঠি নিয়েও মাথাচাড়া দিচ্ছে ভিন্ন মত। এমন পরিস্থিতিতে আলিমুদ্দিনের মন বুঝতে আলোচনায় বসতে চাইছেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাট। ডিসেম্বরে আসন্ন কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকের আগেই আলিমুদ্দিনে এ রাজ্য থেকে পলিটব্যুরোর চার সদস্যের মুখোমুখি হতে চান সাধারণ সম্পাদক। পলিটব্যুরো ও কেন্দ্রীয় কমিটির আনুষ্ঠানিক বৈঠকের আগে কারাটের এই আগাম দৌত্য ঘিরে যথেষ্ট কৌতূহল তৈরি হয়েছে সিপিএমের অন্দরে। লোকসভা ভোটে প্রার্থী বাছাইয়ের রূপরেখা ঠিক করতে এবং সার্বিক ভাবে রণকৌশল ঝালিয়ে নিতে এ বার আগরতলায় ১৩ ডিসেম্বর বসছে সিপিএমের পলিটব্যুরো। পরের দু’দিন কেন্দ্রীয় কমিটি। শারীরিক কারণেই সেই বৈঠকে উপস্থিত থাকার কথা নয় রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের। মূলত বুদ্ধবাবুর নেতৃত্বেই বঙ্গ সিপিএম ভোট-পরবর্তী পরিস্থিতিতে কংগ্রেসের জন্য দরজা বন্ধ করে চলার পক্ষপাতী নয়। আলিমুদ্দিনের যুক্তি, সাম্প্রদায়িকতাই এখন বড় বিপদ। নরেন্দ্র মোদীকে ঠেকানোর জন্য সম্ভাব্য সব ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিকে একজোট করার প্রবক্তা বুদ্ধবাবুরা। বঙ্গ ব্রিগেডের চাপের মুখে পড়ে কারাটও এখন কংগ্রেস-প্রশ্নে কট্টরতম অবস্থান কিছুটা নমনীয় করেছেন। তবুও কেন্দ্রীয় কমিটিতে বাংলা থেকে বড় রকমের ঝড়-ঝাপ্টার মুখে যাতে পড়তে না হয়, সেই লক্ষ্যেই বুদ্ধবাবুদের সঙ্গে তাঁর আগাম আলোচনার আগ্রহ বলে দলের একটি সূত্রের ব্যাখ্যা।
এ কে জি ভবন থেকে আলিমুদ্দিনে যা বার্তা এসেছে, সেই অনুযায়ী ২ ডিসেম্বর বিনা হইচইয়ে বাংলার শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে ঘরোয়া আলোচনা সেরে নিতে পারেন কারাট। ঠিক তার আগের দু’দিন আলিমুদ্দিনে রয়েছে দলের সাংগঠনিক বিষয়ে রাজ্য কমিটির বৈঠক। ওই সপ্তাহেই কলকাতা জেলা কমিটির ডাকে শহিদ মিনার ময়দানে জনসভা করতে আসার কথা তাঁর। আমন্ত্রণ রয়েছে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সিপিএম থেকেও। প্রকাশ্য এই সব কর্মসূচির মধ্যেই আলিমুদ্দিনের মনোভাব যাচাই করা জরুরি হয়ে উঠেছে কারাটের কাছে। দলের পলিটব্যুরোর এক সদস্যের কথায়, “সাধারণ সম্পাদক চাইলে যে কোনও সময়েই যে কোনও রাজ্যের নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনায় বসতে পারেন। কী আলোচনা করবেন, সেটাও তাঁর ব্যাপার!” তবে কেন্দ্রীয় কমিটির গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের আগে বাংলার মন বোঝার চেষ্টা যে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ, অস্বীকার করছেন না সিপিএম নেতৃত্ব।
পরপর লোকসভা ভোটে ধাক্কা এবং বিধানসভা ভোটে এ রাজ্যে বামেদের ভরাডুবির পরে আলিমুদ্দিনকেই দায়ী করেছিলেন কারাট। তার পর থেকে কলকাতায় ছাড়া পলিটব্যুরো বা কেন্দ্রীয় কমিটির কোনও বৈঠকে যাননি বুদ্ধবাবু। আনুষ্ঠানিক কারণ অবশ্য শারীরিক। দলেরই একটি সূত্রের ব্যাখ্যা, বিরাট অঘটন না-ঘটলে আগামী পার্টি কংগ্রেসে আর সাধারণ সম্পাদক হবেন না কারাট। সম্মেলন-প্রক্রিয়া শুরু
হবে ২০১৪ সাল থেকেই। কারাট চান, আগামী পার্টি কংগ্রেসে তাঁরই
পছন্দের কেউ (দৌড়ে এগিয়ে এস আর পিল্লাই) দলের কাণ্ডারী হোন। তার আগে নিজেই উদ্যোগী হয়ে বঙ্গ ব্রিগেডের সঙ্গে যেটুকু দূরত্ব এখনও আছে, সেটাও মিটিয়ে নিতে চান সাধারণ সম্পাদক।
দলের মধ্যেই একাংশ আবার এ-ও বলছেন, এ বার লোকসভা ভোটে অ-কংগ্রেস, অ-বিজেপি শক্তির পালে হাওয়া থাকলে বামেরা যদি কোনও ভাবে অপ্রত্যাশিত ফল করে দেখায়, তা হলে সাফল্যের কৃতিত্ব হিসাবে কারাটকেই আর এক দফায় শীর্ষ পদে রেখে দেওয়ার দাবি উঠতে পারে! কেন্দ্রীয় কমিটির দুই-তৃতীয়াংশের সমর্থন নিয়ে বিশেষ পরিস্থিতিতেই একমাত্র সেটা হতে পারে। সেই সব অঙ্ক বিবেচনায় রেখেও লোকসভা ভোটের রণকৌশলে বাংলাকে পাশে পেতে চাইছেন সাধারণ সম্পাদক। |