ছাত্রভোটের দিন ঠিক করতে পুলিশ-প্রশাসনকে চিঠি
ক্ষিণ ২৪ পরগনা ও হুগলির অধীন কলেজগুলিতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন কবে করা যায়, জেলাশাসক এবং পুলিশ সুপারদের কাছে জানতে চাইল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। বৃহস্পতিবার ওই চিঠি পাঠানো হয়েছে। কলকাতা ও হাওড়ার কর্তৃপক্ষের কাছেও শীঘ্রই চিঠি পাঠানো হবে বলে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে।
এ বছর ফেব্রুয়ারি মাসে খিদিরপুরের হরিমোহন ঘোষ কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে গুলিতে প্রাণ যায় এক পুলিশ কর্মীর। তার পরে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্বাচন কিছু দিন স্থগিত রেখেছিল রাজ্য প্রশাসন। পুজোর আগে নতুন নির্দেশিকা জারি হয়েছে। সেখানে আগামী বছর ৩১ জানুয়ারির মধ্যে রাজ্যের সব কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন সেরে ফেলতে বলা হয়েছে। নির্বাচনের কাজে পুলিশ ও প্রশাসনকে যুক্ত করার কথা বলা হয়েছে সেই নির্দেশিকাতেই। সেই মোতাবেকই পদক্ষেপ করেছে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়।
শিক্ষা জগতের অনেকেরই অবশ্য আশঙ্কা, ছাত্র সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে হিংসা-হানাহানি এ ভাবে বন্ধ করা যাবে না। ছাত্র সংসদে দলীয় রাজনীতির অনুপ্রবেশ রুখে অরাজনৈতিক ছাত্র সংসদ গড়ার পক্ষে মত দিয়েছিলেন তাঁরা। প্রেসিডেন্সি কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ অমল মুখোপাধ্যায় যেমন বলছেন, ছাত্র সংসদ নির্বাচনকে দলীয় রাজনীতির প্রভাব থেকে দূরে রাখাটা জরুরি। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য, রাজ্যপাল এম কে নারায়ণের বক্তব্যও তাই। একাধিক বার তিনি আগেও বলেছেন, শুক্রবারও আবার বললেন, তিনি অরাজনৈতিক ছাত্র সংসদের পক্ষে। যদিও রাজ্য সরকার এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলি মনে করে, অরাজনৈতিক ছাত্র সংসদ আসলে সোনার পাথরবাটি।
অরাজনৈতিক ছাত্র সংসদের নজির অবশ্য রাজ্যের বেশ কিছু অগ্রণী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রয়েছে। সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ এবং রামকৃষ্ণ মিশন পরিচালিত কলেজগুলির ছাত্র সংসদ দলীয় রাজনীতির প্রভাবমুক্ত।
এক সময় শিবপুরের বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড সায়েন্স ইউনিভার্সিটি (বেসু)-তে ছাত্র নির্বাচনকে ঘিরে হিংসা ছিল নৈমিত্তিক ব্যাপার। কিন্তু সেখানেও পড়ুয়াদের সক্রিয় সহযোগিতায় সাবেক ধাঁচের ছাত্র সংসদ নির্বাচন এড়ানো গিয়েছে। তার জেরে ছাত্র সংঘর্ষও এড়ানো সম্ভব হয়েছে। বেসু-র সমাবর্তনে গিয়ে কর্তৃপক্ষের এই উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন রাজ্যপাল।
এ দিনও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সল্টলেক ক্যাম্পাসে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানের পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে নারায়ণন বলেন, “আমি আগেও বলেছি, আবার বলছি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র রাজনীতির উপরে বাইরের রাজনীতির প্রভাব থাকা ঠিক নয়। আমি অরাজনৈতিক ছাত্র সংসদ নির্বাচনের পক্ষে।”
কী ভাবে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করা যায়, তা নিয়ে প্রয়োজনে উপাচার্যদের পরামর্শ দেবেন বলেও তিনি জানান। রাজ্যপালের এই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে অবশ্য কোনও প্রতিক্রিয়া জানাতে চাননি রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু।
রাজ্যের রাজনৈতিক দলগুলি যদিও স্পষ্টতই রাজ্যপালের সঙ্গে সহমত নয়। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়ের প্রতিক্রিয়া, “এটা রাজ্যপালের ব্যক্তিগত মত। বিতর্কিত বিষয়। এ নিয়ে কিছু বলব না।”
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেন, “শিক্ষাঙ্গনে রাজনীতি থাকলেই ছাত্র সংসদ কলুষিত হয়, এটা ঠিক নয়। বহিরাগত এবং পাড়ার নেতাদের মদতে দুষ্কৃতীরা ছাত্র সংসদ কব্জা করলেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ নষ্ট হয়।”
সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মহম্মদ সেলিমের বক্তব্য, “বন্ধ করা দরকার সংঘর্ষ। কিন্তু এঁরা তো রাজনীতিটাকেই বন্ধ করার কথা বলছেন! ১৮ বছরের পরে ভোট দেওয়া যাবে, অথচ ছাত্রজীবনে রাজনীতির পাঠ নেওয়া যাবে না, তা কেন?”
হানাহানি এড়াতে রাজ্য সরকারের নির্দেশিকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় এবং তার অধীন সব কলেজে একই দিনে নির্বাচন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পুলিশ-প্রশাসনকেও ছাত্র নির্বাচনের ব্যাপারে সক্রিয় ভূমিকা নিতে বলা হয়েছে। কিন্তু তাতেই রেষারেষি এড়ানো যাবে কি? দক্ষিণ কলকাতার একটি কলেজের অধ্যক্ষের কথায়, “ছাত্র সংসদ নির্বাচন স্থগিত থাকায় বেশ কিছু দিন নিশ্চিন্তে ছিলাম। এখন ফের অশান্তির দিন ফিরে আসার আশঙ্কা!”

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.